জুন ১৫, ২০১৯ ১৭:১৭ Asia/Dhaka

সুরা কিয়ামা বা কিয়ামাত পবিত্র কুরআনের ৭৫ নম্বর সুরা। তবে কুরআন নাজিলের ধারাক্রম অনুযায়ী সুরা কিয়ামা পবিত্র কুরআনের ৩১ নম্বর সুরা। এ সুরায় রয়েছে ৪০ আয়াত ও দু'টি রুকু।

কিয়ামাত তথা পুনরুত্থান ও বিচার দিবস সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে বলেই এ সুরার নাম রাখা হয়েছে কিয়ামা বা কিয়ামাত। পবিত্র কুরআন ও এই পবিত্র গ্রন্থকে অস্বীকারকারীদের সম্পর্কেও কয়েকটি বাক্য রয়েছে এ সুরায়।

 

সুরা কিয়ামাতের প্রথম দুই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

১) আমি কিয়ামত দিবসের শপথ করছি। (২) এবং আরও শপথ করছি (মন্দকর্মে) ভর্ৎসনাকারী আত্মার।

পুনরুত্থান যে সত্য ও অনিবার্য বাস্তবতা তথা সমস্ত মানুষকে যে আবারও জীবিত করা হবে এবং তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে সে বিষয়ে জোর দেয়ার জন্য এ সুরায় কিয়ামাত ও জাগ্রত বিবেক তথা মানুষকে তিরস্কারকারী বিবেকের শপথ নেয়া হয়েছে। এ দুই বিষয়ের শপথের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের দিক হল এটা যে আমরা নৈতিক-বিবেকর মাধ্যমে পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের অস্তিত্ব এবং অনিবার্যতাকে বুঝতে পারি।

 

আত্মার বিভিন্ন শ্রেণী আছে : (ক) এক পর্যায় এমন হয় যখন আত্মা অন্যায় কর্মে প্ররোচিত করে;(খ) দ্বিতীয় পর্যায় হল আত্মা অন্যায়ে ধিক্কার জানায়;(গ) এবং তৃতীয় পর্যায়ে আত্মা আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তের প্রতি আত্মসমর্পিত ও সন্তুষ্ট থাকে যাকে নাফসে মুতমায়েন্না তথা প্রশান্ত বা নিশ্চিত আত্মা বলা হয়। স্পষ্টত নাফসে আম্মারা  তথা মন্দকর্মে লিপ্তকারী আত্মা শপথ করার যোগ্য নয়;তবে নাফসে লাওয়ামাহ্ তথা মন্দকর্মে ধিক্কার জানায় এমন আত্মার উন্নত যোগ্যতা থাকায় মানুষের সামনে এর শপথ নেয়া যায়। কিছুক্ষণ পরে আমরা এই তিন আত্মার অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলব।

বিবেকের বিচার ঘটতে দেখা যায় মানুষের মনের মধ্যেই। তাইতো মানুষ যখন ভালো কাজ করতে পারে তখন তার মন ও আত্মা খুশিতে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। মনের এই আনন্দ এক ধরনের পুরস্কার। আর নোংরা বা পাপ কাজ করলে জাগ্রত-বিবেক ধিক্কার দিতে থাকে। ফলে আত্মা চাপের মুখে থাকে। এই চাপ তথা বিবেকের দংশন কখনও এতটা প্রবল হয় যে তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য কখনও কখনও মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এই সুরা আমাদের এ ইঙ্গিত দেয় যে মানুষের ভেতরেই যখন তার বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং বিবেক মানুষকে তার কাঠগড়ায় হাজির করে তখন গোটা বিশ্ব জগতের প্রভু ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা রাখবেন না তা কি করে সম্ভব?

