বাংলাদেশে গরমে বছরে ২১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
https://parstoday.ir/bn/news/event-i152038-বাংলাদেশে_গরমে_বছরে_২১_হাজার_কোটি_টাকার_ক্ষতি
বাংলাদেশে তীব্র গরমের কারণে প্রতি বছর বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক দিক থেকেও এই ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। বিশ্বব্যাংকের এক নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান তাপজনিত অসুস্থতায় শুধু ২০২৪ সালেই প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে।
(last modified 2025-09-16T11:13:54+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ ১৬:৫২ Asia/Dhaka
  • গরমে বছরে  ক্ষতি ২১ হাজার কোটি  টাকা
    গরমে বছরে ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশে তীব্র গরমের কারণে প্রতি বছর বিপুল কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক দিক থেকেও এই ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। বিশ্বব্যাংকের এক নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান তাপজনিত অসুস্থতায় শুধু ২০২৪ সালেই প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে।

এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার যা জিডিপির প্রায় ০.৩ থেকে ০.৪ শতাংশ। টাকার অংকে এই ক্ষতির পরিমাণ ২১ হাজার কোটিরও বেশি।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর একটি হোটেলে 'অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ' শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তখন কর্মীদের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। গরম বেড়ে যাওয়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণাটিতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২৪ সালে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত দুই ধাপের একটি জরিপের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং 'অনুভূত তাপমাত্রা' (ফিলস লাইক টেম্পারেচার) ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং ক্লান্তির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, 'তীব্র গরম শুধু মৌসুমী সমস্যা নয়। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা বাংলাদেশে দেখছি, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা আমাদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে।'

তিনি বলেন, সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেন তিনি। বর্তমানে, উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকা, যেখানে তাপসূচক জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কাশি শীতকালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়। নারীরা তাপজনিত অসুস্থতায় বেশি ভোগেন। গরমের মাসগুলোতে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ বাড়ে, যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। তবে ৫০-৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে তাপজনিত সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

এসব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে আর্থিক ক্ষতি বেশি হয়। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, 'আমাদের বিশ্লেষণে গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা এবং উৎপাদনশীলতা কমার সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখা গেছে।'

ক্রমবর্ধমান গরমের ঝুঁকি থেকে জীবন-জীবিকা এবং অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বহু-খাতভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় প্রস্তুতি বাড়ানো এবং তাপজনিত অসুস্থতা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সজ্জিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া শহরাঞ্চলে সবুজায়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/জিএআর/১৬