হতাশা কাটাতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে করোনাকালে যে কারণে তরুণদের মাঝে আত্মহত্যা বাড়ছে
বাংলাদেশে করোনাকালে তরুণদের মাঝে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যলয় পড়ুয়াদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। আর এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকগণ এবং মনোবিজ্ঞানীরা। করোনা বিধিনিষেধে ঘরে বসে অলস সময় কাটানো, পড়ালেখা শেষ করার অনিশ্চয়তা, টিউশনি বা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান থেকে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া, কর্মহীন হয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে পড়া, প্রেমে হতাশা- এ জাতীয় নানাবিধ কারণ থেকে বিষণ্নতা অনেক বেশি জেঁকে বসছে কিশোর-তরুণদের মনে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এক সপ্তাহে চারজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র (প্রাক্তন) মাসুদ আল মাহাদী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইমরুল কায়েস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তাহমিদুর রহমান জামিল।
চলতি বছরের জুলাই থেকে গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ জন।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৭ মাসে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে দু’শ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে ৫২ জন; কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ৩৮ জন; মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ জন। তবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে এ সংখ্যা ৯৮ জন। আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস বা অ্যাসাইনমেন্টের কাজে ল্যাপটপ, ট্যাব বা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে দিতে না পারায় পরিবারের ওপর অভিমান থেকে। তরুণদের মাঝে দু’একজন আবার মোটর সাইকেল বা শখের ক্যামেরা কেনার জন্য পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে না পাবার ক্ষোভ থেকে আত্মহত্য করেছে।

তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন। তাদের সম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, করোনাকালে মানসিক চাপ পড়েছে ৬৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর এরকম মানসিক চাপের ফলে আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। সংস্থাটির জরীপ অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা, যা কি না মোট আত্মহত্যাকারীর ৪৯শতাংশ। এরপরেই সবথেকে বেশি ৩৫ শতাংশ আত্মহত্যার শিকার হয়েছে ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু, কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ রেডিও তেহরানকে বলেছেন, করোনাকালে যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে সে হারে সমাজে সচেতনতা বাড়ছে না। আত্নহত্যা প্রবণতা রুখতে প্রয়োজন সঠিক কাউন্সেলিং। পরিবার, সমাজ এবং সরকারকেও এব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর মানসিক চাপ কাজ করছে। দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষণ্নতা ও মানসিক বিপর্যয়সহ নানান ছোটখাটো সমস্যায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। তারা মনে করেন, পরিবারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন, তরুণদের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টিসহ অনুকূল পরিবেশ গড়তে পারলে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।