জুন ১৬, ২০২১ ০০:০৬ Asia/Dhaka

শিশু ও কিশোরদের অন্যতম অধিকার হল তাদের ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। প্রত্যেক মানুষই চায় তার ব্যক্তিত্বের প্রতি অন্যরা যেন অশ্রদ্ধাশীল না হন। শিশু-কিশোররাও এর ব্যতিক্রম নয়।

ইসলাম শিশুর ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলে। অধিকার বিষয়ক পত্র শীর্ষক পুস্তিকায় ইমাম জাইনুল আবেদিন-আ. বলেছেন, 'শিশু-কিশোরদের অধিকার হল অন্যরা তাদের প্রতি দয়ার্দ্র থাকবে, তাদেরকে লালন-পালন করবে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেবে। এরই আলোকে তাদের ভুল-ক্রুটি এড়িয়ে যাওয়া ও গোপন করা, তাদের ব্যাপারে নমনীয় থাকা, তাদেরকে সহযোগিতা দেয়া সবার কর্তব্য। তাদের ভুলগুলো গোপন রাখা হলে তারা নিজ থেকেই অনুতপ্ত হবে। তাদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করা না হলে ও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তাদের বিকাশ বা উন্নয়ন হবে ধীর-গতির।'

শিশু ও কিশোরদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার অন্যতম সঠিক পদ্ধতি হল তাদের ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দেয়া। শিশুদের ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা করা হলে তাদের মন-মানসিকতা ভালো থাকবে এবং তাদের ব্যক্তিত্বের উন্নতি ঘটবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের সম্মান কর ও তাদেরকে বড় মনে কর বা গুরুত্ব দাও এবং শ্রদ্ধাসহকারে বা উত্তম পন্থায় তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দাও যাতে তারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। তিনি আরও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যারা মুসলিম শিশু-কিশোরকে স্নেহ করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না তারা মুসলিম সমাজের তথা আমাদের কেউ নয়।  

শিশুদের শ্রদ্ধা করা হলে তাদের স্বাধীন মনোবৃত্তি ও আত্মবিশ্বাস জোরদার হবে এবং এর ফলে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটা সহজ হবে। শিশুদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো ও তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার অনুভূতি জোরদারের জন্যই তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শিশুদের স্নেহ ও শ্রদ্ধা করা না হলে তারা মনমরা হয়ে থাকবে। তারা যখন দেখবে যে তাদের ব্যক্তিত্বকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হচ্ছে না বা খুব কমই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তখন তাদের মধ্যে হীনমন্যতাবোধ দেখা দিবে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যাবে। মহানবী (সা) বলেছেন, 'তোমরা শিশুদের স্নেহ করবে এবং তাদের দয়া করবে। মহান আল্লাহ শিশুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাদের সঙ্গে রাগ করে কথা বলার কারণে যত বেশি ক্ষুব্ধ হন অন্য কোনো কারণে এত ক্ষুব্ধ হন না।'

শিশুকে শ্রদ্ধা করা হলে সে বুঝতে পারে যে এই সমাজে ও সংসারে তার উপস্থিতি এবং ভূমিকার এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ফলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। গুরুত্ব দেয়া ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বিষয়টিও তখন তারা বুঝতে শিখবে। তারা শিখতে পারবে কিভাবে কাউকে গুরুত্ব দিতে হয় বা কোনো বিষয়কে কিভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। তারা তখন এটাও শিখবে যে কেউ যদি কারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে তার কথা ও মতামতও গুরুত্বপূর্ণ এবং তাই তাকেও সম্মান করতে হবে। 

শিশু-কিশোরদের শ্রদ্ধা করা হলে তারাও শ্রদ্ধা করার পদ্ধতি জানতে পারে ও অন্যদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণ করার কৌশল শিখতে পারে। মহানবী শিশুদেরও সালাম করতেন যাতে তারা একদিকে এ বিষয়টি শেখে এবং অন্যদের ও বিশেষ করে বড়দেরও শ্রদ্ধা করার কথা মনে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব সন্তান পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব পায় তারা খুব কমই মাদক-দ্রব্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং খুব কমই হতাশার শিকার হয়। খুব সহজেই শিশুদের বোঝানো যায় যে তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ও তাকে শ্রদ্ধা করা হচ্ছে। ফলে শিশুও অন্যদের শ্রদ্ধা করতে ও গুরুত্ব দিতে শেখে এবং একদিন ওই শিশুও নিজ সন্তানকে গুরুত্ব দিতে শিখবে।  

ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুদেরকে গুরুত্ব দেয়ার ও শ্রদ্ধা করার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক হল তাদেরকে সুন্দরভাবে সম্বোধন করা, তাদেরকে সালাম দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে অসম্ভব বা অযৌক্তিক কিছু প্রত্যাশা না করা, তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হলে তা পূরণ করা ও তাদের ভুল-ত্রুটির সন্ধান না করা। 

একবার মহানবী (সা) জোহরের নামাজের জামাআতে ইমামতি করছিলেন। দেখা গেল যে তিনি শেষের দুই রাকাত খুব দ্রুত আদায় করলেন ও দ্রুততার খাতিরে মুস্তাহাবগুলো বাদ দিলেন। নামাজ শেষে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন: তোমরা কি শিশুর কান্না ও তার সাহায্য প্রার্থনা শোনোনি? মহানবী শিশুকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কখনও নামাজের সিজদাহ দীর্ঘও করেছেন। এভাবে তিনি এটা শিখিয়ে গেছেন যে শিশুর ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে। মহানবী (সা) নিজ পরিবারের ও অন্য সবার শিশুকেই গুরুত্ব দিতেন ও তাদের স্নেহ করতেন।

ইমাম খোমেনী (র) তার সন্তানদের সঙ্গে খুব দয়ার্দ্র ও সম্মানজনক আচরণ করতেন। কখনও কখনও তিনি তাদেরকে কিছু না বলেই নিজেই তাদের জন্য চা বানিয়ে আনতেন।

আসলে খুব সহজেই শিশুদের শ্রদ্ধা করা যায়। শিশুদের আদেশবাচক সুরে কিছু না বলে বরং 'দয়া করে ও অনুগ্রহ করে এ কাজটি কর বা করবে বলা উচিত'। ফলে শিশু শ্রদ্ধভরে কথা বলবে বড়দের সঙ্গে। শিশুর জন্য পোশাক কিনতে গিয়ে তাকে ভালো পোশাকগুলোর বৈশিষ্ট সম্পর্কে ধারণা দেয়া উচিত এবং এরপর তার জন্য বেশ কয়েকটি পছন্দের সুযোগ রাখা উচিত।  শিশুর স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। শিশু যদি তার চুলে হাত দেয়া পছন্দ না করে তাহলে তা না করাই উচিত এবং এক্ষেত্রে চুলকে পরিপাটি রাখার কাজ তার নিজের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিত। শিশুদের খুব ঘন ঘন নানা ধরনের আদেশ দেয়া ঠিক নয়। এতে শিশু অপমান বোধ করতে পারে ও অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে। কোনো বিশেষ কাজ কোনো বিশেষ সময়ে করতে হবে তা বলে দিলে তা হবে শিশুর জন্য সম্মানজনক।

শিশুকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করাটাও ভুল। বরং তাকে বলতে হবে যে তোমাকে আগের চেয়ে ভালো হতে হবে। এ ধরনের তুলনা তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে ও তার মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেতনা গড়ে তুলবে।  শিশুরা কোনো ভুল কিছু করে ফেললে সে জন্য তাদেরকে জামার কলার ধরে টান দেয়া বা চুলে টান দেয়া তথা তিরস্কার করা উচিত নয়। বরং খুব মোলায়েমভাবে তার ভুলটা তুলে ধরে ভবিষ্যতে এমন ভুল যেন না করে সে বিষয়ে তাকে যত্নশীল হতে বলবেন।  বিশেষ করে শিশুর ভুল কাজের জন্য তাকে সবার সামনে তিরস্কার করবেন না। তাকে এমনভাবে সতর্ক করতে হবে যাতে সে অপমান বোধ না করে। তাই সতর্ক করতে হবে ঘরোয়া পরিবেশে।  শিশুরা কোনো ভালো কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। ফলে সে এমন ভালো কাজ আরও করতে আগ্রহী হবে।# 

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