সামনের দিনগুলোতে মহাবিপদের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের; গণপরিবহন চালু প্রশ্নে সেতুমন্ত্রীর ভিন্নমত
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হবে আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে। বিধিনিষেধ শিথিলের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত, দোকানপাট, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট খোলা থাকবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, এবং সভাসমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কীভাবে ছাত্রদের আগে ভ্যাকসিন দেয়া যায় তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গণপরিবহন চালুর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শতভাগ যাত্রী নিয়ে অর্ধেক গণপরিবহন চালু করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আলোচনা করে ঠিক করবে কীভাবে অর্ধেক গাড়ি রোটেশনে চলবে। তবে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে আগে আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে মহাসড়কের পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, করোনায় মৃত্যুহার খুব একটা কমেনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যত। এরমধ্যেও জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকাও সচল রাখতে হবে। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট বাড়ে। সব মিলিয়ে মাঝে মাঝে লকডাউনের বিরতি দিতে হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও কঠোর লকডাউন দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন চালুর পর সড়কে বিশৃঙ্খলতা এড়াতে বিআরটিএর বিভিন্ন টিম সড়কে কাজ করবে। গণপরিবহনে যত সিট তত যাত্রী কিনা এটা দেখা হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে কিনা সেটাও দেখা হবে। যে ভাড়া আগে কার্যকর, সে ভাড়ায় চলবে। বর্ধিত ভাড়ায় আর চলবে না।’
এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছেন, গত জুলাইয়ের শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। কারণ, কঠোর লকডাউন দিয়েও মানুষের আচরণে তেমন পরিবর্তন হয়নি। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানেনি, মাস্ক পরেনি। এ কারণে কঠোর বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। একটি আইসিইউ বেডের জন্য এখনই ৪০ জন গুরুতর করোনা রোগীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এমন অবস্থায় পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। অর্থনীতি সচল রাখার নামে লকডাউন শিথিল করায় আগামীতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, লকডাউন শিথিল হলেও সংক্রমণ রোধ করতে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। আর ব্যাপক হারে গণটিকা দিতে হবে।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন
মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাস থেকে ধাপে ধাপে খুলে দেয়া পরিকল্পনা করছে সরকার। এ পরিকল্পনায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যাল ও কলেজ থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়কে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে ।
এদিকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বেসরকারি স্কুল কলেজ ও কিন্ডারগার্টেন পরিচালক/ মালিকদের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সবকিছু খুলে দেয়া হয় তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় দেশের চার কোটি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে আরো অনিশ্চতয়তার মধ্যে পড়বে। এর আগে একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনও করেছে। কিন্ডারগার্টেন মালিকরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য একাধিকবার লিখিতভাবে এবং সংবাদ সম্মেলন করেও সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এর আগে একাধিকবার বলেছেন শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার পরই খুলে দেয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এখন টিকা দেয়া শুরু হয়েছে, সে কারণে চলমান ছুটির পর তাদেরকে আবাসিক হলে এবং ক্লাসেও ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হতে পারে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।