রমজান: আত্মশুদ্ধির মহোৎসব (পর্ব-১৫)
কুরআন পড়ুন,নামাজ পড়ুন/রাখুন ত্রিশ রোজা কাঁধ থেকে নেমে যাবে/পাপের সকল বোঝা।
বলা হয় রমজান পবিত্র কুরআনের বসন্ত। এ মাসে পবিত্র কুরআনের এক আয়াত তিলাওয়াত করা সমগ্র কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব এনে দেয়। রমজান মাসেই নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআন। আর আত্মশুদ্ধির জন্য কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন অধ্যয়নের চেয়ে উত্তম কোনো বিকল্প নেই। চিন্তাভাবনাসহ কুরআন তিলাওয়াত করাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কুরআন ও হাদিসের বর্ণনায়। পবিত্র কুরআনেই বলা হয়েছে এ আসমানি কিতাব কেবল খোদাভীরু ও মুমিনদেরকেই পথ দেখায়। তাই পবিত্র কুরআন থেকে পথ-নির্দেশনা পেতে হলে খোদাভীরু ও মুমিন হতে হবে। আর খোদাভীরু ও মুমিনদের বৈশিষ্ট্যগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। আমাদের উচিত ধৈর্য ধরে কুরআনে বর্ণিত এসব বৈশিষ্ট্য অর্জনের চেষ্টা করা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র হাদিস অনুযায়ী মহানবীর পবিত্র আহলে বাইত পবিত্র কুরআনের সমতুল্য ও পবিত্র কুরআন থেকে চির-অবিচ্ছিন্ন। পবিত্র কুরআনে যেমন নির্ভুল তেমনি মহানবীর আহলে বাইতের নেতৃত্ব ও জীবন-ধারাও নির্ভুল। পবিত্র হৃদয়েই যেমন কুরআনের প্রভাব পড়ে তেমনি কেবল পবিত্র হৃদয়ের অধিকারীরাই মহানবীর আহলে বাইতের অনুসারী হন। আর অপবিত্র হৃদয়ধারীরাই মহানবীর আহলে বাইতের শত্রু হন। মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতকে বলা হয় জীবন্ত কুরআন। পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর প্রকৃত অর্থ ও যুগোপযোগী ব্যাখ্যা জানতে হলে মুসলমানদেরকে মহানবীর আহলে বাইতের শরণাপন্ন হতে হবে। আর মহানবীর আহলে বাইতের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের অনুসারী ও তাঁদের শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমরাই পবিত্র কুরআনের অর্থ, যুগোপযোগী ব্যাখ্যা ও ইসলামী আইন এবং সংশ্লিষ্ট নানা জ্ঞান তুলে ধরতে সক্ষম।
মহানবীর আহলে বাইতের আদর্শকে বাদ দিয়ে ও তাঁদের শিক্ষাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ না করে যে কোনো জ্ঞানী ও গবেষকরা যত গবেষণাই করুন না কেন তারা ইসলামের প্রকৃত বিধি-বিধান ও শিক্ষা উপলব্ধি করতে বা সেসব তুলে ধরতে সক্ষম হবেন না, বরং বিভ্রান্ত হবেন। কারণ, মহানবী (সা) মুসলমানদের উদ্দেশে বলেছেন: আমি তোমাদের কাছে দুটি ভারী জিনিষ বা বিষয় রেখে যাচ্ছি। এ দুটিকে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনও বিভ্রান্ত হবে না। আর এ দুটি বিষয় বা জিনিষ হল পবিত্র কুরআন ও আমার আহলে বাইত।
পবিত্র কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী শয়তান মানুষের মুক্তির প্রধান শত্রু। শয়তান কসম খেয়ে বলেছে সে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেই কেবল খাঁটি মুমিনদের ছাড়া। শয়তান বড় বড় আলেমদেরও বিভ্রান্ত করতে পারে। শয়তানের মূল লক্ষ্য হল বড় মাপের মানুষদের বা বড় পর্যায়ের জ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করা। শয়তান কখনও তাদের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করে বা লোভের ফাঁদে ফেলে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে। কখনও খ্যাতির মোহ ও কখনও পদ-পদবির মোহ বড় বড় পর্যায়ের মানুষকে বিভ্রান্ত করে। শয়তান নিজেও ছিল বড় ধরনের আলেম ও ইবাদতকারী। কিন্তু হযরত আদম-আ.'র প্রতি তার হিংসা ও নিজের জিন হওয়ার ব্যাপারে তার অহংকারই তাকে অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত করে। শয়তান বলেছে: আমি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে বসে থাকব যাতে মানুষ সঠিক ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। শয়তান কাফির ও বিভ্রান্ত জাতিগুলোর মধ্যে সক্রিয় নয় বলে মুসলমানদের মধ্যেই কোনো কোনো সংকট ও সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ শয়তান জানে যে এইসব কাফির ও বিভ্রান্ত জাতিগুলো তো জাহান্নামে যাবেই! তাই শয়তান ও তার দলবল তাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থেকে সময় নষ্ট না করে মুসলমানদেরকে কিভাবে জাহান্নামে নেয়া যায় সে চেষ্টা-প্রচেষ্টাতেই নিয়োজিত থাকে। -
শয়তান বলেছে, আমি মানুষকে ডান, বাম এবং সামনের ও পেছনের দিক থেকে বিভ্রান্ত করব। আসলে মানুষের সামনে-পেছনে এবং ডানে ও বামে রয়েছে নানা প্রলোভন বা অসংখ্য বিভ্রান্তির ফাঁদ। কখনও সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী বা গাড়ি-বাড়ি, অর্থ-সম্পদ, পদ ও খ্যাতির মোহ ইত্যাদি মানুষকে শয়তানের ধোঁকার শিকারে পরিণত করে। তবে শয়তান উপরের দিক থেকে বা নীচের দিক থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে বলে উল্লেখ করেনি। অনেকেই মনে করেন এর অর্থ হল মানুষ যখন দোয়ার জন্য উপরের দিকে হাত তুলবে এবং মহান আল্লাহর কাছে নতজানু হয়ে জমিনের দিকে রুকু ও সিজদা করবে তখন শয়তান আর তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। শয়তান কখনও ইসলামের বন্ধু সেজে ও ধর্মকে বিশুদ্ধতার কথা বলেও মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। হযরত আলীর যুগে খারেজিদের উত্থান ও নানা ধরনের তাকফিরি মতবাদের জন্মই এর প্রমাণ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের সব ধরনের ধোঁকা থেকে বিশেষ করে মৃত্যুর মুহূর্তে ইমানহারা করার ধোঁকা থেকে আমাদের রক্ষা করুন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।