এপ্রিল ০৯, ২০১৯ ০০:১৩ Asia/Dhaka
  • কাশ্মির জ্বলছে, শান্তি ফেরাতে সরকারকে বেশি উদ্যোগী হতে হবে: ড. আবদুস সাত্তার

“কাশ্মির সংকট সমাধানের জন্য ভারত সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। ভূস্বর্গের মানুষের শান্তি নেই, উন্নয়ন নেই। কাশ্মিরবাসীর মনে আস্থার বাতাবতরণ সৃষ্টি করে আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধানে সবাইকে বেশি এগিয়ে আসতে হবে।” রেডিও তেহরানকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের সাবেক মন্ত্রী ও কোলকাতার নব বালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান:  কাশ্মিরে গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে মূল কারণ কী?

ড. আবদুস সাত্তার: দেখুন, কাশ্মির সংকটের সমাধান না হওয়ার পেছনে নানা ধরনের শক্তি কাজ করছে তাতে কোনো সন্দেহ। এরসাথে রয়েছে বাইরের প্ররোচনার বিষয়টি। এটিও একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি কাশ্মির সংকট সমাধানের জন্য ভারত সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। কাশ্মিরবাসীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও তাদের মন জয় করার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে। সরকার যদি আরও বেশি উদ্যোগী হয় এবং কাশ্মিরের মানুষ যদি একইসাথে এগিয়ে আসে তাহলে আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে। তাছাড়া কাশ্মিরবাসীকে বাইরের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকতে হবে।

অস্ত্র দিয়ে কোথাও কোনো সংকটের সমাধান হয় নি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আলোচনা ছাড়া কাশ্মির সংকট সমাধানের বিকল্প কোনো পথ নেই। আর সেই আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জম্মু কাশ্মিরের যে নির্বাচিত সরকার ছিল, কাশ্মিরের জনগণ এবং কেন্দ্রীয় সরকার-সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সংকট সমাধানে। সবাইকে একত্রে বুঝতে হবে যে কোন্‌ পথে, কোন্‌ উপায়ে কাশ্মির সমস্যার সমাধান করা যায়। কী করা হলে কাশ্মির তার পুরোনো অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। কোন্‌ সমাধানের পথে গেলে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, কাশ্মিরবাসীর পক্ষে সুখকর হবে এবং কাশ্মিরের উন্নয়নের জন্য ভালো হবে। এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই অবস্থাটা বর্তমানে নেই।

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত এক কাশ্মিরি

রেডিও তেহরান: জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লাহ রাজ্যটিতে আবারো আলাদা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই মুহূর্তে এই দাবি তোলার কারণ কী?

ড. আবদুস সাত্তার: দেখুন, কাশ্মিরের একটা অতীত আছে। ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন কাশ্মির ভারতের সঙ্গে ছিল না। কাশ্মির ছিল আলাদা একটি দেশীয় রাজ্য। এখানে স্বাভাবিকভাবেই স্পেশাল অ্যাটাচের একটা প্রশ্ন ছিল। এখানে হানাদাররা ঢুকে পড়ে। শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন লড়াই হয়েছে। সেই দীর্ঘ আন্দোলন লড়াইয়ের মাধ্যমে কাশ্মির ধর্মনিরপেক্ষতার একটি চূড়ান্ত রূপ পেল। কাশ্মিরের নিজস্ব সংস্কৃতি একটা বড় বিষয় ছিল। হানাদারদের সরিয়ে তারা ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মিরের মৌলিক দিক হচ্ছে ৩৭০ ধারা। আর এই ৩৭০ ধারার মধ্যে কাশ্মিরের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে, স্বায়ত্বশাসন, আলাদা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদ যুক্ত করা হয়। আর এখন নির্বাচনের সময় নানা ধরনের দাবি দাওয়া আসছে। রাজনীতিবিদরা নানারকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু মূল যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে কাশ্মিরের মানুষের শান্তি। ভূস্বর্গ জ্বলছে। কাশ্মিরের মানুষ সুখে নেই, শান্তিতে নেই। সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কাশ্মিরের বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। সেখানে কিছুই নেই। এসব ক্ষেত্রে কি করা হবে! এককথায় কাশ্মিরের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর সেজন্য অবশ্যই কাশ্মিরবাসী; সেখানকার রাজনীতিক এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কাশ্মিরে আর কত প্রাণ বলিদান হবে!

আমি আবারও বলছি পৃথিবীর কোথাও অস্ত্রের মাধ্যমে সংকটের সমাধান হয় নি। আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান করতে হবে। বিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে হবে। ভারত সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে কাশ্মিরবাসীকে আশ্বস্ত করা যে আমরা আপনাদের পাশে আছি। কাশ্মিরের মানুষের মনকে জয় করতে হবে। ভারতের যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তারা যদি কাশ্মিরের মানুষের সেই বিশ্বাস ও আস্থার জায়গায় আসতে পারে তাহলে আলোচনার পরিবেশটা অনুকূল হবে এবং সমাধানও বেরিয়ে আসবে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/আশরাফুর রহমান/৮