পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে ঢাকার নীলক্ষেতে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের চলমান পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেতে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসার পরপর রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে নিউমার্কেট থেকে আজিমপুরগামী সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আজ (বুধবার) একই স্থানে আবারও সমবেত হবার কর্মসূচি দিয়ে রাত দশটার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান ছেড়ে চলে যান।
ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকালে নীলক্ষেতে অবস্থান নিয়ে সেখানে সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, ঢাকা শহরের সাতটি মূল পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবাইকে দায়িত্ববান ও সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গতকাল বিকাল ৩টায় এ বিষয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট তিনজন ডিন বৈঠক করেন। সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএস মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে ওই বৈঠকে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজের পরীক্ষার স্থগিত করার ফলে চলমান পরীক্ষাগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। সাত কলেজে একাধিক বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। সামনে আরও কয়েকটি পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার আর সুযোগ থাকছে না।
পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজকের অবস্থান থেকে 'পরীক্ষা নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না', 'চলমান পরীক্ষা নিতে হবে নিতে হবে', 'সাত কলেজের পরীক্ষা নিতে হবে নিয়ে নাও', 'ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা নিতে হবে নিতে হবে', 'দাবি মোদের একটাই, মার্চে হল-ক্যাম্পাস খোলা চাই', প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এসময় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে সরকারি তিতুমীর কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের অনেকের পরীক্ষা চলমান। এই অবস্থায় হঠাৎ পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।’
ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী বলেন, ‘২০১৯ সালের পরীক্ষা এখনও রয়ে গেছে। আমরা এভাবে আর সেশনজটে আটকে থাকতে চাই না। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে।’
উল্লেখ্য, করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ আছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খোলা ও ২৪ মে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা দ্রুত সব কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও এখনো সমস্যাগুলো দূর হয়নি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কলেজগুলোর বড় সমস্যা হলো ঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেয়া এবং দেরীতে ফল প্রকাশ করা। এই সমস্যা নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।