সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিকে অপব্যবহার করছে ইসরাইল; দখলদারি আর কত দিন?
(last modified Wed, 29 Jan 2025 11:20:16 GMT )
জানুয়ারি ২৯, ২০২৫ ১৭:২০ Asia/Dhaka
  • সিরিয়ায় ইসরাইলি দখলদারি
    সিরিয়ায় ইসরাইলি দখলদারি

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সিরিয়ার নয়া সরকারের নীরবতার সুযোগে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার ভূখণ্ডে নতুন সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। সিরিয়া সীমান্তে দখলকৃত ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠিত ঘাঁটিতে এসব সরঞ্জাম আনা হয়েছে।

ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইসরাইল কাট্‌য অধিকৃত গোলানের "জাবাল আশ-শেইখ" অঞ্চল পরিদর্শনের সময় জোর দিয়ে বলেছেন, নতুন করে সিরিয়ার যে অঞ্চল তাদের দখলে এসেছে তা থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সরে যাবে না বরং সিরিয়ায় তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। পার্সটুডে জানিয়েছে, ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রীর দেওয়া ভাষ্য মতে অধিকৃত গোলান মালভূমি এবং উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের সেনাবাহিনী নতুন দখলকৃত এলাকাগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে রক্ষা করবে।

সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলে রাখার বিষয়ে ইসরাইলি ঘোষণা আসার পরও মানবাধিকারের দাবিদার পশ্চিমা দেশগুলো এখনও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

লেবানন, সিরিয়া এবং দখলদার ইসরাইল সীমান্তে অবস্থিত জাবাল আশ-শেইখ বা হারমন হচ্ছে অত্যন্ত কৌশলগত একটি এলাকা। এই অধিকৃত পয়েন্টটিকে গোটা অঞ্চলের চোখ হিসেবে গণ্য করা হয়। জাবাল আশ-শেইখ বা হারমন পার্বত্যাঞ্চল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। হারমন পর্বতকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখান থেকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ সম্পর্কে পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব।

 এছাড়া এখান থেকে রাজধানী দামেস্কের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। হারমন পর্বতে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে এখন অনেক বিস্তৃত এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে ইসরাইল। উপরে অবস্থানের কারণে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নজরদারিতে বিশেষ সুবিধা পাবে তারা। সমরবিদরা বলছেন, উন্নত সেন্সর স্থাপনের ফলে শত্রুর যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং সেনাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। বিশেষ বাহিনী সিরিয়া এবং তার বাইরে গোপন অভিযান পরিচালনার জন্য পাহাড়ের আবরণকে কাজে লাগাতে পারে।

ইহুদিবাদী সূত্রের মতে, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী সিরিয়ার ভূখণ্ডের ১৪ কিলোমিটার গভীরে জাবাল আশ-শেইখ অঞ্চলে অবস্থান করছে। ইসরাইলের আর্মি রেডিও আরও ঘোষণা করেছে, ইসরাইলি মন্ত্রিসভা সিরিয়ার "জাবাল আশ-শেইখ" অঞ্চল দখলে রাখতে এবং একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছে।

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের পতন ঘটিয়ে হায়াত তাহরির আশ-শাম সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা শুরু করে ইসরাইল। সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটি, বহু যুদ্ধবিমান, ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, উৎপাদন ক্ষেত্র, ওয়্যারহাউজ এবং ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সেগুলোকে ইসরাইল ধ্বংস করে দেয়।

শুধু তাই নয় চুক্তি লঙ্ঘন করে সিরিয়ার অধিকৃত গোলান মালভূমির অনেক এলাকা দখলে নেয় ইসরাইল। কুনেইত্রাসহ এই মালভূমির আশেপাশের কিছু এলাকাও তারা দখল করে। ১৯৬৭ সালে গোলান মালভূমির একাংশ দখল করে দখলদার ইসরাইল এবং ১৯৮১ সালে বেআইনিভাবে এই অঞ্চলটি অধিগ্রহণ করে।

গোলান মালভূমি ইস্যুতে ১৯৭৪ সালের চুক্তি ভেঙে পড়েছে বলে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছে। সিরিয়ার নয়া সরকার ও আন্তর্জাতিক মহল ইসরাইলের এই অবৈধ দখলদারির বিষয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করছে না। মৌখিক নিন্দা নিন্দা জানানোকেই যথেষ্ট বলে মনে করছে।

তবে এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। ইরান স্পষ্টভাবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এর আগে বলেছেন, দখলদারেরা সিরিয়ায় টিকতে পারবে না।#  

পার্সটুডে/এসএ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।