জুন ১৭, ২০২১ ১৮:১১ Asia/Dhaka

আজ আপনাদের নিয়ে যাবো শিরাজ শহর থেকে একটু দূরে এক ঐতিহাসিক স্থানে । যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়।

যেই স্থাপত্যটি ইরানের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনটি হলো ইরানের তাখতে জামশিদ বা পার্স-পোলিস।পার্স-পোলিসকে ইরানিরা তাখতে জামশিদ নামেই বেশীরভাগ অভিহিত করে থাকে। এই পার্স-পোলিসের বর্ণনা দেওয়া বেশ কঠিন । এককথায় বলা যেতে পারে এ এক বিস্ময়।যাই হোক আমরা বরং সরাসরি পা বাড়াই তাখতে জামশিদের দিকে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। হাখামানেশীয় সম্রাট দারিয়ূস, জেরাক্সেস বা খাশাইয়ারশাহ এবং তাদের যোগ্য উত্তরসূরীরাই এই বিখ্যাত স্থাপত্যটি নির্মাণ করেন। সে সময় এটি ছিলো হাখামেনিশীয়দের রাজ-সিংহাসন। এটি কয়েকটি কারণে বিস্ময়কর। প্রথমত এর আয়তন বিশাল। দ্বিতীয়ত পার্সপোলিসের যে স্থাপত্য কাঠামো তা অসাধারণ। পার্স-পোলিসের আয়তন একলক্ষ পঁচিশ হাজার বর্গমিটার। এছাড়াও এর ভেতরে রয়েছে দেখার মতো শত শত বিষয়। পার্সপোলিস অর্থাৎ হাখামানেশীয় সম্রাটদের রাজপ্রাসাদটি কুহ-ই রহমত বা দয়ার পাহাড় নামের পর্বতমালার সুউচ্চ চূড়ার পাদদেশে মারভদাস্ত সমভূমির প্রান্ত সীমায় অবস্থিত। চূড়ার সমতল ভূমি থেকেও দশমিটার উঁচুতে প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিলো । এখন অবশ্য প্রাসাদটির তৎকালীন অস্তিত্ব নেই।

তবে তার ধবংসাবশেষ ইরানের প্রাচীন গৌরব ও ঐতিহ্যের কথা ঘোষণা করছে। পার্সপোলিসের হল এবং প্রাসাদগুলো তেত্রিশ খিলানের উপর স্থাপিত এবং ভূমি থেকে এগুলোর উচ্চতা চল্লিশ ফুট । গাড়ী পার্ক করার জন্যে নির্দিষ্ট যে স্থানটি রাখা হয়েছে, সেখান থেকে আপনি যখন যেতে থাকবেন মূল প্রাসাদের দিকে, তখন এর ল্যান্ডস্কেইপ দেখে প্রাসাদটির মূল আকৃতি কেমন ছিলো সে ব্যাপারে একটা ধারণা করা যায়। তবে সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে যতোই আপনি প্রাসাদের ভেতরে যাবার পথে পা বাড়াবেন, ততোই দেখতে পাবেন অপার বিস্ময়কর স্থাপত্যের নিদর্শন, যা এর আগে হয়তো না-ও দেখে থাকতে পারেন।

পার্সপোলিসের কথা বলছিলাম। কমপ্লেক্সে ঢোকার পথে প্রথমেই নজরে পড়বে জেরাক্সেস বা খাশাইয়ারশাহ গেইট। এই গেইটটিকে গেইট অব অল নেইশন বা সর্বজাতিক তোরণও বলা হয় । তোরণের দেয়ালে খোদাই করা কিছু লেখা দেখতে পাবেন। তিনটি ভাষায় এগুলো লেখা হয়েছে। এইসব শিলালিপীতে যা লেখা হয়েছে তা হলো-দর্শনার্থী এবং ভ্রমণকারীদের প্রতি ভদ্রোচিত ও সদয় আচরণ করুন , এবং অপরাপর সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করুন। বিশ্বজনীন এই সৌজন্যবাণীই প্রমাণ করে যে, এখানকার কর্তৃপক্ষ কতোটা অতিথিপরায়ন, বিনম্র ও উদার মানসিকতার অধিকারী ।

