মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভের লক্ষ্য কী ছিল?
-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'রাজাকে না বলুন' স্লোগানে দেশব্যাপী বিক্ষোভ
পার্সটুডে- ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং তার 'কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে লক্ষ লক্ষ মার্কিন নাগরিক 'রাজাকে না বলুন' স্লোগানে দেশব্যাপী বিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছিল।
১৮ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য এবং কানাডা, মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশব্যাপী 'রাজাকে না বলুন' বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম তরঙ্গ। মুভঅন, মানবাধিকার প্রচারণা এবং শ্রমিক ইউনিয়নসহ ২০০ টিরও বেশি প্রগতিশীল সংগঠনের একটি নেটওয়ার্ক দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভ।
আনুমানিক ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণ করে। আর ওই বিক্ষোভকে সাম্প্রতিককালে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একদিনের বিক্ষোভ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ ২০১৭ সালের ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের বেশ কয়েকটি লক্ষ্য ছিল। 'কোন রাজা নেই' স্লোগানটি সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড এবং বিবৃতিগুলিকে ইঙ্গিত করে। বিক্ষোভকারীদের মতে, গণতন্ত্রকে দুর্বল করার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। বিক্ষোভকারীরা বিশ্বাস করে যে, আজীবন ক্ষমতা চাওয়া বা রাষ্ট্রপতি হিসাবে তৃতীয় মেয়াদের মতো আইনি সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করার বিষয়ে ট্রাম্পের কথা সংবিধানের জন্য গুরুতর হুমকি।
বিক্ষোভটিতে গণতান্ত্রিক নীতির ওপর আস্থা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা ছিল। তারা এ বিষয়ে জোর দিয়েছে যে, আমেরিকার কোনও রাজা নেই।
প্রধান উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল সরকারের কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া জানানো। বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটিক-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলিতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এর ব্যাপক অভিযান পরিচালনা। বিক্ষোভকারীরা এই অভিযানগুলোকে সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, বিক্ষোভ দমন এবং স্থানীয় অনুমোদন ছাড়াই শহরগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনীর অবৈধ ব্যবহার বলে মনে করেছিল। বিষয়টিকে সামরিক দখলদারিত্ব হিসাবে নিন্দা করেছিল এবং এটি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো জনসাধারণের পরিষেবা এবং ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস এবং মার্ক জুকারবার্গের মতো বিলিয়নেয়ারদের পক্ষে অর্থনৈতিক নীতিতে কাটছাঁটেরও প্রতিবাদ করেছিল।
ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এই নীতিগুলিকে কোটিপতি-বান্ধব অর্থনীতি বলে অভিহিত করেছেন এবং সম্পদের সুষ্ঠু পুনর্বণ্টনের আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী বিক্ষোভে ট্রাম্পের দুর্নীতি এবং ব্যক্তিগত লাভের জন্য করের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগও সমালোচনা করা হয়েছিল।
বিক্ষোভের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পের ব্যাপক জনসমর্থনের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তার বিরুদ্ধে নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি করা। আয়োজকরা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা বিন্দু হিসাবে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিলেন। বিক্ষোভগুলির উল্লেখযোগ্য প্রাথমিক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে এবং এর উল্লেখযোগ্য পরিণতিও হতে পারে।
বার্নি স্যান্ডার্স, জন কুস্যাক, রবার্ট ডি নিরো এবং বিল নাইয়ের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভগুলি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
তরুণ, প্রবীণ এবং সংখ্যালঘুসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে একটি বড় ঐক্য প্রদর্শন করেছিল। চাকশুমার এবং কোরি বুকারের মতো ডেমোক্র্যাটরা এটিকে আমেরিকার প্রতি ভালোবাসার প্রদর্শন বলে অভিহিত করেছিলেন। অন্যদিকে মাইক জনসন এবং জে.ডি. ভ্যান্সের মতো রিপাবলিকানরা এটিকে আমেরিকার প্রতি ঘৃণার প্রদর্শন বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প নিজেই একটি হাস্যকর ভিডিও পোস্ট করে বিক্ষোভকে উপহাস করেছেন। যেখানে তিনি একটি যুদ্ধবিমান থেকে বিক্ষোভকারীদের উপর কাদা ছুঁড়ে মারছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলি রাজনৈতিক বিভাজনকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
একই সাথে, বিক্ষোভগুলো গণতন্ত্র, অভিবাসন এবং নাগরিক অধিকারের বিষয়ের প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শহরগুলিতে ফেডারেল সেনা পাঠানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রশাসনের উপর চাপ বাড়িয়েছে। বিক্ষোভগুলো নাগরিক প্রতিরোধ আন্দোলনকেও শক্তিশালী করতে পারে এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে, এই ধরনের বিক্ষোভ ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের তাদের বর্তমান পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে পরিচালিত করার সম্ভাবনা কম। রিপাবলিকানরা, বিশেষ করে ট্রাম্প-সমর্থিত এমএজিএ আন্দোলন, মনে করে যে তাদের কাছে আমেরিকায় রক্ষণশীল এজেন্ডা বাস্তবায়নের এবং জনসাধারণের জায়গা থেকে উদারপন্থি এবং বামপন্থিদের প্রান্তিক করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে।
ফলে, আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক এবং সামাজিক উত্তেজনা তীব্রতর হবে।#
পার্সটুডে/জিএআর/২০