এপ্রিল ০৩, ২০২৩ ১৯:১৮ Asia/Dhaka

খোদা-সচেতনতা অর্জন রোজার মূল লক্ষ্য। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী খোদা-সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এক ভাষণে বলেছেন:

সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত আল্লাহ সৃষ্টি-জগতের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। বান্দার আনুগত্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বলে তিনি সৃষ্টি করেননি অথবা তাদের পাপ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তিনি সৃষ্টি করেননি। কারণ কোন পাপীর পাপ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারে না বা কারো আনুগত্য তাঁর কোন উপকারে আসে না। তিনি সর্বত্র তাদের জীবনোপকরণ ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং দুনিয়াতে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কাজেই,খোদা-ভীরুগণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাদের কথা-বার্তা যথার্থ,তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ মাত্রাবদ্ধ এবং তাদের চাল-চলন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাদের জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেসবের প্রতি তাদের চোখ বন্ধ এবং যে জ্ঞান তাদের উপকারে আসে তার প্রতি তারা কান-খাড়া রাখে।

খোদা-সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে হযরত আলী (আ) আরও বলেছেন,

পরীক্ষার সময় খোদা-সচেতন ব্যক্তিরা এমনভাবে থাকে যেন তারা আরাম-আয়েশে রয়েছে। যদি প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না থাকতো তাহলে তাদের আত্মা পুরস্কারের আশায় ও শাস্তির ভয়ে এক মুহূর্তের জন্যও তাদের দেহে থাকতো না। তাদের হৃদয়ে স্রষ্টার মহত্ত্ব গেড়ে বসে আছে এবং স্রষ্টার মহত্ত্ব ছাড়া সব কিছুই তাদের দৃষ্টিতে নগণ্য। এ জন্য বেহেশত তাদের কাছে অতি নগণ্য যদিও তারা এর সুখ ভোগ করছে এবং দোযখও তাদের কাছে অতি নগণ্য ...। তাদের হৃদয় শোকাহত,তারা পাপ থেকে সংরক্ষিত,তাদের দেহ কৃশ,তাদের অভাব-অনটন নেই বললেই চলে এবং তাদের আত্মা পবিত্র। তারা অল্প সময়ের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে চিরস্থায়ী আরাম-আয়েশ অর্জন করে। এটা অত্যন্ত উপকারী লেনদেন যা আল্লাহ তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। দুনিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে,কিন্তু তারা দুনিয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপও করে না। দুনিয়া তাদেরকে ঘিরে ধরে,কিন্তু তারা নিজেদেরকে মুক্তিপণ দিয়ে দুনিয়া থেকে মুক্ত হয়ে গেছে।  

খোদা-সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে হযরত আলী (আ) আরও বলেছেন, রাত্রিকালে তারা পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে সুপরিমিত মাত্রায়  কুরআন তিলাওয়াত করে;এতে তাদের হৃদয়ে শোকের সৃষ্টি হয় এবং এতে তারা তাদের রোগের চিকিৎসা অনুসন্ধান করে। যখন তারা বেহেশত সম্বন্ধে কোন আয়াত পড়ে তখন তারা বেহেশতের জন্য আগ্রহী হয়ে পড়ে এবং তাদের আত্মা এমনভাবে তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে যেন তারা তা সম্মুখে দেখতে পায়। আবার যখন তারা দোযখের ভয় সংক্রান্ত আয়াত তেলাওয়াৎ করে তখন তারা এমনভাবে হৃদয়ের কান পেতে রাখে যেন তারা দোযখের শব্দ ও ক্রন্দন শুনতে পাচ্ছে। তারা রুকু করে,সেজদাবনত হয়ে মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে সনির্বন্ধ মিনতি জানায়। 

খোদা-সচেতন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে হযরত আলী (আ) আরও বলেছেন,

