মে ১৪, ২০২০ ১৪:৪০ Asia/Dhaka
  • রমজান: খোদাপ্রেমের বসন্ত (পর্ব-২০)

পবিত্র রমজান মাসে আমরা সবাই মহান আল্লাহর মেহমান। বুদ্ধিমান মেহমান হতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে  মেজবানের তথা মহান আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দ ও তাঁর ক্রোধ আর দয়া উদ্রেককর বিষয়গুলো কী? 

আমরা রমজান মাসে আল্লাহর বিশেষ ভোজ-সভার মেহমান তথা অজস্র বিশেষ  খোদায়ি অনুগ্রহের ভাণ্ডার থেকে অফুরন্ত মাত্রায় ফায়দা তোলার জন্য আমন্ত্রিত । কিন্তু অন্য মাসগুলোতেও কিন্তু আমরা তাঁরই দেয়া অনুগ্রহ ও রিজিক এবং যোগ্যতা হতে লাভবান হচ্ছি। তাই রমজান মাসেও যদি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মতো কাজ করতে না পারি তাহলে তা হবে মহান আল্লাহকেই অবজ্ঞা করার নামান্তর। 

প্রতিটি পাপের রয়েছে বাহ্যিক ও আত্মিক বা আধ্যাত্মিক ক্ষতি। আধ্যাত্মিক ক্ষতি আমরা অনেক সময় টের পাই না। যেমন, ইসলামী বর্ণনায় বলা হয়েছে, যদি মানুষ একটা মিথ্যা বলে তবে তার মুখের দুর্গন্ধে সাত আসমান পর্যন্ত ফেরেশতারা কষ্ট পান। যেমন বলা হয় যখন মানুষ জাহান্নামে থাকবে তখন জাহান্নাম প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াবে। এ দুর্গন্ধ প্রকৃতপক্ষে এ দুনিয়াতেই আমরা সৃষ্টি করেছি মিথ্যা কথা বলা, গালি দেয়া, অপবাদ ও পরনিন্দা চর্চার মাধ্যমে। পরনিন্দা ও  অপবাদ আরোপ গিবত থেকেও নিকৃষ্ট, যেহেতু পরনিন্দার মাধ্যমে যেমন মিথ্যাও বলা হয় তেমন গিবতও করা হয়। কিন্তু যে মিথ্যা বলে সে শুধু মিথ্যাই বলে, গিবত করে না। তাই পরনিন্দায় দু’টি কবিরা গুনাহ এক সঙ্গে করা হয়। রমজানে একে অপরের বিরুদ্ধে নিন্দা ও অপবাদ আরোপ অত্যন্ত নিন্দনীয়। রমজান মাস ঐক্যের মাস। এ মাস দেয়া হয়েছে এজন্য যে, মুসলমানরা বেশি বেশি সমবেত হবে, সম্মিলিতভাবে ইবাদত করবে, মসজিদে মিলিত হবে ও একে অপরকে দূরে সরাবে না। 

রমজান মাসেও পাপ করার মতো চরম অভদ্রতা আর কী হতে পারে?  রমজানের আগে ও পরেও যদি আমাদের অবস্থা একই রকম থাকে তাহলে তা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মহান আল্লাহর বিধান ও খোদাপ্রেমের রহস্যগুলো জানার এক মোক্ষম ঋতু হল পবিত্র রমজান। আমরা অনেকেই দুনিয়াদার বা দুনিয়া-পূজারি বলতে মনে করি যে যার রয়েছে বড় বড় প্রাসাদতুল্য বাড়ি বা দামী গাড়ি! কিন্তু বাস্তবে এমনও হয় যে তার বহু প্রাসাদ ও  সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি দুনিয়াদার নন। যেমন, হযরত সুলাইমান নবী ছিলেন বহু রাজকীয় প্রাসাদ, বিশাল রাজ্য, বহু কর্মচারী এবং বিত্ত আর ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু আল্লাহর দেয়া এসব নেয়ামতের জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র লোভও ছিল না।  অন্যদিকে দুনিয়ার প্রতি লোভ থাকার কারণে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক দরিদ্র ছাত্র কেবল একটি বইয়ের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়া-পূজারি হতে পারে। মোটকথা কে দুনিয়া-পূজারি ও কে দুনিয়া-পূজারি নয় তার মানদণ্ড কিন্তু সম্পদ নয়, বরং মানদণ্ড হল অন্তরের ঝোঁক-প্রবণতা।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন: 
 মহানবী ( সা: ) বলেছেন: আমার হাবীব ( বন্ধু ) জিবরাইল ( আঃ ) বলেছেন: এই ধর্মের ( ইসলাম ) উপমা হচ্ছে দৃঢ় – সুপ্রোথিত বৃক্ষের ন্যায় ঈমান হচ্ছে যার শিকড় ( মূল ) , নামায হচ্ছে যার শিরা-উপশিরা , যাকাত হচ্ছে যার পানি ( তরল পানীয় )  এবং রোযা ( সওম ) হচ্ছে যার পত্র – পল্লব ও শাখা – প্রশাখা।

