পরমাণু সমঝোতা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে: ইউরোপকে জারিফ
-
জাওয়াদ জারিফ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা একতরফা ছিল না বরং তা ছিল বহুপক্ষীয় এবং এর প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন রয়েছে।
তিনি গতকাল (শুক্রবার) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ইউরো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকাকে সঙ্গে নিয়ে অথবা স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকুক না কেন তাদেরকে অবশ্যই পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পরমাণু সমঝোতায় পুরোপুরি ফিরে যাওয়া সম্ভব।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করলেন যখন আজ থেকে ফ্রান্সে শিল্পোন্নত সাত জাতি গ্রুপের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। সাত জাতি গ্রুপের বর্তমান সভাপতি হিসেবে ফ্রান্স সরকার পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য অবশিষ্ট সুযোগকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এবং ওয়াশিংটন ফের তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আন্তর্জাতিক অবাধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম, বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক স্বাধীন সম্পর্ক বজায় রাখা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির পথে কঠিন সংকট তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া, বিশ্ব তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালী এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের নানা পদক্ষেপ এ অঞ্চলের উত্তেজনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই শিল্পোন্নত ছয়টি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ চলছে যা গত বছর কানাডায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ অবস্থায় ইরান ইস্যুতে ওই দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে বিরোধ দেখা দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।
ইরান এর আগে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইরানের তেল বিক্রি, ব্যাংকিং ও বাণিজ্য সহযোগিতা শুরু না করে তাহলে পরমাণু কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায় শুরু করবে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট মার্কিন একতরফা পদক্ষেপের মোকাবেলায় ইউরোপের করণীয় সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে লিখেছে, সাত জাতি গ্রুপের বৈঠকে ইউরোপীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদেরকে হয় পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে অথবা ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে নতুন কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন গত কয়েক মাসে পরমাণু সমঝোতা রক্ষার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু তার এ চেষ্টা এখন পর্যন্ত কোনো ফল বয়ে আনেনি। বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত নয়। তবে তারা যদি শেষ পর্যন্ত ইরানের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে জাপানসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৪