দিবাভাগে তারা সহিষ্ণু,প্রাজ্ঞ,পরহেজগার ও খোদা-ভীরু। আল্লাহর ভয় তাদেরকে তীরের মতো কৃশ করে ফেলেছে। যে কেউ তাদের দিকে তাকালে তাদেরকে মনে করবে রুগ্ন,আসলে তা নয়। কেউ কেউ মনে করবে তারা পাগল;আসলে আল্লাহর ভয় তাদেরকে ব্যাকুল করে দিয়েছে। তারা তাদের অল্প সৎ আমলে সন্তুষ্ট হয় না এবং তাদের সৎ আমলকে বৃহৎ কিছু মনে করে না। তারা সর্বদা নিজেদেরকে দোষারোপ করে এবং তাদের কাজের জন্য ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। যদি তাদের কাউকে প্রশংসা করা হয় তখন সে বলে,“আমি আমার নিজকে অন্যদের চেয়ে বেশি জানি এবং আমার প্রভু আমাকে তদপেক্ষা বেশি জানেন। হে আল্লাহ,তারা যেরূপ বলে আমার সাথে সেরূপ ব্যবহার করো না,তারা আমার সম্পর্কে যা চিন্তা করে তা অপেক্ষা আমাকে ভালো করে দাও এবং আমার যে সব দোষের কথা তারা জানে না। সে সব অপরাধ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

খোদা-সচেতন বা পরহিজগার ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে হযরত আলী (আ) আরও বলেছেন, এসব লোকের বৈশিষ্ট্য হলো-তারা দ্বীনে শক্তিশালী, কোমলতার সাথে দৃঢ়-সংকল্প, ইমানে সুদৃঢ়, জ্ঞানার্জনে আগ্রহী, ঐশ্বর্যে নমনীয়, ইবাদতে আসক্ত, উপোষে তৃপ্ত,দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যশীল,হালালের প্রত্যাশী, হেদায়েতে আনন্দিত এবং লোভ-লালসার প্রতি ঘৃণাশীল। তারা ধার্মিকতার কাজ করে,কিন্তু তবুও ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। সন্ধ্যায় তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং ভোরে আল্লাহর জিকিরের জন্য উদ্বিগ্ন থাকে। তারা ভয়ের মধ্যে রাত্রিযাপন করে পাছে আল্লাহকে ভুলে রাত্রি চলে যায় এবং ভোরে আনন্দে উত্থিত হয় কারণ আল্লাহর নেয়ামত ও রহমত লাভ করেছে। ...। চিরস্থায়ী বিষয় হলো তাদের চোখের শীতলতা। ইহকালের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয় বলে তারা তা থেকে দূরে সরে থাকে। তারা ধৈর্য সহকারে অন্যের থেকে জ্ঞান আহরণ করে এবং আমল সহকারে বক্তব্য পেশ করে। - একই বিষয়ে হযরত আলী আরও বলছিলেন,

তোমরা দেখতে পাবে,তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অতি পরিমিত,দোষ-ত্রুটি নগণ্য, হৃদয় ভয়ে কম্পিত, আত্মা তৃপ্ত, খোরাক সামান্য ও সাধারণ, দ্বীন নিরাপদ,লালসা মৃত এবং ক্রোধ প্রদমিত। তাদের কাছ থেকে শুধু মঙ্গল আর কল্যাণই আশা করা যায়। তাদের কাছ থেকে মন্দ কিছু পাবার ভয় নেই। যারা আল্লাহকে ভুলে থাকে তাদের মাঝেও তারা আল্লাহর জিকিরকারী;আবার যারা আল্লাহর জিকিরকারী তাদের মাঝে তারা আল্লাহকে ভুলে থাকে না। অবিচারকারীদের প্রতিও তারা ক্ষমাশীল এবং যারা তাদেরকে বঞ্চিত করে তাদেরকেও তাঁরা প্রদান করে। তাদের প্রতি যারা অসদাচরণ করে তাদের প্রতি তারা সদাচরণ করে।- মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব বৈশিষ্ট্য অর্জনের সুযোগ দিন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