সারাদেশে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে: সিইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদের বর্জন, হরতাল, সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে জালভোট ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল ও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকের এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আজ (রোববার) সকাল ৮টা থেকে সারা দেশের ২৯৯টি নির্বাচনি এলাকায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, সারাদেশে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে।বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়মের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, খুলনায় ৩২ শতাংশ, সিলেটে ২২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৬ শতাংশ, রংপুরে ২৬ শতাংশ ও বরিশালে ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ শেখ হাসিনার
সকাল ৮টায় দিনের শুরুতে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করেছে। আমাদের নির্বাচনে এনে কোরবানি দিয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. ফয়সাল বিপ্লবের সর্মথকদের বিরুদ্ধে। নিহতের নাম জিল্লুর রহমান (৪০)। নিহতের স্ত্রী রেহেনা বেগম দাবি করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপ্লবের সমর্থক মিরকাদিম পৌরসভার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম শাহীন ও পৌর কাউন্সিলর মো. লিটনের নেতৃত্বে নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে, পটুয়াখালী-১ আসনের কচাবুনিয়া ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (লাঙ্গল)।
আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের কচাবুনিয়া এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিজের ব্যক্তিগত সহকারী সোহলসহ ৬ সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানান জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে প্রস্তুতি শুরু করে। একইসঙ্গে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা নেন প্রস্তুতি। পরে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। এরপর যাচাই-বাছাই হয় ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর। এই যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া অনেক প্রার্থী যান হাইকোর্টে। আবার হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে অনেকে দ্বারস্থ হন আপিল বিভাগে। সব মিলিয়ে আদলতের রায়ে অনেকে ফেরেন নির্বাচনি মাঠে। বিএনপির অবস্থান নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দুইদিনের হরতাল আহ্বান করেছে। আজ হরতালের দ্বিতীয় দিন।
আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোটকেন্দ্রে যায়নি: মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, দেশবাসী এ নির্বাচন বর্জন করেছে। কেন্দ্রে কোনো ভোটার যায়নি। ড. মঈন খান বলেন, ‘ভোটার শূন্য ভোটকেন্দ্রই প্রমাণ করেছে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে।’
২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘শুধু বিএনপিই শুধু নয়, আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোট দেয়নি।’#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৭