ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে সমঝোতা; এটা প্রতারণা নাকি বিশ্বাসঘাতকতা?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i152656-ফিলিস্তিনিদের_বাদ_দিয়ে_সমঝোতা_এটা_প্রতারণা_নাকি_বিশ্বাসঘাতকতা
পার্সটুডে- বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডেভিড হার্স্ট বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা যে সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তার জবাবে এই অঞ্চলের নেতারা ভয়, কাপুরুষতা ও স্বার্থপরতা  দেখিয়েছেন।
(last modified 2025-10-05T13:30:47+00:00 )
অক্টোবর ০৫, ২০২৫ ১৭:২০ Asia/Dhaka
  • নেতানিয়াহু (বামে) ও ট্রাম্প (ডানে)
    নেতানিয়াহু (বামে) ও ট্রাম্প (ডানে)

পার্সটুডে- বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডেভিড হার্স্ট বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা যে সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তার জবাবে এই অঞ্চলের নেতারা ভয়, কাপুরুষতা ও স্বার্থপরতা  দেখিয়েছেন।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর সাবেক সিনিয়র লেখক মিডল ইস্ট আই-এ এক বিশ্লেষণে লিখেছেন- আরব ও মুসলিম নেতারা এখন এই দাবি করতে পারেন যে, তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করে প্রতারিত হয়েছেন, কারণ ওয়াশিংটনে ঘোষিত পরিকল্পনাটি নিউইয়র্কের পরিকল্পনার চেয়ে মৌলিকভাবে ভিন্ন ছিল। এভাবে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো গেলেও এটা একটা বিশ্বাসঘাতকতা।

হার্স্ট বলেন, ইতিহাসের এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বের জনমত স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের বিপক্ষে এবং বহু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন আটজন আরব ও মুসলিম নেতা এমন এক পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন যা নিশ্চিত করে যে, ইসরায়েলের প্রতিশোধের ধ্বংসস্তূপ থেকে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র আর উঠে আসতে পারবে না।

কোনো কিছুর নিশ্চয়তা নেই

এই সমঝোতায় এ ধরণের কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, জাতিগত নির্মূল বা গণহত্যা বন্ধ হবে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ত্যাগ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়নি। গাজার কোন অংশ এবং কত দ্রুত “আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী” বা আইএসএফ'র হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করবেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজে। গাজায় কতটুকু সাহায্য ও পুনর্গঠন সামগ্রী পাঠানো হবে তাও তিনি ঠিক করবেন। এই প্রত্যাহারের কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই।

এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কোনো ভূমিকা নেই। গাজাকে কার্যত ও আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীর থেকে আলাদা করা হয়েছে এবং এই দুই অংশের একত্র হওয়ার ভাবনাও সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে

হার্স্ট লিখেছেন, নেতানিয়াহুর মুখে বড় হাসি ফোটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।  তিনি ইসরায়েলি টেলিভিশনে বলেছিলেন- কে ভেবেছিল এমন কিছু সম্ভব হবে? সবাই বলত, তোমাকে হামাসের শর্ত মেনে নিতে হবে, বাহিনী সরাতে হবে, যাতে তারা আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। অসম্ভব—এমনটা কখনও ঘটবে না।

যখন তাকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি বলেন, "অবশ্যই না। এমন কিছু সমঝোতায় লেখা নেই। বরং আমরা স্পষ্টই বলেছি, আমরা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ঘোর বিরোধী এবং ট্রাম্পও এতে একমত। পরকল্পিনার শেষ ধারায় কেবল এটা বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা” শুরু করবে — অর্থাৎ কোনো বাস্তব প্রতিশ্রুতি নেই।

ফিলিস্তিন একা

যদি হামাস বন্দিদের মুক্তি দেয়, তবুও যুদ্ধ শেষ হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর যদি তা না করে, তাহলে ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থনে যুদ্ধ চলবে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও মিসরের মতো দেশগুলোর আত্মসমর্পণ আশ্চর্যের নয়। তবে তুরস্ক ও কাতারও এই একতরফা ও অন্যায্য পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন দুই বছরের গণহত্যার পর ইসরায়েল গাজায় অবস্থান করার অনুমতি পেয়েছে- তারা সরাসরি অথবা টনি ব্লেয়ারের মতো মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে সেখানে অবস্থান করবে। এমনকি যদি তারা সৈন্য সরিয়ে নেয়, তবুও সীমান্ত ও সাহায্যের পরিমাণের উপর তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তারা আল-আকসা মসজিদে হামলা করতে এবং পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপন করতে পারবে।

এটি আসলে অসলো চুক্তির পুনরাবৃত্তি, কিন্তু এবার আরও বড় ও বিপজ্জনক আকারে। ফিলিস্তিনিদের কেবল তখনই শান্তিতে বাঁচার অনুমতি দেওয়া হবে, যখন তারা ইসরায়েলের শর্ত মেনে চলবে এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন ত্যাগ করবে। হার্স্টের মতে, ইতিহাসে কখনোই ফিলিস্তিনিরা এতটা একা ছিল না। গাজার মানুষ যে সাহস ও আত্মত্যাগ দেখিয়েছে, আরব ও মুসলিম নেতারা তার জবাব দিয়েছেন ভয়, কাপুরুষতা ও ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে।#

পার্সটুডে/এসএ/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।