ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর: আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব
-
নররেন্দ্র মোদির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ তিন দিনের সফরে এখন ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও দু'দেশের মধ্যকার বার্ষিক বাণিজ্য সম্মেলনে যোগদান তার এ সফরের উদ্দেশ্য।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে জারিফের এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকরাও দিল্লি সফরে গেছেন এবং এ থেকে বোঝা যায়, দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তার তাদের অন্যতম লক্ষ্য। আর্থ-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরান ও ভারতের পারস্পরিক স্বার্থ জড়িয়ে আছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য ভারতের জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের এ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ইরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গেল বছরের জুনে ইরান ছিল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ। গত এপ্রিল থেকে নভেম্বরে ইরান ভারতে ১১০০ কোটি ডলারমূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ছিল অপরিশোধিত তেল। এ ছাড়া, ইরানের চ'বাহার সমুদ্র বন্দর কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক তৎপরতাও ইরান ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তারের বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। ভারতের কর্মকর্তারা বলেছেন, জাওয়াদ জারিফের দিল্লি সফরকালে দু'দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে চ'বাহার সমুদ্র বন্দরের বিষয়ে আলোচনা হবে।
সম্প্রতি ভারত ইরানের চ'বাহার সমুদ্র বন্দরে ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগ করেছে এবং এটি ইরান বিরোধী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠাসহ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত মহাসাগরে ইরান ও ভারতের শক্তিশালী উপস্থিতি দু'দেশের অর্থনীতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দু'দেশেরই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা চ'বাহার বন্দরকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত করার চেষ্টা করছেন এবং আফগানিস্তান, ইরাক ও মধ্যএশিয়ার দেশগুলোতে প্রবেশের জন্য ইরানকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে চায় ভারত। এতে দু'দেশই লাভবান হবে।
বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারত ইরানের ১০ নম্বর শরীক দেশ। ভারতের অর্থমন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে জানিয়েছে, ইরানের তেলের মূল্য ভারত রুপিতে পরিশোধ করায় বাড়তি করের বোঝার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তেলমিয আহমাদ বলেছেন, ভারত ও ইরানের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা বজায় রয়েছে এবং এরই আলোকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরকে মূল্যায়ন করতে হবে। এ সফর দু'দেশের জন্যই সুযোগ এনে দিয়েছে।
যাইহোক, পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেহরান-দিল্লি সহযোগিতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। দু'দেশের ওপরই আমেরিকার রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি লক্ষ্য রেখে ইরান ও ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং দু'দেশই অর্থনৈতিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৮
- খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন