বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের অভিযোগ: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল থেকে এ অভিযোগ উঠেছে যে, করোনা মহামারীর প্রকোপের মাঝে অত্যন্ত প্রকট হয়েছে স্বাস্থ্য সেবা খাতে গুরুতর ভগ্নদশা, দুর্নীতি, অনিয়ম আর নানা প্রতারণা।
প্রকট হয়ে উঠেছে জরুরি রোগীর সেবার সংকট, সেবার নামে চলছে গলাকাটা, ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে করা হচ্ছে প্রতারণা আর নকল ওষুধ দিয়ে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন করা হচ্ছে- এ যেন দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য। বাংলাদেশের বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরণের সমালোচনা শোনা যাচ্ছে।
সরকারি হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে, লাইসেন্স নিয়ে শুরু করা ১৭ হাজার ২০০ হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি বা মিঠু সিন্ডিকেটের মতো কেলেঙ্কারির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ার পর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির কালো বিড়ালও বেরিয়ে আসে। চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্র এমন নৈরাজ্যজনক অবস্থায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাড়ছে আতংক আর ক্ষোভ।
সামগ্রিক তদন্ত করা হোক
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস’ ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট- এর সভাপতি ডা.কাজী রকিবুল ইসলাম রেডিও তেহরানকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি আগেও ছিল কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে তা অত্যন্ত প্রকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সামান্য মলম দিয়ে দুর্নীতির রোগ সারানো যাবে না। দরকার একটি সামগ্রিক তদন্ত ও দায়ী নেপথ্যের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের অপসারণের দাবি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ‘ব্যর্থ’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। বাম গণতান্ত্রিক জোট বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ স্বাস্থ্যখাতে ভগ্ন দশার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জন্য আজ স্বাস্থ্যসেবা খাতের বেহাল দশা । তারা বারবার বলে আসছিল, করোনা মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু করোনা যখন সত্যিই এলো, দেখা গেল যে আসলে তাদের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না। করোনা মোকাবিলায় একের পর এক কমিটি হয়েছে, ৪৩টির ওপর কমিটি হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগেরই কোনো কার্যক্রম নেই। কোনো কোনো কমিটির এখন পর্যন্ত একটি বৈঠকও হয়নি।
এ সময় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় লুটপাটকারীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্বে পিপিই-মাস্ক দুর্নীতি হয়েছে। মিঠু বাহিনীর সঙ্গে মিলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, এদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি
স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অপসারণের দাবি জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।এই দাবিতে শনিবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র রাজু ভাস্কর চত্বরে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সরকার সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঘোষণা করেছে তাদের দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অপসারণ করা না হলে সারা দেশের সকল শহীদ মিনারের পাদদেশে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হবে।
এসময় বক্তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সরকারের সকল সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। তাই, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানায় তারা। সেই সাথে প্রতিটি জেলায়-উপজেলায়, বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা ও আইসিইউ স্থাপনের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
মদদদাতাদের ধরতে হবে: টিআইবি
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনাকালে গভীর সংকটে দেশের মানুষ। এ পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা আমাদের শঙ্কিত করে। যে কোনো দুর্নীতিই দেশের জন্য ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য খাতে এ পরিস্থিতি নতুন নয়। ক্ষমতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট করে ক্রয় খাতকে প্রভাবিত করে। নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হয়েছে স্বাস্থ্য খাত।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেছেন, রিজেন্ট, জেকেজির মূল হোতাদের পাশাপাশি এদের মদদদাতাদের ধরতে হবে। ছয় বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তি করে। এর মালিক পুলিশ প্রহরায় চলাফেরা করত। এখান থেকে তার ক্ষমতার বলয় আঁচ করা যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তা ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান তারা চালাতে পারত না। কান টানলে মাথা আসে- এই ফর্মুলা এখানে জরুরি। এদের যারা সুরক্ষা দিত সেই মদদদাতা রাঘববোয়ালদের ধরতে হবে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙবে। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/এসএ/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।