ইসরায়েলি হামলায় শহীদ ইরানি বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরানচির জীবনের সোনালি ক'টি দিক
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i150704-ইসরায়েলি_হামলায়_শহীদ_ইরানি_বিজ্ঞানী_মোহাম্মাদ_মাহদি_তেহরানচির_জীবনের_সোনালি_ক'টি_দিক
পার্স-টুডে- পদার্থ-বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরানচি ছিলেন শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সেরা কৃতি অধ্যাপক।
(last modified 2025-07-29T13:25:45+00:00 )
জুলাই ২৬, ২০২৫ ২০:৪৪ Asia/Dhaka
  • শহীদ মোহাম্মাদ মাহদি তেহরানচি
    শহীদ মোহাম্মাদ মাহদি তেহরানচি

পার্স-টুডে- পদার্থ-বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরানচি ছিলেন শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সেরা কৃতি অধ্যাপক।

 
তিনি গত ১৩ জুন নিজ বাসভবনে ইসরাইলি হামলায় শহীদ হন।

এখানে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরছি:


জন্ম ও ব্যক্তিগত জীবন 


মোহাম্মদ মেহেদী তেহরানচি ১৯৬৫ সালের ৪ জুলাই তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। চার সন্তানের জনক এই বিজ্ঞানী ছিলেন ইসলামী শিক্ষা, দোয়া ও মহানবীর (সা) আহলে বাইতের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তাঁর কাছে দোয়া করা ও দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়টিকে তিনি ধর্মীয় দায়িত্ব বলে উল্লেখ করতেন। তিনি বলতেন, যে কোনো সাফল্য ও সংকট-মুক্তিকে খোদায়ি অনুগ্রহ তথা করুণা ও সহায়তা মোহাম্মদ মেহেদী তেহরানচি ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত হতেন।


শিক্ষাগত উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের সাথে স্থানীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয় সাধনের প্রচেষ্টা ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের অন্যতম স্থায়ী বৈশিষ্ট্য। 

ইবাদতরত শহীদ তেহরানচি 

 


শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জ্ঞানগত অবস্থান


তেহরানের কয়েকটি  স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি ইরানের শহীদ  বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৮৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সময় তিনি সমসাময়িক পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্ভাবনী শাখাগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত সলিড ম্যাটার বা ঘনবস্তুর অবস্থা সংক্রান্ত পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে এই কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চতর গবেষণার লক্ষ্যে তিনি রাশিয়ায় যান এবং মস্কোর ফিজিক্স ও টেকনোলজি ইন্সটিটিউট থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট পর্যায়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি উচ্চতর তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ইতালিতে উচ্চতর তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিটিপি-তে পড়াশুনা করেছেন। এখানে পড়াশুনার সুবাদে তিনি বৈশ্বিক গবেষণা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি খাতের নিত্য-নতুন অগ্রগতিগুলোর সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।  
 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে 

 


শহীদ তেহরানচি ইরানের উচ্চতর বিপ্লবী সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্য হন উচ্চ শিক্ষা খাতের একজন সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্বীকৃতিসহ। তিনি শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতি অধ্যাপক হিসেবেও তৎপর ছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নানা জার্নালে তাঁর রয়েছে ১৫০টিরও বেশি প্রবন্ধ। তাঁর লেখাগুলো তিন হাজারেরও বেশি সায়েন্টিফিক রেফারেন্স পেয়েছে এবং এক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব ও কার্যকর গবেষণা উপযোগিতার মাত্রা তথা এইচ-ইনডেক্স স্কোর প্রায় ২৯। তিনি ১২টি বই লিখেছেন এবং তাঁর নামে রেকর্ড করা হয়েছে ১৮টি উদ্ভাবন।

যুব সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক 

 

 পুরষ্কার এবং সম্মাননা

১. ২০১০ সালে ইরানের একজন অনুকরণীয় অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত

২. বিভিন্ন সময়ে ইরানের শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা গবেষকের খেতাব পেয়েছেন

৩. সেরা একাডেমিক বইয়ের জন্য আল্লামেহ তাবাতাবায়ি পুরস্কার পেয়েছেন

৪. ইরানের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সর্বোচ্চ পরিষদের ৪১তম মর্যাদার তথা সর্বোচ্চ পদমর্যাদার  সদস্যপদ (২০১০)

৫. ইরানের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রথম শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক পদক পেয়েছেন (২০১০)

ক্লাসে অধ্যাপনার সময় 

 


বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে তৎপরতার অভিজ্ঞতা 


তেহরানচি যে ব্যবস্থাপনাগত দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার মধ্যে ছিল ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিত্ব এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রযুক্তি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন।


এ ছাড়াও তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসলামী বিপ্লবের নেতার আদেশে ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিত্বও গ্রহণ করেন। এছাড়াও, তেহরানচি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।


তিনি ইসলামী ইরানের নীতি-নির্ধারণী পরিষদ বা এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিল অন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধানের উপদেষ্টা (২০১৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত), একই পরিষদের  স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ সেন্টারের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চের উপপ্রধান (২০১৩-২০১৬) এবং ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য হাই কমিশনের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান (২০১৪-২০১৫) হিসেবে এবং শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। 

লোরেস্তান প্রদেশে বন্যার্তদের সহায়তায় 

 


অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ এক বিবৃতিতে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে ডক্টর তেহরানচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করে। 

শহীদ তেহরানচি

 


শাহাদাত 


গত ১৩ জুন নিজ বাসভবনে ইসরাইলি হামলায় শহীদ হন। একই সময়ে একই হামলায় শহীদ হন তাঁর স্ত্রীও।

রেই শহরে হযরত আব্দুল আজিম হাসানী (আ.)-এর মাজারে শহীদ তেহরানচির সমাধিস্থলের একটি ছবি

#

 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