‘আলাদিনের চেরাগ’ দেশের কতজনের হাতে?
প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে: জিএফআই
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ৩ অক্টোবর মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- পোশাক খাতে কত দিন ৮,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি, জানতে চান রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা -প্রথম আলো
- ভিসানীতি নিয়ে ভাবছে না র্যাব -ইত্তেফাক
- নির্বাচনি অনিশ্চয়তায় ঝুঁকি জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসার আভাস -যুগান্তর
- এবার দুদকের মামলায় ড. ইউনূসকে তলব -মানবজমিন
কোলকাতার শিরোনাম:
- কানাডাকে বার্তা নয়াদিল্লিরভারত থেকে প্রায় ৪০ জন কূটনীতিককে সরাতে হবে--আনন্দবাজার পত্রিকা
- বিপক্ষের মাঠেই কর্মসূচি, দেশের নজরে তৃণমূল-সংবাদ প্রতিদিন
- চীনা বিনিয়োগের অভিযোগ, নিউজক্লিকের একাধিক সাংবাদিকের বাড়িতে তল্লাশি চালাল দিল্লি পুলিশ -আজকাল
- সংবাদমাধ্যমের ওপর ফের আক্রমণ মোদী সরকারের -গণশক্তি
শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত
‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে’-যুগান্তরের এ শিরোনারেম খবরে লেখা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে আর কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন খালেদা জিয়ার জন্য তাই করেছেন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।
‘আলাদিনের চেরাগ’ দেশের কতজনের হাতে?-প্রথম আলোর এ শিরোনামের মতামত কলামে দৈনিকটির জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হাসান ইমাম লিখেছেন, দেশের ‘উন্নয়নের’ সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর যে কয়টি বিষয় ধাই ধাই করে এগিয়ে চলছে, তার একটি ‘অর্থ পাচার’ হলে অপরটি ‘খেলাপি ঋণ’। এর কোনটি প্রথমে, কোনটির অবস্থান দ্বিতীয়, সেটি নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু ‘আলাদিনের চেরাগ’ যে একশ্রেণির মানুষের জীবন আলোকিত করেছে এবং করছে, তা নিয়ে দ্বিমত করার বিশেষ কিছু নেই। আরেকবার খাসদিলে মারহাবা বলার সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না; বলুন—মারহাবা!
দেশে দেশে কত বেগমপাড়া, করস্বর্গ বা বিনিয়োগের অভয়ারণ্যে বাংলাদেশিরা স্বমহিমায় জায়গা করে নিয়েছেন, ‘সেকেন্ড হোম’ বানিয়ে আয়েশি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করেছেন, তার সর্বশেষ স্পষ্ট আলামত পাওয়া যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধির উল্লম্ফনে।
দুবাই চেম্বার অব কমার্সের হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধেই (জানুয়ারি থেকে জুন মাস) বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যপদ নেওয়ার হার বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। এই ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি সদস্যপদ নিয়েছে দুবাই চেম্বারের। এতে দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। অর্থাৎ এ বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থ অন্যের সিন্দুকে গেছে। সিন্দুকটি দেশে, না বিদেশে—সে প্রশ্ন নাহয় ঊহ্যই থাক!
না বললেও যে কথা বিলকুল বোঝা যায়, তা হলো বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিনিয়োগের অনুমতি নিয়ে কেউ এসব ব্যবসা-বাণিজ্য করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত মাত্র ১৭ প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদন নিয়ে বিদেশে কার্যালয় কিংবা ছোট আকারের কারখানা গড়ে তুলছে। অর্থাৎ এক দুবাইয়েই রয়েছে অনুমোদিত সংখ্যার প্রায় ৬৫০ গুণ বেশি কোম্পানি।
কোথাও কোনো হেলদোল কি চোখে পড়ে, কোনো হইচই কানে আসে? তাই বলে যে ‘কঠোর’ কিছু ব্যবস্থার কথা একেবারে জানা যায় না, তা অবশ্য নয়। এই তো ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর মানে সরকারের মাথায় বিষয়টি আছে।
তবে দেখা যাচ্ছে, ওই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে কেউ এক টাকাও দেশে ফেরত আনেননি। শর্ত ছিল, ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা টাকা আনলে টাকাওয়ালাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। সরকারের এই পদক্ষেপ ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’ বাগধারাই মনে করিয়ে দেয়। পাচার ঠেকানোর ‘উদ্যোগ’ নেই, অন্যায়ভাবে আয়ের ক্ষেত্র ‘বিস্তৃত’, আইনে প্রয়োগ ‘নামকাওয়াস্তে’; এরপর পগার পার হওয়ার বলব, ‘বাবাজি, ফিরে এসো’! কেউ আসবে?
আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নৈতিকভাবেই–বা কতটা সমর্থনযোগ্য? রাজনৈতিকভাবেও কি অগ্রহণযোগ্য নয়? এর মাধ্যমে নিয়মিত করদাতাদের প্রতি কতটা অন্যায় করা হয়েছে, সে বিষয় নাহয় আলোচনার বাইরেই থাক। সুতরাং কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অন্যায় হবে? সরকারের পুরো ব্যবস্থা ঠিকঠাক সক্রিয় থাকলে আজ পর্যন্ত একজন পাচারকারীরও শাস্তির কথা কেন জানা গেল না?
তবে যা অজানা থাকছে না, তা হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে; এই হিসাব ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই)। আর ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা গচ্ছিত ছিল (সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। অর্থাৎ এ বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থ অন্যের সিন্দুকে গেছে। সিন্দুকটি দেশে, না বিদেশে—সে প্রশ্ন নাহয় ঊহ্যই থাক!
আপনাকে অঙ্কে কাঁচা বলা যাবে না, বরং আপনার বেঁচে থাকাটাই অঙ্কনির্ভর। প্রতিদিনই আয়-ব্যয়ের হিসাব কষতে হয়। তবু জীবনব্যাপী কিছু হিসাব আপনি মেলাতে পারবেন না। যেমন বাংলাদেশটা ধনী নয়, অথচ এটি সবচেয়ে বেশি ধনী তৈরির দেশ। কীভাবে? বোঝা গেল?
না বুঝতে পারলে ধরে নিন এটাও আরব্য রজনীর কোনো গল্প, যেমনটা ‘আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ’।
পোশাক খাতে কত দিন ৮,০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি, জানতে চান রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা-প্রথম আলো
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা। তাঁরা বলেছেন, আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি মোটেও ভালো মজুরি নয়। আর কত দিন এ মজুরি থাকবে, বর্তমানে সেটাই জরুরি প্রশ্ন।
এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত
কানাডাকে বার্তা নয়াদিল্লির-ভারত থেকে প্রায় ৪০ জন কূটনীতিককে সরাতে হবে, তিক্ততা আরও বাড়ল? এ শিরোনামের খবরে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ভারত-কানাডা সম্পর্কের পারদ আরও চড়ল। ভারত থেকে কানাডার প্রায় ৪০ জন কূটনীতিককে সে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিল নয়াদিল্লি। মঙ্গলবার ‘দ্য ফাইনান্সিয়াল টাইমস’ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে নয়াদিল্লি থেকে নিজেদের কূটনীতিককে সরাতে হবে কানাডাকে। অটোয়াকে এমন বার্তাই দিয়েছে নয়াদিল্লি। কানাডায় খলিস্তানপন্থী নেতা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির এই নির্দেশে দু’দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে চলেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
বিপক্ষের মাঠেই কর্মসূচি, দেশের নজরে তৃণমূল-সংবাদ প্রতিদিনের খবর
বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, দিল্লির বুকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে আবার ভরপুর প্রাসঙ্গিক তৃণমূল কংগ্রেস। আপাতত সব দলের কৌতূহলের কেন্দ্রে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি।বাংলার নির্বাচনী ময়দানে বিজেপি ও বিরোধীদের হারানো; দিল্লিতে বিকল্প শক্তি ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকায় আলাদা নজর তৃণমূলের উপর ছিলই; কিন্তু এবারের এই দিল্লি অভিযান, সব কিছুকে ছাপিয়ে তৃণমূলকে এনে ফেলেছে শিরোনামে। আর গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে সত্যাগ্রহের সময় অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কর্মসূচির উপর বিজেপির পুলিশি অভিযান তৃণমূলের গুরুত্বকেই আরও উচ্চতা দিয়েছে।তৃণমূল মানেই গণআন্দোলন। বিরোধী রাজনীতির ঝাঁজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিকন্যা হয়েছেন এই বিরোধী রাজনীতি থেকেই।তৃণমূল এই কেন্দ্রবিরোধী প্রতিবাদী আন্দোলনটা করছে দিল্লিতে, প্রতিপক্ষের মাঠে। বস্তুত, অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও তৃণমূলের দিল্লি অভিযানের দিকে সকৌতূহলে চেয়ে আছে।
সংবাদমাধ্যমের ওপর ফের আক্রমণ মোদী সরকারের-গণশক্তি পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, অনলাইন পোর্টাল নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং কর্মচারীর বাড়িতে আজ সকালে দিল্লি পুলিশ ‘চীন যোগসাজশের’ অভিযোগে হানা দেয়। পুলিশ ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন সহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং হার্ডডিস্কের ডেটা ডাম্প নিয়ে গেছে। সিপিআই(এম) এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তার বাসভবনে অভিযানের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তারা কী তদন্ত করছে, কেউ জানে না। এটি যদি মিডিয়াকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা হয় তবে দেশকে এর পিছনে কারণ জানতে হবে।ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া বলেছে যে নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত সাংবাদিক ও লেখকদের বাড়িতে অভিযান চালানোর বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।তারা বলেছেন, অধিকাংশ বড়-বড় সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল মোদী সরকারের তাঁবেদারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৩