ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও পিজিসিসির যৌথ বিবৃতি: তেহরানের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকা ও পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি ইরানের বিরুদ্ধে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি এ ব্যাপারে এক কঠোর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ ধরণের বিবৃতি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্য মার্কিন কূটকৌশলের অংশ মাত্র।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যত বাধাই আসুক ইরান তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতকি পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএর সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আমেরিকা ও পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি ইরানের বিরুদ্ধে এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানকে 'মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি', 'সন্ত্রাসবাদে সমর্থন', ‘মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে অস্ত্র ছড়িয়ে দেয়া' এবং 'পরমাণু অস্ত্রের উস্কানি' দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করে। বিবৃতিতে তারা আইএইএর সাথে ইরানের পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানায়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন তারা এমন সময় এ আহ্বান জানালো যখন আইএইএ বহুবার বলেছে তাদের তদন্ত কাজে ইরান পূর্ণ সহযোগিতা করছে। আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি স্বীকার করেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে এমন কোনো তথ্য নেই যা আমরা জানি না।
বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যাপক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আমেরিকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়াশিংটনের আরব মিত্ররাও ইরানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলছে। এমন সময় এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে যখন ইরান বহুবার বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। পাশ্চাত্য ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ তুললেও ইরান পরমাণু প্রযুক্তিকে বিদ্যুত উৎপাদন, চিকিৎসা, কৃষি কাজসহ অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে।
আমেরিকা ও পিজিসিসির যৌথ বিবৃতিতে এও দাবি করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নথি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়েছে যা বেসামরিক প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি এবং এটাই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তার কারণ। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ২০১৮ সালে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পর থেকে ইরান ধাপে ধাপে পরমাণু কর্মসূচি আবারো শুরু করে এবং তা আইএইএর তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ইরান আশা করেছিল ইউরোপ অন্তত তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ইরানকে অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে। কিন্তু তা হয়নি।
বিবৃতির আরেকটি দিক হচ্ছে, তারা ইরানকে এ অঞ্চলের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে এবং সন্তাসবাদকে সমর্থন ও অস্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ইরান প্রথম থেকেই এ অঞ্চলে আমেরিকা, ইসরাইল ও তাদের কিছু আরব দেশের সম্প্রসারণকামী ও আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা করে আসছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কানয়ানি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আমেরিকা কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করে, উগ্র আইএস সন্ত্রাসীদের সমর্থন দিয়ে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সহযোগিতা করে এবং ইয়েমেনে ধ্বংসযজ্ঞ বাধিয়ে সমগ্র এই অঞ্চলকে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।