বিশে রমজানের রাত তথা একুশে রমজান আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র শাহাদত-বার্ষিকী। একুশে রমজান পৃথিবী হারিয়েছিল বিশ্বনবী-(সা.)'র শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ও শ্রেষ্ঠ অনুসারীকে, হারিয়েছিল বিশ্বনবী-সা:'র জ্ঞান-নগরীর মহাতোরণকে,  হারিয়েছিল রাসুল  (সা:)'র পর সবচেয়ে দয়ালু ও উদার আত্মার অধিকারী মানুষ এবং হেদায়েতের উজ্জ্বলতম প্রদীপকে। সেদিন মুসলিম বিশ্ব তার অত্যন্ত দুঃসময়ে হারিয়েছিল সাধনা ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতার সর্বোত্তম আদর্শকে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা:)'র নিজ হাতে গড়ে তোলা ইসলামের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ও সবচেয়ে আপোষহীন নেতাকে। কিন্তু অকাল-মৃত্যু সত্ত্বে আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী (আঃ)’র শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের স্বর্গীয় আলোকোজ্জ্বল প্রভা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পরতে পরতে আদর্শ মুমিনের কর্মতৎপরতার গভীরে অতুলনীয় ও ক্রমবর্ধমান প্রভাব সৃষ্টি করে চলেছে। সেই আমীরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আঃ)'র শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবার প্রতি আমরা জানাচ্ছি অশেষ সমবেদনা। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর মতে, আলী (আ.) ছিলেন যুবকদের জন্য বীরত্ব ও সাহসিকতার আদর্শ, সরকার-প্রধানদের জন্য ন্যায়বিচারের আদর্শ, ইবাদত, খোদা-প্রেম ও ভারসাম্যপূর্ণ অনাড়ম্বর জীবনের জন্য সব মুমিন মুসলমানের জন্যই আদর্শ। তাঁর মুক্তিকামিতা  বিশ্বের সব মুক্তিকামীর আদর্শ এবং প্রজ্ঞাময় বক্তব্য ও চিরস্মরণীয় উপদেশগুলো আলেম, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের জন্য আদর্শ।

আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব  নদী-দখলকারী শত্রুরা যার বাহিনীর জন্য নদীর পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে সেই  শত্রুদের পরাজিত করার পরও তিনি ওই নদীর পানি  কোনো শত্রুর জন্য নিষিদ্ধ করেননি। জালিমদের বিরুদ্ধে আলী (আ.) সবচেয়ে কঠোর হলেও তিনি ব্যক্তিগত ক্রোধের বশে নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাদের ওপর আঘাত হানতেন। সিফফিনের যুদ্ধের প্রাক্কালে উভয়পক্ষের লোকক্ষয় এড়ানো ও বিদ্রোহীদের সুপথে আনার জন্য তিনি এত বেশী অপেক্ষার নীতি গ্রহণ করেছিলেন যে, সে সময় শত্রুরা এ প্রচারণা চালিয়েছিল যে মহাবীর আলী (আ.) মৃত্যুকে ভয় পান!  অথচ শিশুর কাছে মাতৃস্তন যতটা প্রিয় শাহাদত ছিল আলীর কাছে তার চেয়েও বেশি প্রিয়।

হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন,  মুসার সাথে হারুনের যে সম্পর্ক তোমার সাথে আমার সেই সম্পর্ক,  শুধু পার্থক্য হল হারুন (আঃ) নবী ছিলেন, তুমি নবী নও। 

রাসুল  (সা.) বলেছেন, " আমি জ্ঞানের নগরী, আলী তার দরজা, যে কেউ আমার জ্ঞানের মহানগরীতে প্রবেশ করতে চায় তাকে এ দরজা দিয়েই আসতে হবে"।

মহানবী (সা:) আরো বলেছেন:হে আম্মার! যদি দেখ সমস্ত মানুষ একদিকে চলে গেছে, কিন্তু আলী চলে গেছে অন্য দিকে, তবুও আলীকে অনুসরণ কর, কারণ, সে তোমাকে ধ্বংসের দিকে নেবে না।বিশ্বনবী (সা:) আরো বলেছেন: * আমি আলী থেকে, আর আলী আমার থেকে, যা কিছু আলীকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকে কষ্ট দেয়।* হে আলী! ইমানদার কখনও তোমার শত্রু  হবে না এবং মোনাফেকরা কখনও তোমাকে ভালবাসবে না। অনেক সাহাবী এ হাদিসের ভিত্তিতেই মোনাফেকদের সনাক্ত করতেন।

