ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' সরাসরি আসছে বাংলাদেশের দিকে, ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত
বঙ্গেপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ সরাসরি বাংলাদেশের দিকেই ধেয়ে আসছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠার আশঙ্কায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আজ (সোমবার) বিকেলে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে ২০ মে বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
এ অবস্থায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা,পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আম্পান মোকাবিলার প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের সময় যেন দুর্গতদের খাবারের অভাব না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থাও নিয়েছে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করব।”
স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করেছে জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, “গর্ভবর্তী নারী, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। এরপর অন্যদের নেওয়া হবে। ইফতারের পর থেকে পুরুষদের নেওয়া হবে। তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা হবে।”
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ আসায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ত্রাণ সচিব।
তিনি বলেন, একেকটি পরিবারের সদস্যরা যাতে একসাথে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
“উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারের পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখের মত মানুষকে রাখা যায়। এখন আমরা ওইসব এলাকার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আশ্রয়কেন্দ হিসেবে নেয়া হয়েছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে কোনো সমস্যা হবে না।”
ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের নির্দেশে সব জেলা ও উপজেলার প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম, জরুরি খাদ্য ও পানীয়’র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে মাঠে পেকে যাওয়া বোরো ধান যাতে ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়, সেজন্য দুর্যোগ শুরুর আগেই তা কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড় 'আম্ফান' আঘাত হানার আগেই পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকদের নির্দেশনা দিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। রোববার (১৭ মে) বিকেলে দুর্যোগ কমিটির এক সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।