বিশ্ব শ্রবণ দিবস: সকলের জন্য কান ও শুনানির যত্ন
শ্রবণজনিত সমস্যায় বাংলাদেশের প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের; শব্দের উচ্চমাত্রা নিয়ন্ত্রণ জরুরি
রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম প্রায় সব এলাকার শব্দ দূষণের অবস্থায়ই প্রায় এরকম। খানিক সময় থাকার পরে নিরিবিলি পরিবেশে গেলেও কানে বাজতে থাকে হর্ণের শব্দ তরঙ্গ। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-তে উল্লেখিত আদর্শমান অতিক্রম করেছে প্রায় সব জায়গাতেই। নগরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণভাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রায় ১ দশমিক ৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ হচ্ছে।
অতিরিক্ত শব্দে কানের ভেতরের বিশেষ এক ধরনের কোষ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে স্থায়ীভাবে শ্রবণের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় শব্দের যে মাত্রা তাতে অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘদিন রাজধানীতে বসবাস করলে ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে পারেন বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আজ ৩ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে ২০০৭ সালের এই দিনে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব শ্রবণ দিবস। প্রতিবছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি নতুন স্লোগান ঘোষণা করে। ২০২৩ সালের স্লোগান হলো ‘সকলের জন্য কান ও শুনানির যত্ন।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে আশঙ্কাজনকভাবে শব্দদূষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। সেখানকার তথ্য বলছে, ঢাকার মধ্যে শব্দদূষণ সবচেয়ে বেশি নিউ মার্কেট মোড়, নয়া পল্টন মোড় এবং প্রেসক্লাব মোড়ে। এসব জায়গায় শব্দদূষণের মাত্রা যথাক্রমে ১০০.৬৫ ডেসিবেল, ৯২.২২ ডেসিবেল এবং ৯০.০৩ ডেসিবেল। আর সবচেয়ে কম দূষণ ছিল আবুল হোটেল মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় এবং জিরো পয়েন্ট মোড়ে। সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা যথাক্রমে ৭৮.২৭ ডেসিবেল, ৭৭.৯২ ডেসিবেল এবং ৭৭.৬০ ডেসিবেল।

সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধিতে শব্দদূষণের মাত্রাও বাড়ছে। শহর এলাকায় শব্দদূষণের প্রভাব গ্রামাঞ্চল থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি। সাধারণ হর্নের সঙ্গে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় শব্দদূষণের মাত্রা বেড়েছে অনেক।
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, আইন ঠিকই আছে, কিছু অভিযানও চলছে। কিন্তু সে অভিযান পর্যাপ্ত নয়। শব্দদূষণ বন্ধ করতে হলে সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ একসঙ্গে নিতে হবে। আইন আছে, কিন্তু আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই। সব মিলিয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলেই তিনি মনে করেন।
শব্দদূষণ রোধ করতে হলে ঢাকা শহরকে হর্ণমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে দেশে বধিরের সংখ্যা বাড়বে, ঝুঁকিতে পড়বে আগামীর প্রজন্ম।
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার মানস রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও মাত্রার বধিরতায় ভুগছেন। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে চলে গেলে সেটিকে হেয়ারিং লস বলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, শব্দদূষণ সরাসরি বধিরতা সৃষ্টি করে, কানে শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। প্রথমে হয়তো দেখা যায়—কনসার্টের মতো জায়গায় গেলে সমস্যা দেখা দেয়, আবার বিশ্রাম দিলে ঠিক হয়ে যায়। উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে কয়েক বছর ধরে কাজ করলে তার মধ্যে বধিরতা দেখা দেয়।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৩