কোন এক ঘটনার ফলে রাসুল  (সা:) হযরত সালমান ফারসি (রা:)-কে বললেন, “হে সালমান! আলীর ব্যাপারে তুমি আশ্চর্য হয়ো না। কারণ আলাহ্ পাক নিজের সব গুন দিয়ে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। এবং আলীই সেই ব্যক্তি যিনি খোদার আদেশে নবী ও তাঁর বন্ধুদের বিপদের সময় সাহায্য করেছেন। তুমি আলীকে বোঝার চেষ্টা করলেও বুঝতে পারবে না। এর কারণ হল আলীর মধ্যে আমার নূরের অর্ধেক নূর আছে। আল্লাহ্‌ তাঁকে নিজের নিয়ামত (অনুগ্রহ) দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে নিজের স্বর্গীয় শক্তিতে পরিণত করেছেন। অতএব হে সালমান! আলীর ব্যাপারে তুমি আশ্চর্য হয়ো না। কারণ, তিনি আল্লাহ্‌র সৃষ্টির এমন এক রহস্য যাকে তুমি সহজে অনুধাবন করতে পারবে না। (সূত্র: হুদাল্লিল আলামিন, পৃষ্ঠা: ৯৪০-৯৪৪; গ্রন্থস্বত্ব: সঠিক পথের সন্ধানে, পৃষ্ঠা: ৮৪, জনাব ইনাম মহম্মদ, কোলকাতা-৭, ভারত)। কথিত আছে মহানবী (সা) আলী (আ) সম্পর্কে আরও বলেছেন, আল্লাহকে ভালভাবে চেনেন শুধু আমি আর আলী। আর আলীকেও পুরোপুরি চেনেন শুধু আল্লাহ আর আমি। 

হযরত আলীর (আ) নেতৃত্বে মুসলমানরা মদিনার পাশে বাতুল আখদাল নামক যুদ্ধ জয় করার পর মুসলিম সেনারা যখন মদিনায় ফিরে আসছিল তখনই  সুরা আদিয়াত নাজিল হয়। মহানবী (সা) এই বিজয়ের খবর শুনে প্রফুল্ল চিত্তে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বেরিয়ে আসেন। রাসুল (সা)-কে দেখামাত্র আলী (আ) ঘোড়া থেকে নেমে পড়েন। এ সময় মহানবী (সা) বললেন, ‘হে আলী! যদি আমার ওপর উম্মতের বিপথগামিতার আশঙ্কা না থাকত তবে তোমার সম্পর্কে আমি সেই কথা বলতাম যার পর মানুষ তোমার পদধূলিকে রোগ-মুক্তির জন্য নিয়ে যেত।’ মহানবী (সা) আরও বলেছেন, আমার পরে সাহাবিদের মধ্যে কেবল আলীই কুরআনের মর্যাদা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করবে। 

রাসুলে পাক (সা:)'র স্ত্রী আয়শা বিনতে আবুবকর হযরত আলী (আঃ)'র শাহাদতের খবর শুনে বলেছিলেন, "হে রাসুল ! তোমার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র শাহাদত বরণ করেছেন। আজ এমন এক ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন যিনি ছিলেন রাসুল  (সা:)'র পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।

ওয়াশিংটন আরভিং বলেছেন, "সব ধরনের নীচতা ও কৃত্রিমতা বা মিথ্যার বিরুদ্ধে আলী (আ.)'র ছিল মহত সমালোচনা এবং আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রীক সব ধরনের কূটচাল থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।"ঐতিহাসিক মাসুদির মতে, রাসুল  (সা.)'র চরিত্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল যার ছিল তিনি হলেন আলী (আ.)। 

শাহাদত-প্রেমিক আলী(আ.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তাঁর সঙ্গীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সবাই কাঁদছে, চারিদিকে ক্রন্দনের শব্দ, কিন্তু আলী (আ.)-এর মুখ হাস্যোজ্জ্বল। তিনি বলছেন,“আল্লাহর শপথ! আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম কি হতে পারে যে, ইবাদতরত অবস্থায় শহীদ হব?”

