ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধের ছায়া থেকে ইউক্রেনে শান্তির জন্য মার্কিন চাপ
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154304-ক্যারিবীয়_অঞ্চলে_যুদ্ধের_ছায়া_থেকে_ইউক্রেনে_শান্তির_জন্য_মার্কিন_চাপ
পার্সটুডে: হোয়াইট হাউস যখন একই সঙ্গে একাধিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সংকটে জর্জরিত, তখন গত কয়েকদিনে মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলা, ইরাক ও ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নতুন অবস্থান ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থানগুলো দেখাচ্ছে যে, ওয়াশিংটন সরকার রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ, আঞ্চলিক প্রভাব ধরে রাখা এবং নিজস্ব শান্তি-পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে বহুস্তরীয় কৌশল ব্যবহার করছে।
(last modified 2025-11-22T12:15:51+00:00 )
নভেম্বর ২২, ২০২৫ ১৮:০৮ Asia/Dhaka
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিকোলাস মাদুরো
    ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিকোলাস মাদুরো

পার্সটুডে: হোয়াইট হাউস যখন একই সঙ্গে একাধিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সংকটে জর্জরিত, তখন গত কয়েকদিনে মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলা, ইরাক ও ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নতুন অবস্থান ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থানগুলো দেখাচ্ছে যে, ওয়াশিংটন সরকার রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ, আঞ্চলিক প্রভাব ধরে রাখা এবং নিজস্ব শান্তি-পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে বহুস্তরীয় কৌশল ব্যবহার করছে।

ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন সামরিক তৎপরতার হঠাৎ বৃদ্ধি, ইরাক বিষয়ে মার্কিন নীতির পরিবর্তন সংক্রান্ত গুজব অস্বীকার এবং ইউক্রেনের শান্তি-প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে রাজনৈতিক চাপ—এসবের সমন্বয়ে গত কয়েক দিনে মার্কিন সরকারের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা হলো: সামরিক শক্তি, সক্রিয় কূটনীতি এবং রাজনৈতিক চাপের যৌথ প্রয়োগ।

পার্সটুডে এই নিউজ প্যাকেজে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:

ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তহীনতা

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য স্থল-আক্রমণের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। এ বক্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন ওই অঞ্চলে বিশাল সেনা মোতায়েন, অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরী পাঠানো এবং ১৫ হাজার সৈন্য স্থানান্তরের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

সিএনএনকে মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন—সরাসরি আক্রমণ ছাড়াই সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ দিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পদত্যাগে বাধ্য করা যেতে পারে। পরপর তিন দিন প্রেসিডেন্টের কাছে সামরিক বিকল্পগুলোর বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে—যার মধ্যে সরকারি স্থাপনায় হামলা থেকে শুরু করে সীমিত বিশেষ অভিযান পর্যন্ত বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। তবে ট্রাম্প কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং মার্কিন সেনাদের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এদিকে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে হোয়াইট হাউস ভেনেজুয়েলায় “সম্ভাব্য অভিযান” নিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে। এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ পাঠানো এবং পুয়ের্তো রিকোতে মার্কিন নৌঘাঁটি পুনরায় সক্রিয় করার তৎপরতা অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।

ইরাকে মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধিকে ঘিরে গুজব ও ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া

ইরাকের ঘটনাবলীও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের নজরে রয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা 'মার্ক সাভায়া'—ইরাক বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার গুজবকে 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন' বলেছেন। নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, তাঁর দায়িত্ব অক্ষুণ্ণ আছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে বাগদাদে তাঁর কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়বে।

কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল শিগগিরই বাগদাদ যাচ্ছে—যেখানে নতুন সরকার গঠন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। সাভায়া পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, ইরাকের সরকার গঠনে 'কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ' ওয়াশিংটন গ্রহণ করবে না।

ইউক্রেন শান্তি-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মার্কিন রাজনৈতিক চাপ

ইউক্রেন ফ্রন্টেও যুক্তরাষ্ট্র নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। মার্কিন সূত্রে জানা গেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মার্কিন সেনাবাহিনীর মন্ত্রী ড্যান ড্রিসকল–এর সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত শান্তি–পরিকল্পনা পর্যালোচনায় সম্মত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে ইউক্রেন ২৭ নভেম্বর–এর মধ্যে এ পরিকল্পনায় সই করবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবটিতে আমেরিকার নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং একটি অ-সামরিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে ডনবাসের কিছু অংশ রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন এবং গত এক মাস ধরে মার্কিন কূটনৈতিক দল মস্কো ও কিয়েভ উভয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, ইউক্রেন সহায়তা তহবিলের একটি অংশ 'মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ উপাদান' সংগ্রহে ব্যয় করা হবে। এছাড়া জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি হুমকি দিয়েছেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তবে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: "চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হবে না।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করে যে, ভেনেজুয়েলা, ইরাক ও ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র একটি সক্রিয়, বহুস্তরীয় ও চাপ–ভিত্তিক কৌশল অনুসরণ করছে—যেখানে সামরিক ভীতি প্রদর্শন, কূটনৈতিক সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক চাপকে একসঙ্গে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন নিজের ভূ-কৌশলগত লক্ষ্যগুলো এগিয়ে নিতে চাইছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/২০