৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন
'অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই'
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এ হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সংঘাত সংঘর্ষ। ঘটছে নানা ঘটনা। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক, ডেইলি স্টার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং জনপ্রিয় উপস্থাপক গোলাম মোর্তজা।
তিনি বললেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি সেখানে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। এরমধ্যে নতুন কিছু নেই। যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটি সাজানো এবং একতরফা নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশে এবং দেশের বাইরে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
গোলাম মোর্তজা আরো বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বর্তমান আন্দোলন এবং পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের যে ঘোষণা তারা দিয়েছে তা বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি সরকারকে দুর্বল করারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। উপস্থাপনা ও সার্বিক নির্মাণ করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব, গোলাম মোর্তজা নির্বাচনের প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের খবর আসতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ জায়গায় নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মূলত আওয়ামী লীগেরই নেতা। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন আপনি?
গোলাম মোর্তজা: এটাকে আসলে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই অন্তত আমি দেখিনা। প্রথমত বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি সেখানে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। এরমধ্যে নতুন কিছু নেই। আর যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে একটি সাজানো নির্বাচন, একটা একতরফা নির্বাচন। সেই সাজানো এবং একতরফা নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দি নেই। আর এই নির্বাচন দেশে এবং দেশের বাইরে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেরকম একটা অবস্থায় এই সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করাও হচ্ছে একধরণের রাজনৈতিক কৌশল। কৌশলটাকে আমরা দেখছি- বলা হচ্ছে প্রতিন্দ্বিতা নেই। যদি তাইই হয় তাহলে মারামারি হচ্ছে কেন, অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে কেন? এই বিষয়গুলো দেখানোর জন্যই মূলত মারামারির ঘটনা ঘটছে। এর পুরোটাই বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। ডামি প্রার্থী দেওয়াটা একটা বড় পরিকল্পনার অংশ। এইসব ঘটনা ঘটিয়ে দেখানো হবে যে নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে। সেখানে প্রার্থী আছে, মারামারি আছে সবই তো হচ্ছে। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।
রেডিও তেহরান: নির্বাচনের এই ডামাডোলে বিএনপি আজ থেকে অসহযোগের ডাক দিয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি সরকার পতনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে বলে আপনার মনে হয়?
গোলাম মোর্তজা: না, এরকম সম্ভাবনা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যায় না। আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যে এরশাদের মতো স্বৈরশাসক যার কোনো জনসমর্থন ছিল না জোর করে ক্ষমতায় ছিল সেই মানুষটির পতন ঘটানোর জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলসহ দেশের বাকি সব দিলে নয় বছর সংগ্রামের পর তার পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছিল। সুতরাং আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আছে, তারা একটি কতৃর্ত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। সেখানে বিরুদ্ধ মতের ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে চুপ রাখা হয়েছে। আর সেইরকম একটা পরিস্থিতিতে বিরোধীদল যখন আন্দোলন করে সেই আন্দোলনটাকে খুব ভয়াবহভাবে দমন করা হয়। সেই দমন এবং বিরোধীদলের দুর্বল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা এটা বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে অন্য একটি দিক দিয়ে দিন শেষে বিএনপির সাফল্য হিসেবে দেখা যেতে পারে সেটি হচ্ছে এই ধরণের একতরফা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোটার উপিস্থিতি থাকে না। যদি সত্যি সত্যি ভোটারের উপস্থিতি না থাকে তাহলে বিএনপি যে বলছে ভোট প্রত্যাখ্যান করতে সেই ভোট প্রত্যাখ্যান কিছুটা হলেও যুক্তিতে যায়।
আর কতৃর্ত্ববাদী সরকার নতুন ক্ষমতায় আসার পর সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। নির্বাচন কমিশনও সরকারের নিয়ন্ত্রণেই। যে কারণে নির্বাচন কমিশন একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা অসাংবিধানিক উপায়ে ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বা নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা আসে এরকম সভা সমাবেশ বন্ধ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়ে কার্যকর করালো এটাও একধরণের দমনমূলক নীতিরই প্রকাশ। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের এক হয়ে যাওয়ার প্রকাশ। এরকম একটি জায়গাতে বিএনপি অসহযোগের যে কথা বলছে সেটা কার্যকর হবে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পতন তো দূরের কথা সরকার দুর্বল হবে এমন কোনো সম্ভবনা দেখিনা।
রেডিও তেহরান: বিএনপি’র কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত এবং হানাহানি আরো বেশি অনিবার্য হয়ে উঠলো কিনা?
গোলাম মোর্তজা: সংঘাত হবার বিষয়টি নির্ভর করে সরকার কীভাবে দেখে তার উপর। বিএনপির কে করবে সংঘাত। আমি তো বিএনপির সংঘাত করার লোক দেখিনা। দলটির প্রায় সকল নেতা কারাগারে। একহাজারের ওপর নেতাকর্মীকে এরইমধ্যে দ্বণ্ড দেয়া হয়েছে। তারা এখন জেলে। নাশকতা, বোমাবাজি, গাড়ি পোড়ানোর মামলা ও গায়েবি মামলায় বিএনপির ঐসব নেতারা জেলে। বিএনপির প্রথম সারির নেতারা সবাই জেলে। আর যারা জেলের বাইরে আছেন তারাও আত্মগোপনে। তাদের নামেও শতশত মামলা আছে। ফলে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারা করবে? করার তো কোনো লোক দেখিনা!
রেডিও তেহরান: নির্বাচনের আগে ১৩ দিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এই দীর্ঘ সময় মাঠে রেখে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
গোলাম মোর্তজা: না, আমার কাছে তা মনে হয়না। এখানে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কিছু নাই। বস্তত আমি সেনাবাহিনীর কোনো কাজই এখানে দেখছি না। কারণ নির্বাচনটা যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতো, নির্বাচনে যদি বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় দলই অংশগ্রহণ করত সেক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সেনাবাহিনী যদি ৫ দিনও মাঠে থাকত তার একটা ভূমিকা ছিল। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে ১৩ দিন বা ১৩ ঘন্টা রাখা পুরো ব্যাপারটাই অপ্রাসঙ্গিক। আমার কাছে এর আলাদা করে কোনো গুরুত্ব নেই।
রেডিও তেহরান: তো জনাব, গোলামা মোর্তাজা। বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গোলাম মোর্তজা: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং দর্শক শ্রোতাদেরকেও ধন্যবাদ। #
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৪