মাদকাসক্তির প্রামাণে ১০ পুলিশ চাকরিচ্যুত: স্বাগত জানিয়েছে এইচআরপিবি সভাপতি
যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানোর কথা সেই সরিষার ভেতরেই ভূত। অদ্ভুতভাবেই এ কথাটা মিলে গেছে মাদকের ডোপ টেষ্টে ৬৮ জন পুলিশ সদস্যদের অভিযুক্ত হবার মধ্য দিয়ে।
প্রায় তিন বছর আগে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান। আর সে অভিযান শুরুর প্রথম কয়েক মাসেই শতাধিক ব্যক্তিকে হত্য করা হয়েছে ‘কথিত’বন্দুক-যুদ্ধের নামে। ইতোমধ্যেই মাদকবিরোধী অভিযানে নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা,মাদকের বানোয়াট মামলায় হয়রানি,মাদকের মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়,মাদক সেবন ও মাদকের ব্যবসায় জড়িত হওয়া–এসব অভিযোগ উঠতে থাকে খোদ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে এবার নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর অংশ হিসেবে গত দুই মাস আগে ডিএমপি সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ শুরু হয়। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ‘ডোপ টেস্টে’ পজিটিভের সংখ্যা ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ১৮ জন। ইতোমধ্যে ১০ জন পুলিশ সদস্যকে চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়,মাদক বিক্রি,সেবন ও মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ উদ্ধার করা মাদক তুলনায় কম দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ডিএমপির আরো ২৯ জন সদস্য। অভিযুক্ত ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই সাতজন,সার্জেন্ট একজন, এএসআই পাঁচজন,নায়েক পাঁচজন ও কনস্টেবল ৫০ জন।
এছাড়া মাদকসংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগ,যেমন মাদক বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন ১০ জন পুলিশ সদস্য,মাদক সেবনে অভিযুক্ত পাঁচজন এবং উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমাণ কম দেখিয়ে অর্থগ্রহণে অভিযুক্ত হয়েছেন চারজন।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, যাদেরকে মাদক সংশ্লিষ্টতায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে,তাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করা হয়েছিল। মূলত যারা নিজেদের শোধরায়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হিউমান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন,পুলিশের সকল পর্যায়ের সব সদস্যকে নিয়মিত ডোপ টেষ্ট করা হলে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণাই সৃষ্টি হবে।
এ সময় তিনি আরো বলেন,মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যে-সব অনিয়ম ও অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে সে ব্যপারে শুধু বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলেই চলবে না। তাদের অপরাধের আইনানুগ বিচারও করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিষয়েও তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীতে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন,‘ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। এ উদ্যোগের ফলে অনেকে ভালো হয়েছে এবং এ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে।’
মূলত ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিসিস ডিভিশন-এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করছে। তিনি বলেন,সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে মাদকাসক্ত হিসেবে সন্দেহভাজনদের তালিকা করা হয়। এরপর সিআইডির ল্যাবে তাদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/২৩
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।