জানুয়ারি ০৫, ২০২৪ ২৩:২১ Asia/Dhaka

তারুণ্য ও যৌবনের প্রকৃতি অত্যন্ত দুরন্ত এবং আবেগময়। এ সময়ের দুরন্ত আবেগ ও উচ্ছ্বাসকে সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার করা জরুরি।

আর তরুণ ও যুব সমাজসহ সব বয়সের মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত ও সুশৃঙ্খল করতে পারে কেবলই খোদায়ি বিধান তথা আলকুরআন ও নিষ্পাপ মহামানবদের বাণী। তবে ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম আর গতিশীল তরুণ ও যুব সমাজের মন বেশি কোমল বলে তাদের মধ্যে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণী তথা নিষ্পাপ মহামানবদের বাণী অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম সম্পর্কে তরুণ ও যুব সমাজের কৌতূহল অন্য কিছুর চেয়ে কম নয় বরং তাদের এ সংক্রান্ত তৃষ্ণা অনেক সময় অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি। ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার সঠিক দিক-নির্দেশনা তুলে ধরা যুব ও তরুণ সমাজের নানা সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহকে জানানো ও চেনানোর জন্য বিশুদ্ধতম উৎসগুলো এবং আদর্শ মানবদের জীবন তাদের কাছে তুলে ধরা জরুরি। পবিত্র কুরআনের বাণীর নানা ধরনের পোস্টার ও স্লাইড শো এবং বই-পুস্তক সৌন্দর্য-প্রেমী যুব ও তরুণ সমাজের শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পবিত্র কুরআনের কাহিনী-ভিত্তিক সিনেমা বা টেলিভিশন সিরিয়াল, কবিতা, ছোটো গল্প ও বড় গল্প সম্পর্কেও একই সত্য প্রযোজ্য।  

পবিত্র কুরআন মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর বক্তব্য বা বাণী যাতে রয়েছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী অকাট্য যুক্তি, অতীতের উদ্ধত জাতিগুলোর ইতিহাস এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের বিধান বা দিক-নির্দেশনাসহ নানা ধরনের শিক্ষা ও তথ্য। মানুষকে অন্ধকারের পথ থেকে সুপথের আলো দেখানোর জন্য পবিত্র কুরআন সূর্যের মতই প্রোজ্জ্বল ও মোক্ষম এবং নতুনত্বের আকর্ষণে ভরপুর। অন্যদিকে মানুষ হল অনন্য চিন্তাশক্তি ও ইচ্ছাশক্তির অধিকারী প্রাণী। উদ্ভিদকে সবুজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সূর্যের আলো, তাপ ও পানি যেমন জরুরি তেমনি মানুষের আত্মাকেও সজীব রাখতে পবিত্র কুরআনের প্রাণ-সঞ্জীবনী বাণীর সংস্পর্শ অপরিহার্য। দূরদর্শিতা, অন্তর্দৃষ্টি, স্বচ্ছতা ও প্রজ্ঞা অর্জনেরও অনন্য মাধ্যম হল পবিত্র কুরআন। তাই যুব ও তরুণ সমাজের কাছেও পবিত্র কুরআন এক অনন্য ও চিরন্তন আকর্ষণের খনি। পবিত্র কুরআন একত্ববাদ, শান্তি ও মানবজাতির ঐক্যের কথা বলে, প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য  শেখায় এ মহাগ্রন্থ। আর অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা বলে এই আসমানি কিতাব। তাই যুব সমাজকে বিপুল উদ্দীপনা যোগায় আসমানি এই মহাগ্রন্থ। 

পবিত্র কুরআনের জ্ঞানসহ যে কোনো জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে ভালো বা মোক্ষম সময় হল শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রাণবন্ত যুগ বা সময়। কম বয়সে কোনো কিছু শেখা ও বৃদ্ধ বয়সে কোনো কিছু শেখা সমান নয়। মহানবীর (সা) ভাষায় যৌবনে জ্ঞান অর্জন যেন পাথরে খোদাই করে রাখা লেখনি, অন্যদিকে পড়ন্ত বয়সে বা বার্ধক্যে কোনো কিছু শেখা যেন পানিতে কোনো কিছু লেখার মতই অস্থায়ী। 

তরুণ ও যুব সমাজকে যত বেশি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন চর্চায় আকৃষ্ট করা যায় ততই তা তাদের অন্তরকে যোগাবে পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক ঔজ্জ্বল্য এবং এর ফলে কমে যাবে নৈতিক বিচ্যুতির আশঙ্কা। মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতও তরুণ ও যুব সমাজকে খুব বেশি বেশি কুরআনের সংস্পর্শে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম যাইনুল আবেদিনের ভাষায়- পবিত্র কুরআন যদি মোর সঙ্গে রয়/  অতঃপর ধরার পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তও যদি জনশূন্য হয়/ নিঃসঙ্গ রব না আমি, রবে না একাকিত্বের ভয়। 

