এপ্রিল ১৫, ২০২২ ১৭:১৬ Asia/Dhaka

রহমত বরকত নাজাত পেতে/চাইতে হবে দিনে রাতে। ঈমান তোমার করতে তাজা/রাখতে হবে ত্রিশ রোযা।

পবিত্র রমজান মাস তওবার মাস। আত্মশুদ্ধির জন্যও এটি অত্যন্ত জরুরি।  মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তওবাকারীদের প্রশংসা করেছেন। তওবা অর্থ  মহান আল্লাহতালার কাছে ফিরে আসা অনুশোচনা সহকারে। কুরআন এবং হাদীসে শব্দটি আল্লাহর নিষেধকৃত বিষয়গুলো ত্যাগ করা ও তাঁর আদেশকৃত বিষয়গুলোর দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য কথায় নিজের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা, এবং তা পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্পই হচ্ছে তওবা।

পবিত্র কুরআনের ৬৯ টি সুরাতে ৮৭বার তওবা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা হয়েছে তাই তওবা যে অতি গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।  পবিত্র কুরআনে সুরা তওবা নামক একটি স্বতন্ত্র সুরাও রয়েছে যা এ মহাগ্রন্থের নয় নম্বর সুরা ।

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا  اِلَی اللّٰہِ تَوۡبَۃً  نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ  اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা কর। তাহলে হয়তো তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপগুলো মোচন করবেন।  (সুরা তাহরিম ৮ নম্বর আয়াত) এই আয়াতে সবাইকে তওবা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অতএব ইস্তেগফার বা তওবা একটি ফরজ দায়িত্ব প্রত্যেক ব্যক্তি তার দুই ধরনের আমলের ক্ষেত্রে পরকালে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। প্রথমত অন্য মানুষের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে: যেমন, জনসাধারণের সাথে সামাজিক লেনদেন, আচার ব্যবহারের  ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরের প্রাপ্য বা অধিকারের সীমানা লঙ্ঘন করলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরকালে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তওবা বা প্রত্যেকের অধিকার সংক্রান্ত প্রাপ্য পৃথিবীতে হিসাব নিকাশ করে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে পরিশোধ করে নিলে ঐ ব্যক্তি পরকালে তার ঐ অপরাধের দায়ে আর জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন না

প্রশ্ন করা হবে আল্লাহর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও। যেমন: আমরা পার্থিব জীবনে আচার ব্যবহার ও দৈনন্দিন কাজে খোদা প্রদত্ত বিভিন্ন বিধি-বিধান মেনে চলতে বাধ্য কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে এসব বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হই। আর এই অক্ষমতা বা অপারগতার কারণে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়ে ঐ অপরাধ গুলো পৃথিবীতেই মার্জনা করে নেয়া উচিত।

পবিত্র কোরআনে তওবা শব্দটি দু'ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে : প্রথমত

পাপাচার থেকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন তথা  يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ বা  تاب إلي الله

দ্বিতীয়ত মহান প্রতিপালক তাঁর বান্দাদেরকে দয়া, ক্ষমা বা তওবা করার তৌফিক দান করেছেন তথা تاب الله عليه

বলা হয় মহানবী (সাঃ) প্রতিদিন সত্তুর বার বা তারও বেশি বার তওবা করতেন অতএব তওবা কেবল পাপাচার থেকে ত্রাণের আশায় নয় বরং তওবার বিভিন্ন স্তর রয়েছে প্রত্যেক মানুষ তার নিজের স্থান থেকেই মহান প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তনের আশায় তওবা করে থাকেন ।

তওবার রয়েছে নানা ধরণ: যেমন  পাপাচার বা গোনাহ থেকে তওবা

উদাসীনতা বা গাফিলতি থেকে তওবা সৃষ্টি জগতের আসক্তি থেকে তওবা

খোদার দর্শন থেকে দৃষ্টি বিভ্রাটের কারণে তওবা

উল্লেখ্যমৃত্যুর নিশানা স্পষ্ট হলে ঐ সময়ের তওবা কবুল হবে না পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: এমন লোকদের তওবার সুযোগ নেই যারা জীবনভর খারাপ কাজ করতে থাকে; অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে, আমি এখন তওবা করলাম; (সুরা নিসা ১৮ নম্বর আয়াত)

যারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাদেরও তওবা কবুল হবে না। কুরআনে বলা হয়েছে: তাদেরও তওবার সুযোগ নেই যারা কাফের অবস্থায় মারা যায়। এসব লোকদের জন্য আমি বেদনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা নিসা ১৮ নম্বর আয়াত)

যারা মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাদের তওবাও কবুল হবে না পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: আল্লাহর সাথে শরীক করা হলে তিনি তা ক্ষমা করেন না। এছাড়া আর সব পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। (সুরা নিসা ১১৮ নম্বর আয়াত)

তওবার রয়েছে নানা স্তর। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী আঃ বলেছেনঃ

التَّوبَهُ علی أرَبَعِه دَعائِمَ: نَدَمٌ بالقَلبِ، و استغفارٌ باللِّسانِ، و عَمل بالجَوارحِ، و عَزمٌ عَلی أن لایَعودَ.

তওবা চারটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত: প্রথমত অন্তরে অনুতাপ বা অনুশোচনা বোধ,

দ্বিতীয়ত মুখে ইস্তেগফার পাঠ করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করা, তৃতীয়ত  অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে যথাযথ আমল করা ও চতুর্থত পুনরায় গোনাহ না করার দৃঢ় অঙ্গীকার করা।

তাই কেউ যদি সত্যিকার তওবা করতে চায় তাহলে তার তওবায় উল্লিখিত চারটি নিশানা বা লক্ষণ থাকবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত তওবাকারী হওয়া তৌফিক দিন। বলা হয় প্রকৃত তওবাকারীর তওবা কবুল করে মহান আল্লাহ তার পাপগুলোকেও সাওয়াব হিসেবে গণ্য করেন।

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।