গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস পরীক্ষার ‘জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
আজ (বৃহস্পতিবার) ওষুধ প্রশাসন থেকে চিঠি দিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তা জানানো হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের কিট পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) অথবা আইসিডিডিআর,বির যে কোন একটিতে পরীক্ষা করার কথা বলেছে।’
অধিদপ্তর ইতোমধ্যে বিএসএমএমইউর ভিসিকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে বলেও জানান ডা. জাফরুল্লাহ।
গণস্বাস্থ্যের করোনা কিট পরীক্ষা নিয়ে গত কয়েকদিনের বিতর্কের পর এটিকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি। জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘কিট পরীক্ষার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) ৫০ হাজার টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ইতোমধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএমআরসির একটি বড় কমিটি আছে। কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে এই আবেদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন। মৌখিকভাবে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আজকে অনলাইনে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, যেহেতু অনেক বড় কমিটি তাই সবাইকে অনলাইনে এক করতে পারেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানিয়েছে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।'

এর আগে গতকাল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্ট কিট নিয়ে সরকারি পর্যায়ে টানাপড়েনের মধ্যে এ কিটের কর্যকরিতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারেও (বিএমআরসি) নিকট কিট–সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও নমুনা জমা দেয়া হয়েছে।
'অনুমোদনের সুপারিশ পেলে কিট বিপণনের অনুমতি দেবে ঔষধ প্রশাসন'
ওদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে আজ জানিয়েছেন, বিএসএমএমইউ বা আইসিডিআির,বি এ কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার পর অনুমোদনের সুপারিশ করলে তাঁরা কিটটি বিপণনের অনুমতি দেবেন।

এর আগে নানা অজুহাত দেখিয়ে এ কিট গ্রহণ করতেই রাজী হয় নি সরকারের ঔষধ প্রশাসন। সরকারি এ সংস্থাটি তিনদিন আগে বলেছিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এরকম কিটের অনুমোদন দেয় নি বলে তারাও এ বিষয়ে কিছু করতে পারছে না।
তবে ঔষধ প্রশাসনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে গণস্বাস্থ্যকে কেন্দ্রের ইচ্ছাই জয়ী হয়েছে। ঔষধ প্রশাসনের পূর্বের পরামর্শ আনুযায়ী গণস্বাস্থ্যকে এখন কোন বেসরকারি কন্ট্র্যাক্ট রিসার্চ ফার্মের (সিআরও) দ্বারস্থ হতে হচ্ছে না।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ও গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিটের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান ডাক্তার জাফরুললাহ চৌধুরী। তাছাড়া, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে গণস্বাস্থ্যের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে তিনি জানান।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) গণস্বাস্থ্যের কাছে কিট চেয়েছে। রোববার সিডিসিকে ৮০০ কিট দেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

গত শনিবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা শনাক্তকরণ কিট সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিল। তবে ওই অনুষ্ঠানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি হাজির হন নি। পরে অনুমোদনের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে নিয়ম অনুযায়ী কন্ট্র্যাক্ট রিসার্চ ফার্মের (সিআরও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঔষধ প্রশাসনকে অভিযুক্ত করে বলেন, জনগণের নিকট কম মূল্যে করোনা শনাক্তকরণ কিটের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তারা অসহযোগিতা করছে। তিনি এটাও বলেছেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কাউকে ঘুষ দিয়ে তাদের কিটের অনুমোদন নেবেন না, তাতে কিট বাজারে আসুক বা না আসুক। এ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরকে দায়ী করেছে। আর বিষয়টি বিভিন্ন মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে।

গণস্বাস্থ্য কিট উদ্ভাবনকারী বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান ড. বিজন শীল জানান, তাদের এ বহনযোগ্য ছোট যন্ত্রটি দিয়ে এন্টিবডি ও এন্টিজেন– এ দুইটা ফেজ একত্রিত করে রোগ শনাক্ত করণে ১০০ ভাগ কার্যকর বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে প্রচলিত পিসিআর যন্ত্র দিয়ে রোগ শনাক্তকরণে দুই দিন সময় লাগে, সেখানে গনস্বাস্থ্যের কিট দিয়ে টেস্ট সম্পন্ন করতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগে।
ইতোপূর্বে সিঙ্গাপুরের গবেষণাগারে সফলভাবে সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবনকারী এ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী আশা করেন, তাদের এ উদ্ভাবনের মাধ্যম শুধু বাংলাদশ নয় বিশ্বের সকল দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/আবদুর রহমান খান/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।