'অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী'
উত্তরাখণ্ডে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বিল পেশ, মুসলিমদের বিরোধিতা
হিন্দুত্ববাদী বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় বহুলালোচিত ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বিল পেশ করা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) বিজেপি বিধায়কদের ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানের মধ্যে বিলটি বিধানসভায় পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। গত রোববার এই বিলকে অনুমোদন দিয়েছিল ধামি মন্ত্রিসভা। এবার, বিধানসভায় বিলটি পাশ হলে, দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে’। গোয়ায় অবশ্য, পর্তুগিজ আমল থেকেই এই বিধি চালু রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। ক্ষমতায় ফেরার পরই রাজ্যে এই আইন চালু করার কথা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। আজ সংবিধানের একটি প্রতিলিপি হাতে নিয়ে তার সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেন, দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের নাগরিকদের সমান অধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে আজ বিধানসভায় ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ বিল পেশ করা হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে আমরা পরিচিত হবো। এটা রাজ্যের সকল মানুষের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি রিপোর্ট হাতে বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, আজ আমাদের অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে। উত্তরাখণ্ড থেকে দেশের নাগরিকদের সমান অধিকার দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে।২০২২ সালের ২৭ মে সুপ্রিম কোর্চের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। এই বিধি তৈরি এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায়, সে সব দিক খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল এই কমিটির। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি তাদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২৯ জানুয়ারি উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি।
জানা গেছে, বিয়ের সময় পুরুষের বয়স ২১ বছর এবং মহিলার বয়স ১৮ বছর হতে হবে। ধারা ৬-এর অধীনে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বিবাহের মেয়াদ এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন পুরুষ বা মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে যেতে পারবে না। বিবাহ যে ধর্মীয় রীতিতে করা হোক না কেন, বিবাহবিচ্ছেদ শুধুমাত্র বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হতে পারে। যেকোনো ব্যক্তি তখনই পুনরায় বিবাহ করার অধিকার পাবেন যখন আদালত বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রদান করবে এবং সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন অধিকার থাকবে না। আইনের পরিপন্থী বিয়ে করলে ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।জানা গেছে, জনজাতিদের মধ্যে অভিন্ন বিধি নিয়ে আপত্তি থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিলে জনজাতি এবং পাহাড়ের মূল নিবাসীদের অভিন্ন বিধির আওতায় আনা হয়নি। অর্থাৎ, তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রচলিত নিয়মেই বিয়ের বয়স, বিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণ এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে।
এদিকে, উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন উত্তর প্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির নেতা এসটি হাসান এমপি। তিনি আজ বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। তিনি বলেন, মুসলিমদের পক্ষে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানা সম্ভব নয়। তারা কোরানের উল্লেখিত নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য।সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডও। মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা খালিদ রাশিদ ফারাঙ্গি মাহালির বক্তব্য, ভারতে কোনও অভিন্ন বিধি থাকতে পারে না। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিধান আছে যা সেই গোষ্ঠী মেনে চলে।মাওলানা খালিদ রাশিদ ফারাঙ্গি মাহালি বলেন, ইউনিফর্ম সিভিল কোড মানে সকল আইনে অভিন্নতা আনা। এই বিল কী সব আইনে অভিন্নতা আনবে? যদি কোনো সম্প্রদায়কে এই বিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাহলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোথায় থাকবে? সকল মানুষেরই তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। এটি কীভাবে শেষ করা যায়? মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়াহ) প্রয়োগ আইন ১৯৩৭ ইতোমধ্যে দেশে কার্যকর রয়েছে। আমাদের হিন্দু ভাইদের জন্য ‘হিন্দু বিবাহ আইন’ বিদ্যমান রয়েছে। এসব আইন থাকার পরেও ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (অভিন্ন দেওয়ানি বিধি) কী দরকার? এই বিলের খসড়া আমাদের সামনে এলে আমাদের আইনি টিম সিদ্ধান্ত নেবে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন মাওলানা খালিদ রাশিদ ফারাঙ্গি মাহালি। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/০৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।