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত একজন আদর্শ যুবক হলেন হযরত ইউসুফ (আ)। যৌবনে কঠিনতম এক পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। অভিজাত মহলের ইন্দ্রিয়-বিলাসী সুন্দরী নারীরা তাঁর জন্য পেতে রেখেছিল নৈতিক মহাবিচ্যুতির ফাঁদ।  এ সময় মহান ইউসুফ নিজেকে সংযত রেখে সাহসিকতার সঙ্গে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে মুনাজাতের হাত তুলে বললেন: হে পালনকর্তা! এই নারীরা আমাকে যেদিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশি প্রিয়! তাদের ছলনা ও ষড়যন্ত্রগুলো থেকে যদি আমায় মুক্ত না করেন তথা তাদের ষড়যন্ত্রগুলো বানচাল না করেন তাহলে আমার মন তাদের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে এবং আমি হয়ে পড়ব অজ্ঞদের একজন ! (সুরা ইউসুফ, ৩৩ নম্বর আয়াত) মহান আল্লাহ হযরত ইউসুফের প্রার্থনা কবুল করে তাঁকে অসংযত নারীদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন ও তাদের ষড়যন্ত্রগুলো বানচাল করেন। ইউসুফ নবী যে পবিত্র ছিলেন বরং মিশরের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী জুলাইখাই যে অসংযমী হয়ে পড়েছিলেন তা সুস্পষ্ট হয় সবার কাছে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত এ কাহিনী যুব সমাজকে এটাই বলছে যে তাদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে, গায়ের জোর এমনকি নিজের ঈমানের জোরের ওপরও ভরসা করা যাবে না।

পবিত্র কুরআন গোটা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক 

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কুরআনী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ প্রচারের জন্য ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার বিশেষ আগ্রহ ও আবেগ রয়েছে। যুবকদের উদ্দেশ্যে তার নির্দেশনায় তিনি বলেছেন: "আমার প্রিয় যুবকরা! কুরআন তিলাওয়াত করা খুবই সৌভাগ্যের বিষয় এবং সাওয়াবের বিষয়; এই তেলাওয়াত জ্ঞান বা মারেফাত অর্জনের মাধ্যম। এই কুরআন একটি বিশাল সমুদ্র। তোমরা যতই এগিয়ে যাবে , ততই বেশি তৃষ্ণার্ত এবং আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে, তোমাদের হৃদয় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। 

কুরআন অধ্যয়নের সময় চিন্তাশীল হতে হবে। আমি আবারও তরুণদের অনুরোধ করছি কুরআনের অর্থ বুঝতে এবং কুরআনের অনুবাদ বুঝতে। আমি যুবকদের কাছ থেকে বহুবার এই আবেদন জানিয়েছি এবং এর জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। যে কুরআন তোমরা প্রতিদিন তিলাওয়াত করছ তার অনুবাদও দেখে নাও। এই অর্থগুলো তোমাদের তরুণ মনে খোদাই হয়ে যাক। আর তাহলেই চিন্তা করার সুযোগ থাকবে।"  

পবিত্র কুরআন কেবল নৈতিক উপদেশমূলক বই নয়। এতে রয়েছে সামাজিক, ব্যক্তিগত বিষয়, আত্মশুদ্ধি, পারিবারিক, আয়-উপার্জন, শ্রম, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক, রাষ্ট্রীয়, বিচারিক বা আইনি বিষয়সহ জীবনের সব ক্ষেত্রের দিক-নির্দেশনা। মার্কিন নওমুসলিম আবদুল্লাহ তথা সাবেক ক্যাভিন কম্বেস পবিত্র কুরআনকে জীবনের নানা পথ ও দিকের দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্থ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, কুরআনে রয়েছে সবচেয়ে সুন্দরতম বাণীগুলো। এর আগে পৃথিবীর কোথাও এমন সুন্দরতম বাণী শুনিনি। কুরআনের বাণীর অর্থ যখন বুঝতাম না তখনও এটা বুঝতাম যে এর বাণী খুবই সুন্দর। কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ পড়ে আমার কেমন লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কুরআনের বাণীগুলোতে কোন অসঙ্গতি নেই। এই আসমানি গ্রন্থ জীবনের বই।"  

ইমাম সাদিক (আ)'র বর্ণনা অনুযায়ী যৌবনে যারা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করবে তারা যদি মুমিন হন তাহলে কুরআন তাদের রক্ত-মাংসে মিশে যায়। আল্লাগ তাদেরকে নিজের বাণীবাহক ফেরেশতাদের সঙ্গী করেন।  কুরআন পাঠের কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন ও বেহেশতে প্রবেশ করান। বিচার-দিবসে তাকে দুটি বেহেশতি জামা পরিয়ে দেয়া হয় এবং মাথায় পরিয়ে দেয়া হয় বিশেষ মুকুট।  যারা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করে কুরআন মুখস্থ করেন আল্লাহ তাকে দুই বার পুরস্কার দান করেন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

   

ট্যাগ