 

সুরা কিয়ামাতে মহান আল্লাহ বলছেন:

মানুষ কি মনে করে যে,আমরা তার হাড়গুলো একত্র করব না? (৪) বস্তুত আমরা তার অংগুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।

প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগে-নাজিল হওয়া পবিত্র কুরআনের নানা বাক্যের মধ্যে রয়েছে এমন সব বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক তথ্য যে আধুনিক যুগের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। যেমন, প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলের রেখাগুলো এক ধরনের নয়। এমনকি যমজ সন্তানদের আঙ্গুলের রেখাগুলোও এক নয়। তাই বিশ্বজুড়ে মানুষের পরিচয় সনাক্ত করার এক নিখুঁত পন্থা হল আঙ্গুলের ছাপ নেয়া। মৃত মানুষের পুনরুত্থানের সময় তার হাতের আঙ্গুলগুলোর রেখাও অবিকল আগের মত থাকবে বলে যে ইঙ্গিত কুরআন দিয়েছে তার অর্থ হল মহান আল্লাহ প্রতিটি মৃত মানুষকে অবিকল তার আগের বৈশিষ্টগুলোসহ পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। আর এই ইশারা থেকে বুদ্ধিমান সবাইই বুঝতে পারেন যে মহান আল্লাহ মহা-কৌশলী তথা মহাবিজ্ঞ এবং মানুষের মৃত্যুর পর তাদের পুনরুজ্জীবনও মৃত্যুর মতই এক অনিবার্য সত্য।

 

সুরা কিয়ামাতের ৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

(৫) বরং মানুষ চায় যে,তার সামনের দিনগুলোতেও অন্যায় করবে।

  • অর্থাৎ এখানে এ ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, একদল মানুষ মনে মনে পুনরুত্থান বা পরকালের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও পরকাল ও বিচার-দিবসকে অস্বীকার করছে জুলুম বা পাপাচারের বিষয়ে বিবেককে ধোঁকা দিতে ও মানুষের সামনে দায়িত্বশীলতা এড়িয়ে যেতে। কুরআনে মানুষের তিন ধরনের মন বা নাফ্‌স-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষের বিদ্রোহী মন বা প্রবৃত্তি তাকে নোংরা ও মন্দ কাজের দিকে আকৃষ্ট করতে চায় সব সময়। এই বিশেষ মন বা প্রবৃত্তিকে বলা হয় নাফসে আম্মারা। সব ধরনের মন্দকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হল এর কাজ।  
  • মানুষের আরেকটি মন বা আত্মিক অবস্থার নাম হল নাফসে লাওয়ামাহ তথা তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন বা জাগ্রত আত্মা। এই মনের কাজ হল মানুষ যখন গোনাহ বা মন্দের দিকে এগিয়ে যেতে চায় বা পাপের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হয় তখনই তা বিবেককে জাগিয়ে তোলে ও তাকে তওবা করতে বলে।
  • মানুষের মন বা আত্মিক অবস্থার আরেকটি পর্যায় হল নাফসুল মুতমায়িন্নাহ তথা সুনিশ্চিত আত্মা। এ অবস্থা মানুষের পাপ-প্রবণতাকে পুরোপুরি দমিয়ে রাখে এবং তাকে খোদাভীতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়।  এ সময় মানুষের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার অনুভূতি জাগ্রত থাকে বলে সে পাপ বা বিচ্যুতির শিকার হয় না।  
  • নাফসে লাওয়ামাহ তথা মানুষের ভেতরকার ক্ষুদ্র বিচারালয়ের সঙ্গে পুনরুত্থান দিবসের আল্লাহর বিচারালয়ের বিস্ময়কর মিল রয়েছে। এখানে বিচারক, সাক্ষী ও হুকুমের বাস্তবায়নকারী একই ব্যক্তি। বিবেকের এই বিচারালয়ে ঘুষ ও মিথ্যাচারের সুযোগ নেই। আর কিয়ামতের বিচারালয়েও ঘুষ দেয়া ও মিথ্যাচারের সুযোগ নেই এবং একের দোষের জন্য অন্যকে শাস্তি দেয়ারও কোনো অবকাশ সেখানে নেই। কারো সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না। উপহার, ঘুষ ও কারো সাহায্যেরও সুযোগ সেখানে নেই। বিবেকের আদালত খুব দ্রুত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর রায় দেয়। আল্লাহর বিচারালয়ও এ ধরনের।

আল্লাহর বিচারালয়ে মানুষের হাত, পা ও শরীর তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। অন্যদিকে বিবেকের আদালতেও বহিরাগত সাক্ষী, সাক্ষ্য ও বিচারকের দরকার হয় না। এখানে জ্ঞান বা সচেতনতা নিজের অনুকূল বা প্রতিকূল  অভিযোগ মেনে নেয়। আর এসব মিল থেকে বোঝা যায় পরকাল ও চূড়ান্ত বিচার-দিবস অনিবার্য এবং তা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। #

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।