সিঁড়ি বেয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পর আপনার নজরে পড়বে সামান্য উপরেই আরেকটি প্ল্যাটফর্ম। এই দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মেই 'আপাদানা' প্রাসাদটি অবস্থিত। এই প্রাসাদই ছিলো রাজ-অভ্যর্থনা কক্ষ। সেই আড়াইহাজার বছর আগে কতো নিপুণভাবে, কতো শৈল্পিকভাবে এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছে, ভাবতেও অবাক লাগে। যেদিকেই আপনি তাকাবেন, ভাবনার এক গহীন অতলে হারিয়ে যাবেন। এই পার্সপোলিস কেবল পুরাতাত্ত্বিক বা ইতিহাসবিদদেরই গবেষণার বিষয় নয়, স্থপতিদের গবেষণার জন্যও বিস্ময়কর এক অনন্য স্থাপনা এটি। আর সেজন্যই দেশি-বিদেশি পর্যটক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, স্থপতি এবং পুরাতাত্ত্বিকদের আগমনে সর্বদাই জমজমাট থাকে এই পার্সপোলিস।

পার্সপোলিস ঘুরে ফিরে দেখলে খুব সহজেই জুরাথ্রুস্ট ধর্মের কিছু প্রতীক আবিষ্কার করা যায়। যেমন আপনি এখানে দেখতে পাবেন জুরাথ্রুস্ট ধর্ম তথা অগ্নি উপাসকদের ঈশ্বর আহুরামাযদার প্রতীকী ভাস্কর্য । এই প্রতীকটি প্রাসাদের বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়াও এমন আরো কয়েকটি প্রতীক এখানে আবিষ্কৃত হবে, যেগুলো জুরাথ্রুস্টদের কাছে ধর্মীয় কারণে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। এসব প্রতীকের আবার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে। যেমন সিংহ হলো আগুনের প্রতীক। ষাঁড় হলো পৃথিবীর প্রতীক। পদ্মফুল হলো পানির প্রতীক এবং ঈগল হলো বায়ুর প্রতীক। মজার ব্যাপার হলো পার্সপোলিসের অভ্যন্তরে চমৎকার একটি ভাস্কর্য সবার নজরে পড়বে। ভাস্কর্যটি প্রতীকী। একটি সিংহ আক্রমণ করছে একটি ষাঁড়কে। এই ভাস্কর্যটি হলো ইরানের নববর্ষ বা নওরোজের প্রতীক।

আপাদানা প্রাসাদের সিঁড়ির দেয়ালে খোদাই করা তেইশটি মানবমূর্তি দেখতে পাওয়া যাবে। তেইশজনেরই পোশাক-পরিচ্ছদ স্বতন্ত্র। সবার হাতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র। এগুলো হলো হাখামেনীয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত তেইশটি দেশের প্রতিনিধিবর্গের প্রতীকীচিত্র। কোন দেশে কীরকম পোশাকের প্রচলন রয়েছে এবং কারা কী ধরণের অস্ত্র বহন করে , সেগুলো একনজরে বোঝানোর জন্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। এদের সবার কাছেই কিছু না কিছু উপঢৌকন রয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে , তখনকার দিনে সম্রাটের মনস্তুষ্টির জন্যে বিভিন্ন দেশের শাসকরা কে কী ধরণের নজরানা পেশ করতেন। পার্সপোলিস থেকে আনুমানিক ছয় কিলোমিটার উত্তরে নাকশে রুস্তাম অবস্থিত। নাকশে রুস্তাম হলো দারিয়ূস, জারেক্সেস বা খাশাইয়ারশাহ প্রথম ও দ্বিতীয়, আর্থাজারেক্সেসের সমাধিস্থল।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