দূষিত বায়ুর দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষতম স্থানে: মানা হচ্ছে না নির্দেশনা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দিনের বেলায় বায়ু মানের কিছুটা উন্নতি হলেও রাত আটটার পর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই দূষিত বায়ুর দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষতম স্থানে থাকছে। গতকাল মঙ্গলবারও বিকেল পাঁচটা থেকে বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা ছিল বিশ্ব তালিকার এক নম্বর স্থানে।
বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব বলছে, দুই সপ্তাহ ধরে বায়ুদূষণের দিক থেকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বায়ুর মান থাকে অস্বাস্থ্যকর। বিকেল থেকে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর হতে থাকে, রাতে তা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। দিনের বেশির ভাগ সময় বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মান খারাপের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান থাকে শীর্ষ ৫ থেকে ১৫-এর মধ্যে। বিকেলের মধ্যে ঢাকা শীর্ষ তিনে চলে আসে। আর প্রায় প্রতি রাতেই দূষিত বায়ুর দিক থেকে ঢাকা শীর্ষতম স্থানে বা ১ নম্বরে চলে আসে।
এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান যখন ১ নম্বরে ছিল, তখন বায়ু মানের সূচক ছিল প্রায় ২০০, অর্থাৎ খুব খারাপ। ঢাকার পরে ছিল যথাক্রমে রাশিয়ার ক্রাসনয়াস্ক ও কলকাতা শহর।
আবহাওয়াবিদ ও বায়ুর মান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর আকাশ থেকে মেঘের দল সরে গেছে। ফলে মেঘে বাধা না পাওয়ায় রোদের তেজ বেড়ে যাচ্ছে। আর ওই তাপে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে তা শুষ্ক হয়ে উঠছে। জলীয়বাষ্প কম থাকায় দিনে বাতাসে দূষিত সূক্ষ্ম বস্তুকণা ভাসতে পারে না। ফলে দিনে বায়ুর মানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
তবে সন্ধ্যা নামতেই তাপমাত্রা কমে, বাতাসে জলীয়বাষ্প বাড়ে। আর তাতে রাজধানীর নির্মাণকাজের ধুলা, ইটভাটার ধোঁয়া আর শিল্পকারখানার দূষিত বায়ু থেকে সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২ দশমিক ৫ ও পিএম-১০ যোগ হয়। বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্পে তা ভেসে বেড়ানোর সুযোগ বেশি পায়।

এ প্রসঙ্গে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ‘বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ বা পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান রেডিও তেহরানকে বলেন, মূলত: ঢাকা এবং আশেপাশে ব্যাপক নির্মাণ কাজ চলার কারণে রাজধানীর বায়ু মানের অবনতি হচ্ছে। এতে বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এর আগে বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্ট কতিপয় নির্দেশনা দিলেও তা যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না বলে জানান এ সংক্রান্ত রিট দায়েরকারি আইনজীবী হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দিনে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ শহরের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। রাতে তা ২০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। ওই কম তাপমাত্রা বাতাসে দূষিত বস্তুকণাগুলো ভেসে থাকার জন্য অনুকূল হয়ে ওঠে। ভোরে থাকে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম ১৫ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসে। আর ওই সময় যানবাহন চলাচলের পরিমাণও বেড়ে যায়।
বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকগুলো ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে। সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এসে সেগুলো জড়ো হলেও তা শহরের বড় অংশ অতিক্রম করে আসে। ফলে পুরো শহরে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।