বাংলাদেশের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে: গভর্নর
https://parstoday.ir/bn/news/event-i152522-বাংলাদেশের_ইস্ট_ইন্ডিয়া_কোম্পানিকে_শাস্তির_আওতায়_আনতে_হবে_গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির স্বার্থটা যখন এক হয়ে যায়, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো অনেক কোম্পানি তৈরি হয়। দেশে ইতিমধ্যে ১০-১৫টা ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
(last modified 2025-09-30T12:20:26+00:00 )
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫ ১৮:১১ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
    বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির স্বার্থটা যখন এক হয়ে যায়, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো অনেক কোম্পানি তৈরি হয়। দেশে ইতিমধ্যে ১০-১৫টা ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, শুধু সম্পদ জব্দ করাই যথেষ্ট না, এই সম্পদ উদ্ধার করে সরকারের খাতায় নিয়ে আসতে হবে।

আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট মাসের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান।

আশিকুর রহমান তাঁর বক্তৃতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্ম দিয়েছি। ওই সব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তলানির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও দক্ষতা যদি আমরা রক্ষা না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে আবারও নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জন্মগ্রহণ করতে পারে।’

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন তার বক্তব্যে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দ করা খুব বেশি ভালো কাজ নয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে হলে এ বিষয়ে খুব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘কোনো একজন কুলাঙ্গারের সম্পদ থেকে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা যদি স্বাধীন থাকেন, তাহলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কী কারণ আছে। কিন্তু এটা হচ্ছে এবং এটা ভালো ফল দেবে বলে মনে করি না। এতে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে।’ তিনি বলেন, আমি সরকারকে বলব, ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়টি খুব সীমিত রাখতে হবে। ওই যে ১০-১৫ জন কুলাঙ্গারের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।’

সম্প্রতি (বিগত সরকারের সময়) দেশে খুব বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের পথ অনুসন্ধান নিজেদের করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক পথে রয়েছে। তাই খুব সাহসের সঙ্গে নীতি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর আদায় বাড়ানো।

ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একমাত্র কাজ হলো নীতিনির্ধারণ করা। কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে তারা কেবল ঋণ দিতে উৎসাহিত করে। এই ঋণ দেওয়া ও পরিচালকদের নীতি গ্রহণ কার্যক্রম আলাদা করার সুপারিশ করেন তিনি।

অন্যরা যা বলেন

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলেও প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশার অনেক নিচে। মূল্যস্ফীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘কোনো দেশে অর্থ পাচার বন্ধ থাকে না। তবে আমাদের ব্যর্থতা হলো এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা। এখনো অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশ থেকে যে হাজার লোক বিদেশে পালিয়েছেন, সবাই তো বিদেশে আগে থেকে স্থায়ী আবাস গড়েন। ফলে তারা দেশ থেকে টাকা নিচ্ছেন।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, অর্থ পাচার রোধ ও অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যারা টাকা পাচার করছে, তারা আমাদের নাগরিক সমাজের অংশ। রাষ্ট্র কেন এটাকে বন্ধ করতে পারছে না, সেটি দৃঢ়ভাবে বলা দরকার।’#

পার্সটুডে/জিএআর/৩০