ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তীব্র সমালোচনা করল 'সিএসটিও'
কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অরগানাইজেশন সংক্ষেপে 'সিএসটিও'ভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তারা সহযোগিতা বিষয়ক ছয়টি চুক্তিতে সই করেছেন।
সিএসটিও-এর প্রধান ইউরি ক্যাচাতোরোভ কাজাখস্তানের রাজধানি আস্তানায় এই সংস্থার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে বলেছেন, সহযোগিতা বিষয়ে ১১টি প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনার পর ছয়টি প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিনি এর তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন এর ফলে অস্থিতিশীলতা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিএসটিও-এর সমালোচনার বিষয়টি বাদ দিয়ে বলা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় দুই সপ্তাহেরও বেশি আগে পরমাণু সমঝোতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর এর বিরুদ্ধে জনমত ও সমালোচনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্প তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকেও উপেক্ষা করেছেন।
১৯৪৫ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বজায় রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো এতো নিন্দা ও সমালোচনার সম্মুখীন আমেরিকার আর কোনো প্রেসিডেন্ট হননি। ফ্রান্সের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ব্রুনো টারট্রেস লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক গার্ডিায়ানের এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইউরোপকে আমেরিকার মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০০৩ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নেতৃত্বে চলমান যুদ্ধ পাশ্চাত্যের ঐক্যে ভঙ্গন ধরিয়েছে এবং বেশ কিছু ইস্যুতে ইউরোপীয় সরকারগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার বিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন নীতির প্রতি কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অরগানাইজেশন সংক্ষেপে 'সিএসটিও'-এর সমলোচনা বিশেষ গুরুত্ববহন করে।
রাশিয়া, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের সমন্বয়ে ১৯৯২ সালে এই সংস্থা গঠিত হয়। এরপর ২০০২ সালে সংস্থার সদস্য দেশগুলো সামরিক জোট গঠনের বিষয়ে একমত হয়। মধ্যএশিয়ায় আমেরিকার প্রভাব ও ন্যাটো জোটের বিস্তার রোধ করা এই সংস্থার লক্ষ্য। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ার পর ওই অঞ্চলের দেশগুলো আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিজেদের অবস্থা শক্তিশালী করা এবং ঐক্য ধরে রাখার জন্য 'সিএসটিও' গঠিত হয় যার লক্ষ্য এসব দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতাকে উন্নিত করা। এই সংস্থা পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে মূলত: ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিল। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৯