বাংলাদেশে ৯ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৫, শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
(last modified Sat, 01 Oct 2022 12:43:20 GMT )
অক্টোবর ০১, ২০২২ ১৮:৪৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর প্রথম নয় মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৫ জন। এর মধ্যে অন্তত ১৪ জন শিশু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, তার ৩৩ শতাংশই শিশু। ৬৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। চলতি বছর নারী তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পুরুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের ৬০ শতাংশই পুরুষ।

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ৪ জন শিশু মারা গেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সংখ্যাটা ৭।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্নেষণ করে জানা গেছে, সারাদেশে ১৮টি এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের রোগী বেশি পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে মুগদা এলাকায়। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। আক্রান্তের ৪৭ শতাংশই রোগী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের। ৩৬ শতাংশ রোগী ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের এবং ১৭ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে।

মৃত্যুর তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৪৭ শতাংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। ৩৭ শতাংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এবং ১৫ শতাংশ ঢাকার বাইরে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে না আসা এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ডেঙ্গুতে শিশু বেশি মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া শিশুর ডেঙ্গুর উপসর্গ দেরিতে প্রকাশ পাচ্ছে। যখন উপসর্গ দেখা মিলছে, তখন অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে

স্বাস্থ্যের হিসাবে এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। তবে হাসপাতালের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৮২৯ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে মারা গেছে ৭ শিশু। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি আছে ৫৮ শিশু। যদিও হাসপাতালটির ডেঙ্গু সেলে বেড আছে ৫০টি। বাকি রোগীদের ডেঙ্গু সেলের বাইরে অন্য ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গু হলে দ্রুত সময়ে শিশুর অবস্থা জটিল রূপ নিচ্ছে। অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে আসছে না। যত দেরি হয়, তত ঝুঁকি বাড়ছে। তাই জ্বর হলেই পরীক্ষা করতে হবে। বমি, প্রচণ্ড পেট ও মাথাব্যথা- এসব উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আনতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের পরমর্শ  হচ্ছে, দিনের বেলা শিশুরা ঘুমালে মশারি টানাতে হবে, ফুলপ্যান্ট পরিয়ে রাখতে হবে। জ্বর এলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোথাও স্বচ্ছ পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।

এদিকে শিশু হাসপাতালের বাইরে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও শিশু রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডিসবাহী রোগ নির্ণয় কর্মসূচির ডিপিএম ডা. মো. ইকরামুল হক বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে ৬৪ জেলায় সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিঠি দিয়ে আলাদা ডেঙ্গুর ওয়ার্ড খোলার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৩৫ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা এ বছর একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তির ঘটনা।

আজ (শনিবার) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৩৫ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫১৮ এবং ঢাকার বাহিরে সারাদেশে ১১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বর্তমানে সারাদেশে সর্বমোট দুই হাজার ১৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৬৫৮ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৫০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৭৭ ভাগ রোগী রাজধানী ঢাকায় এবং বাকি ২৩ ভাগ ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।