'ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটছে মার্কিন সরকার ও তাদের অস্ত্র কারখানাগুলো'
ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতা যা বললেন!
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করার ওপর জোর দিয়ে এসেছে।
এ যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের অনুরোধের পর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান মস্কোয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে গত অক্টোবর মাসে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক সচিব মোহাম্মাদ জামশিদিও এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে পশ্চিম ইউরোপের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তির এক উদ্যোগ নিয়ে 'একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা' রাশিয়ায় নিয়ে গেছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের এতসব ইরানি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন কয়েকটি পশ্চিমা সরকার ও কিয়েভের পশ্চিমাপন্থী জেলেনস্কি সরকার তেহরানের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে যে ইরান রাশিয়াকে সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিপুল সংখ্যক ড্রোন দিয়েছে! এই দাবি প্রচার করে গত বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ইউক্রেন কিয়েভ থেকে ইরানি রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিতে এবং ইরানি দূতাবাসের কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে তেহরানের কাছে দাবি জানায়!
ইউক্রেন ও পশ্চিমা কোনো কোনো মহলের ওইসব প্রচারণার জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে তেহরান মস্কোকে কয়েকটি ড্রোন দিয়েছিল এবং ইউক্রেন যুদ্ধে ইরান কোনো পক্ষ অবলম্বন করছে না।রাশিয়া যে ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে তার প্রমাণ দেখানোরও দাবি জানিয়েছে ইরান। ইরান এ বিষয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেছে।
আসলে ইরান রাশিয়াকে ড্রোন বা সামরিক সাহায্য দিচ্ছে –এই ভিত্তিহীন দাবি তুলে পাশ্চাত্য আবারও ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি বা ইরানি অস্ত্র রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ ইসলামী এই দেশটির ওপর আবারও নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছে। এই ভিত্তিহীন অজুহাত তুলে এরিমধ্যে ইউরোপীয় জোট ও মার্কিন সরকার তেহরানের ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির অন্যতম শরিক ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিও ওই একই অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে জাতিসংঘকে এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলছে যে ইরান রাশিয়াকে (কথিত) ড্রোন দেয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবটি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা!
ইসলামী ইরান বার বার ড্রোন সাপ্লাইয়ের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলে আসছে যে এই প্রচারণা হচ্ছে ইরানের বিরুদ্ধে ভয় ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পিত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ যাতে তেহরানের ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া যায় এবং ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার পশ্চিমা উদ্যোগগুলোকে বৈধতা দেয়া যায়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীও গতকাল (২১ মার্চ) ফার্সি নববর্ষের প্রথম দিনে ইমাম রেজার পবিত্র মাজার প্রাঙ্গণে দেয়া এক ভাষণে সাম্রাজ্যবাদী ও দখলদার শক্তি বিরোধী আঞ্চলিক প্রতিরোধ-ফ্রন্টের প্রতি ইরানের সমর্থন দেয়া অব্যাহত থাকার কথা উল্লেখের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের অংশগ্রহণের দাবিকে মিথ্যাচার বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেছেন, 'আমরা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার দাবি সুস্পষ্টভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি এবং ওইসব দাবি কখনও সত্য নয়। ন্যাটো জোটকে আরও পূর্ব দিকে বিস্তারের লক্ষ্যে মার্কিন সরকারই ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়েছে এবং এখন যখন ইউক্রেনের জনগণ নানা দুরবস্থা ও সংকটের মধ্যে রয়েছে তখন এই যুদ্ধের সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটছে মার্কিন সরকার ও তাদের অস্ত্র কারখানাগুলো। আর এ কারণেই এ যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টাগুলোতে বাধা দিচ্ছে তারা।' #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।