‘নবান্ন’ অভিযানে অংশ নেয়া বামফ্রন্ট কর্মী মইদুলের মৃত্যুতে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সচিবালয় ‘নাবান্ন’ অভিযান কর্মসূচিতে গিয়ে আহত মইদুল ইসলাম মিদ্যার (৩১) মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন বলে বাম-কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ। আজ (সোমবার) সকালে তিনি কোলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
মইদুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ (সোমবার) এবং আগামীকাল (মঙ্গলবার) রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ১০টি বাম ছাত্র-যুব সংগঠন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকা ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন মইদুল। সেসময়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে তাকে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র বলেন, ‘খুব বাজেভাবে পুলিশের লাঠির আঘাত লেগেছিল ওর মাথায়।বমিও হচ্ছিল। এরপরে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।’
ডিওয়াইএফআই কর্মীর মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, ‘যেকোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। সুজন চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলাম। ছেলেটির পরিবার যদি মনে করে তাহলে চাকরি দিতে তৈরি রাজ্য সরকার।’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মইদুলের মৃত্যুকে 'খুন' বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারকে ‘স্বৈরাচারী সরকার’ বলে সমালোচনা করেছেন বিধানসভার বিরোধীদলনেতা ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা আব্দুল মান্নান। বাম পরিষদীয় নেতা ও সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'এটা তো খুন! নবান্নের সাহস হল না ছাত্র-যুবদের কথা শোনার। তাঁদের উপরে বেধড়ক আক্রমণ করা হয়। গরীব মানুষকে নিয়ে লড়াই। জলজ্যান্ত ছেলেকে লাশ বানিয়ে দিল, আর কত লাশ চাই সরকারের? ক্ষমতা দেখিয়ে খুন করেছে।’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘মইদুল শহীদ হয়েছেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গণআন্দোলন দমন করতে গিয়ে যা দেখালো স্বৈরাচারী সরকার, ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। আরও অনেকেই আহত হয়েছেন, কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ছেলেটি কোনওরকম অরাজকতা করেনি, প্রশাসনের কারোর গায়ে হাত তোলেনি, কী উত্তর দেবে সরকার? নবান্ন অভিযানের অধিকার আছে সবার। কিন্তু এভাবে একজন নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে গেল, কে জবাব দেবে?’
ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বা এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ছাত্র-যুবদের পক্ষ থেকে আজ এবং কাল রাজ্যের সর্বত্র থানা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে।’ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তৃণমূলের রাজনীতি, এই সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের কাজকে বামপন্থি ছাত্র-যুবরা, গোটা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-যুবরা ঘৃণা করছি। আমরা এধরণের রাজনীতি ও নিষ্ঠুরতাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।’
১২ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়ার কোতুলপুরের চোরকলা গ্রামের বাসিন্দা মইদুল ইসলাম মিদ্দা (৩১) নবান্ন অভিযানে গুরুতর আহত হন। পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠির আঘাতেই তিনি আহত হন বলে বাম-কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ। আজ (সোমবার) ভোরে কোলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই যুব কর্মীর মৃত্যুতে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/ বাবুল আখতার/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।