বাংলাদেশে হাজারে ৩০ নবজাতকের অকাল মৃত্যু, করণীয় সম্পর্কে মতামত
বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৩০ জন অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় অকাল জন্ম (প্রিম্যাচিওর বার্থ) এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) কারণে। আন্তর্জাতিক উদারাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
গতকাল আইসিডিডিআর,বি-তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান।
তিনি জানান, অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুর অকালজন্ম বা প্রিম্যাচিওর বার্থ (গর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে) এবং জন্মকালীন ওজন ২৫০ গ্রামের নিচে হওয়া।
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৪-এর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সাল পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুহারের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যে, বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এই হার ফের উর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে আসছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার আঞ্জুমান আরা ইসলাম রেডিও তেহরানকে বলেন, সাধারণতঃ ১৮ বছরের কম বয়স এবং ৪০ বছরের পরে গর্ভধারণ করলে শিশুর আগাম জন্ম বা কম ওজনের জন্ম হতে পারে। গর্ভকালে মাকে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তার বিশ্রাম, খাদ্য গ্রহণ- এসব ব্যাপারে যত্ন নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও পরামর্শ দেন যে, গর্ভাবস্থায়ই মাকে ভেবে রাখতে হবে যে, বাচ্চাকে জন্মের পর থেকে বুকের দুধ পান করাবেন। কম ওজন নিয়ে জন্ম হলেও মার বুকের দুধ পান করে অপুষ্ট শিশুই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ লাখ ৭৩ হাজার নবজাতক অপরিণত অবস্থায় এবং ৮ লাখ ৩৪ হাজার নবজাতক কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। প্রতি বছর অন্তত ১ লাখ ৯২ হাজার নবজাতকের জন্মকালীন ওজন হয় ২ কেজির নিচে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশে প্রতিবছর ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক এই দুইয়ের সম্মিলিত কারণে মৃত্যুবরণ করে, এদের মধ্যে ৭২ শতাংশ জন্মের প্রথম দিন পূর্ণ করার আগেই মৃত্যুবরণ করে।
এই ১৭ হাজার ১০০ নবজাতক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পরিবার কোন ধরণের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে না; আর অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মৃত্যু ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
এদিকে, কোভিড-১৯ এর মতো মহামারির সময়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে ক্যাঙ্গার মাদার কেয়ার (কেএমসি) পদ্ধতিতে নবজাতকের সেবা প্রদান করলে মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। তাই, নবজাতক মৃত্যু রোধে কেএমসিসহ অন্যান্য সেবা সহজলভ্য করার পাশাপাশি এর সুবিধা সম্পর্কে পরিবার ও কমিউনিটিকে অবহিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।