ঘাতকের প্রাণঘাতী আঘাতে ধরাশায়ী আমিরুল মু'মিনিন এ ঘটনা নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি বা অবিচার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন,“আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানেরা তোমরা এমন যেন না কর, যখন আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নেব তখন মানুষের উপর হামলা করবে এ অজুহাতে যে, আমীরুল মু'মিনীনকে শহীদ করা হয়েছে। অমুকের এটার পেছনে হাত ছিল, অমুক এ কাজে উৎসাহিত করেছে। এসব  কথা বলে বেড়াবে না, বরং আমার হত্যাকারী হল এই ব্যক্তি।”

আলী (আ.) ইমাম হাসান (আ.)-কে বলেছিলেন,  “বাবা হাসান! আমার মৃত্যুর পর যদি চাও আমার হত্যাকারীকে মুক্তি দেবে তাহলে মুক্তি দিও, যদি চাও কিসাস গ্রহণ করবে তাহলে লক্ষ্য রাখবে, সে তোমার পিতাকে একটি আঘাত করেছে, তাকেও একটি আঘাত করবে। যদি তাতে মৃত্যুবরণ করে তো করল, নতুবা ছেড়ে দেবে।”তারপর আবার বন্দির চিন্তায় মগ্ন হলেন আলী (আ.)। বন্দিকে ঠিক মতো খেতে দিয়েছ তো? পানি দিয়েছ খেতে? ঠিক মতো দেখাশোনা কর ওর। কিছু দুধ তাঁর জন্য আনা হলে কিছুটা খেয়ে বললেন, বাকীটা বন্দিকে দাও।

 হযরত আলী (আঃ) নিজেকে সব সময় জনগণের সেবক বলে মনে করতেন এবং সব সময় অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। দ্বিতীয় খলিফা বলেছেন, আলী ইবনে আবি তালিবের মতো আরেকজনকে জন্ম দেয়ার ক্ষমতা নারীকূলের কারো নেই, আলী না থাকলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। 

জীরার ইবনে হামজা তাঁর প্রিয় নেতার গুণাবলী তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলেন, "আলীর ব্যক্তিত্ব ছিল সীমাহীন, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন দোর্দণ্ড, তাঁর বক্তব্য ছিল সিদ্ধান্তমূলক, তাঁর বিচার ছিল ন্যায়-ভিত্তিক, সব বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল, তাঁর প্রতিটি আচরণে প্রজ্ঞা প্রকাশিত হত। তিনি মোটা বা সাদামাটা খাদ্য পছন্দ করতেন এবং অল্প দামের পোশাক পছন্দ করতেন। আল্লাহর কসম, তিনি আমাদের একজন হিসেবে আমাদের মাঝে ছিলেন, আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন, আমাদের সকল অনুরোধ রক্ষা করতেন। তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সম্বোধন করে কিছু বলতে  ও প্রথমে কথা বলতে আমরা ভয় পেতাম না। তাঁর হাসিতে মুক্তা ছড়িয়ে পড়তো। তিনি ধার্মিকদের খুব সম্মান করতেন। অভাবগ্রস্তের প্রতি খুবই দয়ালু ছিলেন। এতিম, নিকট আত্মীয় ও অন্নহীনকে খাওয়াতেন। তিনি বস্ত্রহীনে বস্ত্র দিতেন ও অক্ষম ব্যক্তিকে সাহায্য করতেন। তিনি দুনিয়া ও এর চাকচিক্যকে ঘৃণা করতেন। আমি আলী ইবনে আবি তালিবকে গভীর রাতে বহুবার এ অবস্থায় মসজিদে দেখেছি যে তিনি নিজ দাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে এমনভাবে আর্তনাদ করতেন যেন সাপে কামড় খাওয়া মানুষ এবং শোকাহত লোকের মতো রোদন করে বলতেন, হে দুনিয়া, ওহে দুনিয়া, আমার কাছ থেকে দূর হও! আমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করো না!" 

হযরত আলী (আঃ)' বলেছেন,  'বাহ্যিক অলংকার ও পোশাক-পরিচ্ছদ সৌন্দর্য নয়, সৌন্দর্য হল-জ্ঞান ও সভ্যতা। যার পিতা-মাতা মারা গেছে সে এতীম নয়, প্রকৃত এতীম সে যার মধ্যে জ্ঞান ও বিবেক নেই।' তিনি আরও বলেছেন: প্রত্যেক বক্তব্য বা কথা যাতে আল্লাহর স্মরণ নেই তা হল অর্থহীনতা বা অন্তঃসারশূন্যতা, আর যে নীরবতার মধ্যে আল্লাহ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই তা হচ্ছে উদাসীনতা এবং যে চিন্তার মধ্যে আল্লাহর প্রতি দৃষ্টি নেই তা হচ্ছে অনর্থক সময় নষ্ট করা। 

মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ যিনি আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন এমন এক মহামানব।

 

 

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২০