বাংলাদেশে সরকারি দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া, বেড়েছে পাচারের আশঙ্কা
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয়ের কথা থাকলেও তার চেয়ে অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। কুরবানিকৃত পশুর চামড়া বা বিক্রয়লব্ধ টাকা সমাজের গরীব-দুঃস্থ এবং এতিমখানায় দান করে হয় বলে তারাই মূলত চামড়ার এই নিম্ন মূল্যের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে।
মূলত স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী, ফড়িয়া বা মৌসুমী ক্রেতারা তৃণমূল পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করে তা বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকে।
এবার সরকার নির্ধারিত দাম উপেক্ষা করে তৃণমূল পর্যায় থেকে একটি বড় গরুর চামড়া ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় আর ছোট আকারের চামড়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় সংগ্রহ করছে ক্রেতারা। তবে, খাসি, ভেড়া বা বকরির চামড়া কিনতে প্রতিবারের মতো এবারও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম দেখা গেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট চামড়ার ৬০ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। যার মধ্যে গরুর চামড়া ৬৫ শতাংশ, মহিষের চামড়া ২ শতাংশ, খাসির চামড়া ৩২ শতাংশ এবং ভেড়ার চামড়া ১ শতাংশ।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী, এবারের কুরবানীর ঈদে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু কোরবানি হওয়ার কথা। যার মধ্যে রয়েছে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত ৩০ কোটি বর্গফুট চামড়ার মধ্যে গরুর চামড়া ৭০ লাখ পিস, ছাগল এক কোটি পিস এবং মহিষ ও ভেড়ার চামড়া ১৫ লাখ পিস। দেশে অভ্যন্তরীণ চামড়ার চাহিদা ২ দশমিক ৭৫ কোটি বর্গফুটের মতো। আর বাকিটা রফতানি হয়।
বর্তমানে চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় হচ্ছে ১১৬ কোটি মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া শিল্প থেকে আয় হয়েছিল ১৩৮ কোটি এক লাখ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

চামড়া পাচার
ট্যানারী মালিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি বছর কোরবানির পরপরই দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে কাঁচা অবস্থাতেই লবন মাখানো চামড়া পাচার যায়। ফলে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
এ প্রসঙ্গে রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল লতিফ খান রেডিও তেহরানকে বলেন, সরকার কর্তৃক চামড়ার মূল্য কমরেটে নির্ধারণ করে দেবার কারণে সীমান্তবর্তী জেলা থেকে তা মোকামে আসছে না। এসব চামড়া সীমান্ত পথে পাচার হয়ে যাবার আশংকা করছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, ট্যানারী মালিকরা তাদের পাওনা পরিশোধ না করার কারণে এবং কোনো রকম ঋণ সহায়তা না পাবার কারণে চামড়া ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন।
এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ চামড়া পাচার রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এ শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
কোরবানি পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইতোমধ্যেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সাভারে ট্যানারি পল্লী স্থানান্তরিত হওয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত ক্ষমতা আগের থেকে দুই-তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত কাঁচা চামড়া না পাওয়ায় রফতানি সম্ভাবনাকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না।’
পর্যাপ্ত চামড়া রফতানি করা গেলে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে আমাদের বৈদেশিক আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন শাহীন আহমেদ।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৩
খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন