মে ১৩, ২০২০ ১৪:৩০ Asia/Dhaka

পবিত্র রমজানের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বিগত হয়েছে। মহান আল্লাহর এত বড় আধ্যাত্মিক ও ফ্রি ভোজ-সভা হতে আমরা কতটা পাথেয় সংগ্রহ করেছি? 

অনেকেই নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত থেকে এই মহাভোজ-সভা হতে কিছুই সংগ্রহ করতে পারেন না। কেউ কেউ টেরই পাননি যে কি ঘটছে এই মহা-বরকতময় মাসে! আবার কেউ কেউ লাজুক মেহমানের মত কিংবা অরুচির শিকার রোগীর মত খুবই অল্প খাবার খান এই মহাভোজ-সভায়। কিন্তু অশেষ বরকতময় এ ভোজ-সভার খাবার বস্তুগত নয়, বরং আধ্যাত্মিক। তাই বস্তুগত খাবারের বিপরীতে এখানে বেশি খেলে সমস্যা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আধ্যাত্মিক খাবার যত বেশি খাওয়া যায় ততই মহান আল্লাহর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি বেশি মাত্রায় অর্জন করবেন। তাই মাহে রমজানের বর্ণাঢ্য ভোজসভা থেকে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় পাথেয় সংগ্রহ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কুরআন অধ্যয়ন এ মহা-ভোজসভার অন্যতম বড় আইটেম। কুরআন তিলাওয়াত যত বেশি করবেন ততই বেশি লাভবান হবেন। পবিত্র রমজানে কুরআনের কেবল এক আয়াত তিলাওয়াতে পুরো কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু কুরআনের প্রত্যাশিত তিলাওয়াত বা  কুরআন অধ্যয়ন হচ্ছে আয়াতের অর্থ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা।

কুরআন এমন এক মহাসাগরের মত যে এতে আপনি যতই ডুব দেবেন জ্ঞানের মনি-মুক্তা কুড়ানোর জন্য ততই দেখবেন যে জ্ঞানের নতুন নতুন জগত আপনার সামনে খুলে যাচ্ছে! জ্ঞানের হিরা আর মনি-মাণিক্যের এমন এক মহাখনি হল কুরআন যেখানে আমাদের আত্মা পায় সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি। কুরআন অধ্যয়নের পর আপনার মন অবশ্যই বিনম্র হবে। আপনার মধ্যে বেড়ে যাবে খোদা-প্রেম। চারপাশের নানা বস্তু ও অবস্তুগত বিষয়গুলোর মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন মহান আল্লাহর অশেষ করুণা আর তুলনাহীন ক্ষমতার নিদর্শন। ফলে কৃতজ্ঞতা ও বিনম্রতায় আপনার চোখ হবে অশ্রু-সজল। কুরআন অধ্যয়নের পর নফল ও ফরজ নামাজে আপনি পাবেন বাড়তি আধ্যাত্মিক তৃপ্তি। ঈমানকে গভীর ও মজবুত করার জন্য পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন খুবই জরুরি। আর রমজান হচ্ছে কুরআন চর্চার অনন্য ঋতু তথা বসন্ত।

রমজানে খোদায়ি মহাভোজ-সভার আরেকটি বড় আইটেম হল নানা ধরনের দোয়া পাঠ।  ইমাম জাইনুল আবেদিনের সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া দোয়ার এক অনন্য-সুন্দর মহাগ্রন্থ। একে বলা হয় মহানবীর আহলে বাইতের যাবুর। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের এমন কিছু বিশেষ দিক বা বিষয় আছে যা কেবল বিশ্বনবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ও এ পবিত্র ধারার মহান ইমামদের দোয়াতেই পাওয়া যায়। এসব দোয়ায় রয়েছে অনন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান, বিনম্রতা ও প্রেমময় সংলাপ। শবে কদরের রাতে এ দোয়াগুলো পাঠের কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত। এসব অপূর্ব দোয়ার মধ্যে সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার দোয়াগুলো ছাড়াও দোয়ায়ে কুমাইল, মুনাজাতে শাবানিয়্যাহ, দোয়ায়ে ইফতিতাহ, ইমাম হুসাইন ও ইমাম সাজ্জাদের দোয়ায়ে আরাফাহ,দোয়ায়ে জওশান কবির ও দোয়ায়ে জওশান সাগির এবং দোয়ায়ে আবু হামজা সুমালি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কুফার মসজিদে উচ্চারিত হযরত আলীর মুনাজাত, দোয়ায়ে আহাদ ও দোয়ায়ে নুদবাহ - এসব দোয়াও বছরের যে কোনো সময়ের মত রমজান মাসেও পড়া যেতে পারে।

এ ছাড়াও রমজানে বেশি বেশি পড়া যেতে পারে নবী-রাসুল ও ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার আকুতিতে ভরা অনেক জিয়ারত। যেমন, জিয়ারাতে আলে ইয়াসিন, জিয়ারাতে আমিনুল্লাহ, জিয়ারাতে ওয়ারিস ও জিয়ারাতে আশুরা ইত্যাদি।

যারা ইসলামী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য তারা নানা ধরনের সংগ্রামী তৎপরতা চালাতে গিয়ে শারীরিকভাবে ক্লান্ত না হলেও অনেক সময় মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর এ সময়ে মহানবীর আহলে বাইতের শেখানো অনন্য-সুন্দর দোয়াগুলো পাঠ তাদের ক্লান্ত আত্মাকে আবারও সজীব ও চাঙ্গা করে তুলে। শারীরিক ক্লান্তির চেয়ে মানসিক ক্লান্তি অনেক বেশি বিপজ্জনক। 

আমাকে ও আপনাকে সেভাবেই মহান আল্লাহ পরীক্ষা করবেন যেভাবে করেছেন অতীতের মুমিনদের ক্ষেত্রে। পরবর্তী যুগের মানুষের জন্যও খোদায়ি পরীক্ষা থাকবে। সফল হবেন তারাই যারা সব ক্ষেত্রে যত বেশি খোদাভীরুতার পরিচয় দিতে পারবেন। কুরআন অধ্যয়ন ও দোয়া এক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন:

নামায ও রোযায় মহানবীর ( সা: ) চক্ষুর শীতলতা:

মহানবী ( সা: ) বলেছেন: মহান আল্লাহ নামায ও রোযার মধ্যে মহানবীর ( সা: ) চক্ষুর শীতলতা স্থাপন করেছেন । ( অর্থাৎ নামায  ও রোযা হচ্ছে মহানবীর চোখের শীতলতা  ও নয়নমণি।)

রমজানের রোজার এক বড় উদ্দেশ্য হল সংযম বা ধৈর্য শেখা ও তার চর্চা করা। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন,  ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা থেকে আসে : সুন্দর বৈশিষ্ট্যে সজ্জিত হওয়া, পুণ্যবানদের সাথে ওঠাবসা, লাঞ্ছনা ও নীচতা দূর হওয়া, কল্যাণের প্রতি ঝোঁক,উচ্চতর মর্যাদার সান্নিধ্য, ক্ষমা, অবকাশ প্রদান, সদাচার, এবং নীরবতা। এসবই হল বুদ্ধিমান ব্যক্তির সহিষ্ণুতার সুফল। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার তৌফিক দিন।

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।