যে জাতি সাম্রাজ্যবাদীদেরকে নতজানু করে দিয়েছে
কেন ইয়েমেন কখনও পরাজিত হবে না?
-
ইয়েমেনের লক্ষ লক্ষ জনতার হাতে ইয়েমেনি পতাকা উড়ছে
পার্সটুডে-আরব বিশ্বের একজন বিশ্লেষক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের ত্রিপক্ষীয় জোটের বিরুদ্ধে ইয়েমেনিদের বিজয়ের অনন্য অর্জনের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন: ইয়েমেনিরা কখনই আত্মসমর্পণ করবে না।
আরব বিশ্বের একজন বিখ্যাত বিশ্লেষক আবদুল বারী আতওয়ান, রাই আল-ইয়াওমের ওয়েবসাইটে নতুন একটি নিবন্ধে লিখেছেন। ওই নিবন্ধে তিনি বলেছেন: গাজাকে সমর্থন করার ব্যাপারে ইয়েমেনিদের থামাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং ব্রিটেনের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় জোট ব্যর্থ হয়েছে। এটা ইয়েমেনি জাতির ইতিহাসে একটি বীরত্বপূর্ণ এবং অভূতপূর্ব অর্জন। এই অর্জন ইয়েমেনিদের মর্যাদা, সাহস এবং ঈমানের দৃঢ়তা প্রমাণ করে। অবশ্য এটা কোনও নতুন বিষয় নয়। যারা এই দেশ এবং এর জনগণের মৌলিকত্বের সাথে পরিচিত তারা এই বিজয়গুলো সম্পর্কে ভালভাবে অবগত। বার্তা সংস্থা মেহরের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, আতওয়ান আরও বলেন: ইহুদিবাদীদের ভুল ছিল যে তারা ইসরাইল থেকে ২,৮০০ কিলোমিটার দূরের দেশ ইয়েমেনকে সরাসরি সংঘর্ষের ক্ষেত্র হিসাবে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল। তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী দখলদার ইসরাইলের আঞ্চলিক মিত্র আরব সরকারগুলোর সমন্বয়ে একটি নয়া আরব অঞ্চল তৈরির চেষ্টা করেছিল। ওই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা চেয়েছিল আরবের ভূগোল বা মানচিত্র পাল্টে দিতে।
ভবিষ্যতে ইয়েমেনের সমর্থনে গড়ে ওঠা ফ্রন্টের সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করে আরব বিশ্বের এই বিশ্লেষক আরও বলেন: এই ফ্রন্টের কাছে ক্ষমতার সমস্ত হাতিয়ার রয়েছে এবং এই জাতি ও তাদের নেতা এবং জনগণের বিশ্বাস ও ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। ইতিহাসে লক্ষণীয় যে, ইয়েমেনিরা যত যুদ্ধই প্রবেশ করেছে, তাদের উপরে কোনো শক্তিই বিজয়ী হতে পারে নি। তারাই বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করেছে। সুতরাং আমরা নিশ্চিত যে ইহুদিবাদী সরকারও এই নিয়ম বা ইতিহাসের ব্যতিক্রম নয়।
তিনি ইয়েমেনি আনসারুল্লাহ আন্দোলন এবং এই আন্দোলনের জনপ্রিয় ভিত্তির বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলি হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন: এইসব হুমকির কোনো মানে হয় না। শুধুমাত্র ইহুদিবাদীদের ভয়, ত্রাস এবং হতাশাকে ঢাকতেই এরকম মহুমকি দেওয়া হয়। ইয়েমেনি বাহিনী এবং তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উন্নত ড্রোনের ভয়ে ইসরাইলিরা আতঙ্কিত। কারণ এইসব ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের গভীরে গিয়ে বিনা বাধায় সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাই ইসরাইলের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে এবং এই ভয়ে ৪০ লক্ষেরও বেশি ইহুদিবাদীকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার ইহুদিবাদী ইসরাইল, আমেরিকা এবং ব্রিটেন যৌথভাবে ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে। অন্তত ২০টি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ওই হামলায় অংশগ্রহণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ওই হামলার কথা উল্লেখ করে আরব বিশ্বের এই বিশ্লেষক বলেন: হামলায় ৬ জন মুজাহিদিন শহীদ হয়েছেন এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। বিশ্লেষক আরও বলেন: এটি এই স্তরের পঞ্চম আক্রমণ যার ফলে ইয়েমেনিদের কাছ থেকে দ্রুত এবং ব্যাপক পাল্টা হামলার ভয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোহিত সাগর, আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে আমেরিকা ও ব্রিটিশ বিমানবাহী রণতরী এবং ডেস্ট্রয়ারের ওপর ইয়েমেনিদের ব্যাপক আক্রমণের ভয়ে ব্যাপক ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে।
আতওয়ান আরও বলেন যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবস্থাকে কেবল বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরিমাপ করলে হবে না, কারণ তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষয়ক্ষতির অনেক বেশি বিপজ্জনক। কেননা; ইহুদিবাদী সমাজের একটি ভঙ্গুর সামাজিক কাঠামো রয়েছে। সেইসাথে অপারেশন স্টর্ম আল-আকসার পর ইসরাইলের গোয়েন্দা এবং সামরিক শ্রেষ্ঠত্বও ভেঙে পড়েছে।
আতওয়ান তার প্রবন্ধটি শেষ করেছেন এই বলে: ইয়েমেন আত্মসমর্পণ করবে না। তাদের ১২,০০০ বছরের ইতিহাসে পরাজয় বা আত্মসমর্পণের কোনও রেকর্ড নেই। আমরা ইয়েমেনের ইতিহাস এবং তাদের জনগণের শক্তি সম্পর্কে জানি এবং আমরা নিশ্চিত যে তাদের দৃঢ়তা ও ঈমান ইসলামী জাতির মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস এবং বিজয় অর্জন করবে। সেইসঙ্গে গাজার জনগণও তাদের অবিচল দৃঢ়তা অব্যাহত রেখে বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে। ইয়েমেনি সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন যে ইসরাইল যতদিন পর্যন্ত গাজায় তাদের আগ্রাসন বন্ধ না করবে ততদিন পর্যন্ত ইসরাইলি অবস্থানগুলোতে তারা হামলা চালিয়ে যাবে।#
পার্সটুডে/এনএম/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।