আসমাউল হুসনা (পর্ব-৭৪)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।
মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই এক নাম হল 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম'- ذُو الْجَلالِ وَ الْإِکْرامِ । মহান আল্লাহর এই নাম তাঁর সব জ্বালালি ও জামালি নামের অর্থ বহন করে। আমরা আগেই এ ধারাবাহিকে প্রচারিত আলোচনায় জেনেছি মহান আল্লাহর জ্বালালি নামগুলো বলতে তাঁর শক্তিমত্তা ও পরাক্রমের ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর নামগুলোকে বোঝায়, আর জামালি নামগুলো বলতে মহান আল্লাহর দয়া, প্রেম ও করুণার মত প্রশান্ত-সৌন্দর্যজ্ঞাপক নামগুলোকে বোঝায়। যেমন, মুন্তাক্বিম বা প্রতিশোধ গ্রহণকারী কিংবা আযিয বা পরাক্রান্ত হচ্ছে মহান আল্লাহর জ্বালালি নামগুলোর অন্যতম। অন্যদিকে রাহমান, রাহিম, গাফ্ফার, সাত্তার ইত্যাদি মহান আল্লাহর জামালি নামের দৃষ্টান্ত। মহান আল্লাহর জ্বালালি ও জামালি নামগুলো পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বরং একই সূত্রে গাঁথা। আল্লাহর জ্বালালি নামেও রয়েছে জামালি ভাব ও জামালি নামেও রয়েছে জ্বালালি ভাব।
মহান আল্লাহর 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' নামে রয়েছে জালাল ও ইকরাম নামক দুই শব্দ। আরবিতে জুল বলতে বোঝায় মালিক বা অধিকারী। তাই 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' অর্থ যিনি জালাল ও ইকরামের অধিকারী। জুল জালাল অর্থ সমস্ত পরিপূর্ণ গুণ, মহত্ত্ব, গৌরব, গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হওয়া। আর ইকরামের অধিকারী হওয়া মানে দয়া, অনুগ্রহ, ক্ষমা ও করুণার অধিকারী হওয়া। মহান আল্লাহ কারিম হওয়ায় তিনি চাওয়ার আগেই অনেক কিছু দান করেন ও দানের বিনিময়ে কোনো কিছুর প্রত্যাশাও করেন না। আল্লাহ কোনো কিছু দানের ওয়াদা করলে তিনি সেই ওয়াদা অবশ্যই পালন করেন। মহান আল্লাহ এতই দয়ালু যে তিনি কখনও কখনও পাপীর পাপ তো ক্ষমা করেনই এমনকি তার আন্তরিক তওবার কারণে সেইসব পাপকে পুণ্যেও পরিণত করেন। মহান আল্লাহ মানুষের প্রকৃতিগত মহতী গুণগুলোর কারণে তাদেরকে দিয়েছেন সম্মান, বুদ্ধিমত্তা, বলার, লেখার ও চিন্তা করার ক্ষমতা এবং মহান আল্লাহর দয়া, দানশীলতা, ক্ষমাশীলতা, প্রজ্ঞা ও অন্য অনেক গুণের কল্যাণ অর্জনের মত সমৃদ্ধি ও সম্মান। পবিত্র কুরআনের ১৭ নম্বর সুরা তথা সুরা আসরার ৭০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর নাম 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' দুই বার এসেছে। আর দুই বারই তা স্থান পেয়েছে এ মহাগ্রন্থের ৫৫ নম্বর সুরায় তথা সুরা আররাহমানে। এই সুরাকে বলা হয় পবিত্র কুরআনের বধু। এ সুরার প্রথম দিকে মহান আল্লাহর অনেক অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করার পর ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহামহিম ও মহানুভব পালনকর্তার তথা 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' –এর সত্তা ছাড়া। -এই সুরা শেষও হয়েছে মহান এই নাম উল্লেখের মাধ্যমে। এই সুরার শেষ বাক্যে বলা হয়েছে:
কত পূণ্যময় আপনার পালনকর্তার নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব। - এ দুই বাক্য থেকে বোঝা যায় সব কিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটবে মহান আল্লাহর পবিত্র নামের মধ্যে। এ বিশ্ব চরাচরে যা কিছু আছে তার উৎস হলেন আল্লাহই। ইহকালের উৎস আল্লাহ ও পরকালের উৎসও তিনি। আল্লাহর 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' নাম সব কিছুকে ঘিরে রেখেছে বা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সমস্ত সম্মান, শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের উৎস হলেন মহান আল্লাহ। আর তাই তিনি হলেন 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম'।
প্রকৃত পরিপূর্ণতা ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ও মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হতে হলে মানুষকে মহান আল্লাহর নামগুলোর মুখাপেক্ষী হতে হবে। মহান আল্লাহর 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' নামও এর ব্যতিক্রম নয়। মহান আল্লাহর নামের এই আলো যার মধ্যে হয় প্রতিফলিত তিনি মহান আল্লাহর প্রিয় দাস হিসেবে মুমিনদের মধ্যে হন সম্মানিত ও জনপ্রিয় আর কাফিরদের জন্য হন ভীতি সঞ্চরক। এমন ব্যক্তির কাছে আল্লাহর শত্রুরা হন নতজানু ও অসম্মানিত।
একবার এক ব্যক্তি মহানবীর (সা) সামনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় বলছিল: ইয়া 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' তথা হে মহামহিম ও মহানুভব ! মহানবী-সা তখন তাকে বললেন, আল্লাহকে এই নামে ডাকার কারণে এখন তোমার দোয়া কবুল হবে। তুমি যা খুশি তা আল্লাহর কাছে চাইতে পার।
কোনো কোনো মুসলিম মনীষী মনে করেন মহান আল্লাহর জালালী নাম মানুষের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে ভয় সৃষ্টি করে বলে 'জুল জ্বালালি ওয়াল ইকরাম' নামের মধ্যে মহান আল্লাহর দয়াবাচক নাম ইকরামও যুক্ত করা হয়েছে যাতে মানুষ আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি আল্লাহর রহমত বা দয়া সম্পর্কেও আশাবাদী হন।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।