বিশ্বে একদেশদর্শী মার্কিন নীতির ব্যর্থতা স্বীকার করলেন ওবামা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্বীকার করেছেন যে, কোনো একটি দেশ একা কোনো আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানের ক্ষমতা রাখে না এমনকি যদি সেই দেশটি আমেরিকার মতও শক্তিশালী হয়।
ওবামা স্পেন সফরে এসে গতকার শনিবার এই মন্তব্য করেছেন। সিরিয়া সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় বিশ্বে মার্কিন সরকারের একদেশদর্শী নীতি ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন সরকার গত কয়েক দশকে নিজেকে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শক্তি বলে প্রচার করে এসেছে। আর এরই আলোকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোড়ল হিসেবে দেশে দেশে হস্তক্ষেপকামী তৎপরতা চালিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন। যেমন, বিশ্ব-জনমতের প্রবল বিরোধিতা ও নিন্দা উপেক্ষা করে মার্কিন সরকার চলতি শতকের শুরুর দিকে ইরাক এবং আফগানিস্তানে হামলা চালায় একতরফাভাবে।
মার্কিন সরকার নিজেকে সব সময়ই কথিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার অজুহাত দেখিয়ে দেশে দেশে বিশ্ব-মোড়লের ভূমিকা পালন করছে ।স্বঘোষিত বিশ্ব-মোড়ল হিসেবে এই সরকার জাতিসংঘের অনুমতি না নিয়েই সামরিক অভিযান চালিয়ে এসেছে বহু দেশে। বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলে যা-খুশি তা-ই করার অধিকার যেন জন্মগতভাবে পেয়ে গেছে মার্কিন সরকার। এই স্বঘোষিত অধিকারের বলেই মার্কিন সরকার ড্রোন হামলা চালাচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইয়েমেনসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে। দামেস্কের অনুমতি ছাড়াই সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলার কথাও এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়।
চীন ও রাশিয়ার মত দেশগুলোও মনে করে যে, মার্কিন সরকারের এইসব একদেশদর্শী ও স্বৈরতান্ত্রিক এবং স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখা দিচ্ছে নৈরাজ্য।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার অজুহাত দেখিয়ে তৎকালীন মার্কিন সরকার আফগানিস্তানে বহুজাতিক বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়।কিন্তু এই দেশটিতে মার্কিন সেনা অভিযানের ১৫ বছর পর আজও সন্ত্রাসবাদ কমে যায়নি, বরং দেশটিতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও সেখান থেকে মাদকের চোরাচালান ৪০ গুণ বেড়েছে। আর এ বিষয়টি আফগানিস্তানের আশপাশের অঞ্চলসহ রাশিয়া, মধ্য-এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের প্রতিবেশীরা এখন তাদের অঞ্চলে তালেবান ও দায়েশের অভিযান ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিও বুশ সন্ত্রাস দমন ও ইরাকের কথিত গণ-বিধ্বংসী অস্ত্রগুলো ধ্বংসের অজুহাতে তেল-সমৃদ্ধ এই দেশটিতে হামলা চালান। কিন্তু ইরাকে কখনও সেইসব অস্ত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইরাক অভিযানে হাজার হাজার মার্কিন সেনার মৃত্যু ঘটে ও হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হয়। ফলে নয় বছর পর ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার। কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে নিহত হয় অন্তত দশ লাখ ইরাকি এবং দেশটির নানা অবকাঠামোর অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়। অথচ এ যুদ্ধের ধ্বংযজ্ঞ ও নৈরাজ্যময় পরিবেশেই গড়ে উঠেছে দায়েশসহ নানা ধরনের তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।লিবিয়ায়ও মার্কিন ও ন্যাটো জোটের হামলার পর দেশটিতে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য। মোটকথা মার্কিন একদেশদর্শী নীতিগুলো বিশ্বের নানা অঞ্চলে মহা-বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া কখনও কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনেনি। #
পার্সটুডে/মু.আ. হুসাইন/১০