গল্প ও প্রবাদের গল্প
গল্প ও প্রবাদের গল্প
আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি এরকম: ডিম চোর বড় হলে উট চোর হয়। এই প্রবাদের পেছনে রয়েছে চমৎকার একটি গল্প। গল্পটি এরকম: ছোট্ট একটি ছেলে। সে জানতো না চুরি কী বা কোন ধরনের কাজকে চুরি বলে। এই ছেলে ডিম দিয়ে তৈরি খাবার দাবার খুব পছন্দ করতো। একদিন তার খুব ইচ্ছে করলো ডিম ভাজা খেতে।
সে তার মাকে বললো: মা একটা ডিম ভেজে দাও, খাবো! মা বললো: পরে বানাবো। ডিম শেষ হয়ে গেছে। মুরগি ডিম দিলে বানাবো। ছোট্ট ছেলের অপেক্ষা করতে ভাল্লাগলো না সামান্য ডিম ভাজির জন্য দুদিন অপেক্ষায় থাকতে। সে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। প্রতিবেশিদের মুরগির খাঁচায় গিয়ে সে দু'তিনটে ডিম নিয়ে ফিরে এলো বাসায়। সময়টা ছিল দুপুর এবং গরমের দিন। এ কারণে প্রতিবেশিরা ঘরে ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলো, তাই ছেলেটার চুরি কারও নজরে পড়ে নি। ছেলে মায়ের হাতে ডিমগুলো বুঝিয়ে দিলো। মাকে বললো: যাও এবার আমার জন্য ডিম ভেজে দাও!
ছেলে ডিম আনার ঘটনায় মা অবাকই হলো। ছেলেকে বললো: হায় আল্লাহ! এই ডিম কোত্থেকে এনেছো বাবা?
ছেলে হেসে দিয়ে বললো: প্রতিবেশির মুরগির খাঁচা থেকে এনেছি মা!
ছেলের জবাব শুনে মায়ের তো বলা উচিত ছিল: খুব খারাপ করেছো বাবা! না জানিয়ে কারও কোনো জিনিস নেয়াকে চুরি বলে, তুমি চুরি করেছো! তাড়াতাড়ি যেখান থেকে ডিমগুলো এনেছো, সেখানে নিয়ে রেখে আসো! কিন্তু এসব না বলে মা খানিক চিন্তা করে বললো: তোকে কেউ দেখে নি তো? ছেলে বললো: না মা, কেউ দেখেনি আমাকে! মা বললো: ঠিক আছে, ডিম ভেজে দিচ্ছি। কিন্তু কাজটা ভালো করিস নি। ছেলে মনে মনে বুঝলো: প্রতিবেশিরা তার চুরি টের পাওয়া ঠিক হবে না।
কদিন পর আগের মতোই ঘরে ডিম ছিল না। ছেলে এবার পা টিপে টিপে প্রতিবেশির মুরিগির খাঁচার কাছে গেল এবং আশেপাশে সতর্কভাবে তাকিয়ে নিশ্চিত হলো তাকে কেউ দেখছে না। খাঁচার ভেতর হাত ঢুকিয়ে সে কয়েকটা ডিম নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে গেল। মায়ের হাতে যখন ডিমগুলো দিলো সে মা কোনোরকম প্রতিবাদ করলো না। শুধু জিজ্ঞেস করলো: প্রতিবেশিরা কি তোকে দেখতে পেয়েছে নাকি পায় নি? ছেলে জবাব দিলো: না মা! কেউ দেখতে পায় নি। মা দরদ মাখা কণ্ঠে ছেলেকে বললো: বাবা! যে কাজ তুমি করেছো, সেটা ভালো কাজ না। কয়েক মিনিট পর ডিম ভাজি হয়ে গেল এবং মা ছেলে মিলে মজা করে ডিম খেলো।
ছেলে ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগলো। যখন তখন সে এর ওর জিনিসপত্র চুরি করতে লাগলো। চুরির জিনিসপত্র কখনো বাসায় নিয়ে আসতো কখনো আবার একই জাতের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে মজা করতো। আরও ক'বছর পর চোর ছেলেটা তো দীর্ঘদেহি তরতাজা যুবক হয়ে উঠলো এবং চুরিতেও হাত পেকে গেল। একদিন সে এক লোকের বাড়িতে গিয়ে তার উট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো। উটের মালিক এবং তার আশেপাশের লোকজন এসে তাকে আটকে ফেললো। ছেলে তো কখনো ভাবেই নি সে কখনও ধরা পড়বে। ব্যাপক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়েও লোকজনের হাত থেকে ছুটতে পারলো না। উল্টো বরং যতো বেশি ছুটতে চেষ্টা করলো ততো বেশি মার খেলো। একসময় হতাশ হয়ে পড়লো। সবাই তাকে নিয়ে গেল কাজি মানে বিচারকের কাছে।
কাজি চোরকে ঘটনার আদ্যোপান্ত জিজ্ঞেস করলো। ব্যাপক জেরা করে কাজি নিশ্চিত হলো যে ওই ছেলে সত্যিই চুরি করেছে। সাধারণত আইন অনুসারে চুরি প্রমাণিত হলে চোরের আঙুল কেটে দেওয়ার নিয়ম। সুতরাং কাজি জল্লাদকে ডেকে চোরের হাত কেটে দিতে আদেশ দিলো। জল্লাদ হাত কাটতে উদ্যত হলে চোর চীৎকার করে উঠলো। বললো: একটু থামো! আমাকে একটু সুযোগ দাও, একটু সময় দাও! আমি একটু আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। কাজি চোরের আবেদনে সাড়া দিলো এবং চোরের মাকে ডেকে আনা হলো। চারদিকে তখন ব্যাপক উত্তেজনা কাজ করছিল। কী হয় কী হয়-এরকম একটা কৌতূহল সবার চোখে মুখে।
চোরের মাকে কাজির সামনে নিয়ে আসা হলে চোর চীৎকার করে উঠলো। বললো: যদি শাস্তি পেতেই হয় তাহলে শাস্তিটা আমার মায়ের পাওয়া উচিত। কারণ ছোটোবেলা থেকে সে আমার ছোটোখাটো চুরিগুলোতে বাধা দেয় নি। আমি ছোটোবেলায় ডিম চুরি করতাম। সে তখন বাধা না দিয়ে আজ আমাকে এতো বড় চোর বানিয়েছে। চোরের কথাবার্তা শুনে বিচারক চুপ মেরে গেল। চোরের মায়ের দিকে তাকালো কাজি। চোরের মা অকপটে ছেলের চুরির সত্যতা এবং তার দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করলো। বললো: ছেলে ঠিকই বলেছে, ভুল আমিই করেছি। বেচারা চোরের জন্য বিচারকের মনটা কেঁদে উঠলো। সে চোরকে ক্ষমা করে দিলো। তবে আদেশ দিলো চোরের মাকে যেন বন্দি করে রাখে।
এই ঘটনার পর থেকে যখনই কেউ বলতে চায়-কারও ছোট অন্যায় প্রতিহত না করলে পরিণতিতে সে বড় অন্যায় করতে উদ্বুদ্ধ হয়, তখনই মানুষ এই প্রবাদটি বলতে শুরু করলো: 'ডিম চুরি থেকেই উট চোর' হয়।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭
মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