আগস্ট ২৮, ২০২১ ১৮:২২ Asia/Dhaka

ইরানের রাজধানী শহর তেহরান থেকে শিরাজের দূরত্ব হলো ৯৩৫ কিলোমিটার । শিরাজের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো ।

যে কোনো শহর থেকেই সড়কপথ, আকাশপথ কিংবা রেলপথ ধরে যাওয়া যায়। শিরাজ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় শহর । প্রায় বারো লক্ষ লোকের বসতি এখন এই শহরে । হাখামানেশিয় রাজবংশের শাসনামলে এই শহরটি গড়ে ওঠে এবং শাসানীয় শাসনামলে শিরাজ ফার্স প্রদেশের প্রধান শহরে পরিণত হয় । তবে মোগল আক্রমণে শিরাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তারপরেও অতি দ্রুতই শহরটি পুনরায় গড়ে ওঠে এবং চিত্রকলা, স্থাপত্যকলা, ক্যালিগ্রাফি ও শিল্প- সাহিত্যের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয় । সাফাভী যুগে ইস্পাহান রাজধানী শহরে পরিণত হলে শিরাজ প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে থেকে যায়। আজ আমরা শিরাজ প্রদেশ সফরের পরিসমাপ্তি টানবো। পরবর্তী আসর থেকে অন্য কোনো প্রদেশ ভ্রমণে যাবো ইনশাআল্লাহ।

শিরাজ সফর শেষ করার পথে যে স্থাপত্যটি ইরানের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় সেটির প্রতি সংক্ষিপ্ত নজর বুলানো যাক। সেই প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনটি হলো ইরানের তাখতে জামশিদ বা পার্স-পোলিস। এই পার্স-পোলিস এককথায় বলা যেতে পারে এক বিস্ময়। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। হাখামেনীয় সম্রাট দারিয়ূস, জেরাক্সেস বা খাশাইয়ারশাহ এবং তাদের যোগ্য উত্তরসূরীরাই এই বিখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শনটি নির্মাণ করেন । সে সময় এটি ছিলো হাখামেনিশীয়দের রাজ-সিংহাসন। এটি কয়েকটি কারণে বিস্ময়কর। প্রথমত এর আয়তন বিশাল । দ্বিতীয়ত পার্সপোলিসের যে স্থাপত্য কাঠামো তা অসাধারণ। পার্স - পোলিসের আয়তন একলক্ষ পঁচিশ হাজার বর্গমিটার। এছাড়াও এর ভেতরে রয়েছে দেখার মতো শত শত বিষয়।

পার্সপোলিস অর্থাৎ হাখামেনীয় সম্রাটদের রাজপ্রাসাদটি কুহ-ই রহমত বা দয়ার পাহাড় নামের পর্বতমালার সুউচ্চ চূড়ার পাদদেশে মারভদাস্ত সমভূমির প্রান্ত সীমায় অবস্থিত। চূড়ার সমতল ভূমি থেকেও দশমিটার উঁচুতে প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিলো । এখন অবশ্য প্রাসাদটির তৎকালীন অস্তিত্ব নেই । তবে তার ধ্বংসাবশেষ ইরানের প্রাচীন গৌরব ও ঐতিহ্যের কথা ঘোষণা করছে । পার্সপোলিসের হল এবং প্রাসাদগুলো তেত্রিশ খিলানের উপর স্থাপিত এবং ভূমি থেকে এগুলোর উচ্চতা চল্লিশ ফুট । গাড়ী পার্ক করার জন্যে নির্দিষ্ট যে স্থানটি রাখা হয়েছে , সেখান থেকে আপনি যখন যেতে থাকবেন মূল প্রাসাদের দিকে , তখন এর ল্যান্ডস্কেপ দেখে প্রাসাদটির মূল আকৃতি কেমন ছিলো সে ব্যাপারে একটা ধারণা করতে পারবেন ।

কবি সাদি ও তাঁর মাজার

শিরাজ কবির শহর, শিরাজ হাফিজের শহর, সাদি'র শহর। সেজন্যেই শিরাজ হয়ে উঠেছে শিল্প আর সংস্কৃতির শহর। মরানদীর উত্তর তীরে এই কবি শুয়ে আছেন প্রেমের মৌচাক খুলে রেখে। আর ভক্ত মৌমাছির দল প্রতিদিন প্রেমের টানে এখানে এসে হাজির হয় । হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায় এক অলৌকিক সুধারসে। কেবল কবি - সাহিত্যিকই নন, আধ্যাত্মিকতার আলোয় যারা পথ চলতে চায়, তারাও এখানে এসে ভিড় জমায়। সোলার পাওয়ারের মতো এক অলৌকিক আলোয় সমৃদ্ধ হয়ে ভক্তরা পাড়ি দেয় নিজস্ব গন্তব্যে। বাস্তববাদীদের কাছে এ এক হাস্যকর ব্যাপার হয়তোবা। কিন্তু অন্তরবাদী অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদীদের কাছে এ হলো জীবনের চূড়ান্ত সত্য। যাই হোক, কবি হাফিজের সমাধিস্তম্ভটি শিরাজের কেন্দ্রীয় শহরের কাছেই অবস্থিত। এই সমাধিস্তম্ভটি তৈরি হয় ১৯৫৩ সালে।

শিরাজ শহরের উত্তর-পূর্বে কবি সাদির স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত । বর্তমান স্মৃতিস্তম্ভটি বানানো হয়েছে ১৯৫২ সালে । কবি হাফিজের মাযারের মতো সাদির মাযারটিও চমৎকার একটা বাগানের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে । খুবই সাদামাটা করে তৈরি করা হয়েছে এই স্তম্ভটি। ইরাক এবং সিরিয়া সফরকালে ক্রুসেডদের হাতে বন্দী জীবনযাপন শেষে কবি সাদি শিরাজে ফিরে আসেন । শিরাজে ফিরে এসেই তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যকর্মগুলো সৃষ্টি করেন। গুলেস্তান এবং বুস্তান তার শ্রেষ্ঠ কাব্যের অন্যতম । তাঁর এসব কাব্যে রয়েছে মানুষের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার অমূল্য বাণী। এই কাব্যগ্রন্থগুলো বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। আজো বিভিন্ন দেশের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসব গ্রন্থ পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত ।

দেখলে খুব সহজেই জুরাথ্রুস্ট ধর্মের কিছু প্রতীক আবিষ্কার করা যায়। যেমন আপনি এখানে দেখতে পাবেন জুরাথ্রুস্ট ধর্ম তথা অগ্নি উপাসকদের ঈশ্বর আহুরামাযদার প্রতীকী ভাস্কর্য ।এই প্রতীকটি প্রাসাদের বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়াও এমন আরো কয়েকটি প্রতীক এখানে আবিষ্কৃত হবে, যেগুলো জুরাথ্রুস্টদের কাছে ধর্মীয় কারণে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয় । এসব প্রতীকের আবার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে। যেমন সিংহ হলো আগুনের প্রতীক। ষাঁড় হলো পৃথিবীর প্রতীক। পদ্মফুল হলো পানির প্রতীক এবং ঈগল হলো বায়ুর প্রতীক। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