এপ্রিল ০৭, ২০২৩ ১৯:১৭ Asia/Dhaka

বিগত বেশ কয়েকটি আলোচনায় আমরা মহান আল্লাহর বিখ্যাত কয়েকটি নামের অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছি যাতে খোদা-সচেতনতার পথ প্রশস্ত হয়।

কারণ রোজার উদ্দেশ্যই হল খোদা-সচেতনতা সৃষ্টি করা। বিগত আলোচনাগুলোর ধারাবাহিকতায় আজ আমরা মহান আল্লাহ'র আসমাউল হুসনার আরেকটি বিখ্যাত নাম আল বায়িস নিয়ে কথা বলব। স্থির অবস্থা থেকে কোনো কিছুর গতিশীল হওয়াকে আরবিতে বলা হয় বা'-আস্‌। প্রত্যেক বস্তুকে গতিশীল করার বা সচল করার মূল শক্তি হলেন মহান আল্লাহ। আর তাই আল্লাহ'র অন্যতম নাম বায়িস অর্থ সচলকারী বা উত্থানকারী কিংবা নিয়োগকারী। পবিত্র কুরআনে  সুরা আনআমের ৬০ নম্বর আয়াতে বা'-আস শব্দটিকে ফেরত পাঠানো অর্থে ব্যবহার করে মহান আল্লাহ বলছেন: তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কিছু করো তা জানেন৷ আবার পরদিন তোমাদের সেই কর্মজগতে ফেরত পাঠান, যাতে জীবনের নির্ধারিত সময়-কাল পূর্ণ হয়৷ সবশেষে তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷ তখন তিনি জানিয়ে দেবেন তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে৷-

এখানে রাতের ঘুমকে মৃত্যু বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। ঘুমকে বলা হয় ছোট মৃত্যু। দিনের বেলায় আবার আমরা মহান আল্লাহর দয়ায় জেগে উঠি।  কিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থানকেও বা'-আস বলা হয়। নবী-রাসুলদের নিয়োগদানের ক্ষেত্রেও বা-'আস  শব্দের ব্যবহার রয়েছে। মহানবীর (সা) রেসালাত বা নবুওতি মিশন শুরুর দিনটিকেও আমরা বে-'সাত বা মাবআস উৎসব হিসেবে পালন করে থাকি। কাউকে উচ্চতর ও সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রেও এই একই শব্দের ব্যবহার দেখা যায় পবিত্র কুরআনে।

মহান আল্লাহর এই নাম আল বায়িস থেকে আমাদের মনে রাখা উচিত যে একদিন ক্বিয়ামত তথা পুনরুত্থান ঘটবে মানুষের পারলৌকিক বিচার সম্পন্ন করার জন্য। তাই মহান আল্লাহর মহতী এই নামের কথা মনে রেখে আমাদেরকে পরকালের সফর এবং এই সফরের পাথেয় সংগ্রহের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। কোনো মুশরিক তথা অংশীবাদী মানুষও যদি আমাদের কাছে একটি পয়সাও পাওনা বাকি রেখে পরলোকগমন করে তাহলে সেই এক পয়সাও মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরিদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

আমরা অনেক দিন বাঁচব ও আল্লাহর কাছে এক সময় ক্ষমা চেয়ে নেব –এই ভেবেও পাপ করা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আমরা জানি না যে কখন আমাদের মৃত্যু হবে। বয়স্ক হলে তখন কাজা নামাজ পড়ব-এমন ধারণাও পরিত্যাগ করা উচিত। কারণ আগামী কয়েক মুহূর্ত পরেই যে আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব না তার কোনো গ্যারান্টি দেয়া যায় না।

মহান আল্লাহর বায়িস নামের কথা মনে রেখে আমাদের উচিত মৃত্যুকে ও বিচার দিবসকে মনে রাখা। আর তাই গিবত ও পরনিন্দার ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক থাকা উচিত। কিয়ামতের দিন অনেক মানুষ দেখবেন যে তাদের নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাতের মত সব পুণ্য থাকা সত্ত্বেও এবং অন্য অনেক মানব-সেবা বা সমাজ-সেবার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও তাদের আমলনামায় কোনো পুণ্য নেই!! কারণ সেসবই চলে গেছে যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে।

ইসলামের ইতিহাস খুব ভালোভাবে জানা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ এর ফলে ইসলামের মহান নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের আদর্শের অনুসারী হতে পারলে মহান আল্লাহ'র সঙ্গেও আমাদের নৈকট্য বাড়বে। তাই ইসলামের ইতিহাসের আজকের বিশেষ দিন সম্পর্কে এবারে কিছু কথা বলব।

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ জয় ও মহাবীরত্বের কারণে 'আল্লাহর সিংহ' উপাধিধারী হিসেবে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর (আ) প্রথম আত্মপ্রকাশের ১৪৪০তম বার্ষিকী। দ্বিতীয় হিজরির এই দিনে মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদের সঙ্গে তাদের প্রথম সুসংগঠিত যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মদীনায় হিজরত করার পর তাঁর ওপর এ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল মক্কার কাফের কুরাইশরা।

এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। অন্যদিকে আগ্রাসী মুশরিক বাহিনীর সদস্য ছিল এক হাজারেরও বেশি। মহান আল্লাহর সহায়তায় ঐ যুদ্ধে মুজাহিদদের হাতে ৭০ জন কাফির নিহত হয়। এছাড়া  তাদের আরো ৭০ জন বন্দি হয়। অপরদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন।

মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৫ বা ৩৬ জন কাফেরকে হত্যা করেছিলেন যাদের অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফের সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা।  বহু বছর পরে মুয়াবিয়া হযরত আলী (আ.)'র খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে এক চিঠিতে আমিরুল মু'মিনিন তাকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন, “যে তরবারি দিয়ে আমি তোমার নানা (উতবা), তোমার মামা (ওয়ালিদ) ও ভাই হানজালার ওপর আঘাত হেনেছিলাম তথা তাদের হত্যা করেছিলাম সে তরবারি এখনও আমার কাছে আছে।”

শেরে খোদা বা 'আল্লাহর সিংহ' নামে খ্যাত হযরত আলী (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)'র চাচাতো ভাই, জামাতা ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শীর্ষ সদস্য। ইসলামের ইতিহাসের প্রাথমিক যুদ্ধগুলোর বেশিরভাগেরই জয়ের মূল স্থপতি ছিলেন এই মাসুম ইমাম ও খলিফা।

হযরত আলী (আ) ও বিশ্বনবী (সা.)'র স্ত্রী উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিজা (সালামুল্লাহি আলাইহা) প্রায় একই সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী হিসেবে ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম মুসলমান। আলী (আ.)'র বয়স ছিল সে সময় মাত্র দশ বছর।

বলা হয়ে থাকে বিশ্বনবী (সা.)'র চারিত্রিক সুষমা ও মহানুভবতা, আলী (আ.)'র তরবারি এবং ইসলামের পথে খাদিজা (সা.আ.)'র অঢেল সম্পদ দান ছাড়া ইসলাম কখনও এতটা বিকশিত হতে পারত না।

বদর যুদ্ধ ইসলামের স্মরণীয় যুদ্ধগুলোর অন্যতম। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিরা মুসলমানদের কাছে পরবর্তীকালে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছিলেন। এ যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে রেডিও তেহরানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের পটভূমি ও বিস্তারিত বর্ণনা-(১) এবং (২) শীর্ষক প্রবন্ধ পড়া যেতে পারে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