বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্ত, বাড়ানোর দাবি
শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার একটি হচ্ছে শিক্ষা। তাই বরাবরই শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কোনো সরকারই বাজেটে তাদের দাবি আমলে নেয়নি।
ইউনেসকোর পরামর্শ হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হবে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে অবস্থা করছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মিলিয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৫.২ শতাংশ। খাতভিত্তিক বরাদ্দ হিসেবে এটি সর্বোচ্চ দেখানো হলেও শিক্ষা থেকে প্রযুক্তি আলাদা করা হলে শুধু শিক্ষায় এই বরাদ্দ দাঁড়ায় ১১.৬৮ শতাংশ।
জিডিপি’র হিসেবেও শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা মাত্র ২.২ শতাংশ। ফলে শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্পন্ন শিক্ষক দরকার। বিশেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক থেকেই গড়ে তোলা দরকার। এ জন্য শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে একইসঙ্গে এই বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।’
অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহম্মদ ইনসান আলী রেডিও তেহরানকে বলেন, শিক্ষার উন্নতি করতে হলে অবশ্যই শিক্ষকের যোগ্যতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সেজন্য তাদের বেতন ভাতাও বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশই ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে, আর এক-তৃতীয়াংশ হয় শিক্ষার উন্নয়নে। দেশে সত্যি সত্যি শিক্ষার উন্নয়ন চাইলে, বেতন-ভাতার চেয়ে শিক্ষা উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের একাংশ যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিতে। ১০ বছর বন্ধ থাকার পর সরকার নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এমপিওভুক্তির সাথে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষকের যোগ্যতা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদান অগ্রাধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ঘটা করেই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামোসহ নানা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু গত ৯ বছরে এর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় বাজেটেই এর পরিকল্পনা থাকতে হবে। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৮