এপ্রিল ১১, ২০২৩ ২০:৪৭ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি সবাই ভালো আছেন ও সুস্থ আছেন। সুস্থ থাকা জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তো কথা না বাড়িয়ে আমরা স্নায়ুরোগ বা নার্ভের রোগ নিয়ে ৪র্থ পর্বের আলোচনায় যাব। আর আমাদের সঙ্গে যথারীতি আছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ দিদার ইমাম। তিনি মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডা.শাহ দিদার ইমাম-আপনি আগের আলোচনায় বলেছেন-স্নায়ুরোগ কখন ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং এতে মৃত্যুও হতে পারে। তাই স্নায়ুরোগ নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না। তো চতুর্থ পর্বের আলোচনার শুরুতে জানতে চাইব, বয়সভেদে স্নায়ুরোগের তারতম্য বা পার্থক্য আছে কি? তাছাড়া আপনি স্নায়ুরোগের প্রকৃতিও নিয়েও যদি একটু বলেন?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: জ্বি বয়সভেদে স্নায়ুরোগের পার্থক্য আছে। আমি এর আগে বলেছি জেনেটিক কারণে, রক্তনালীতে ইনফেকশনের কারণে, টিউমারের জন্যও স্নায়ূরোগ হয়। এছাড়াও ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির কারণেও স্নায়ুরোগ হতে পারে। বয়সভেদে এই রোগের পার্থক্যের কথা বলছিলাম। যেমন পারকিনসন্স রোগ যেটি সেটি বয়স্কদের হয়ে থাকে। এটি রোগীকে হাঁটা চলা করার সময় সমস্যা সৃষ্টি করে।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক শাহ দিদার ইমাম, আপনাকে একটু থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইছি-আপনি পারকিনসন্স রোগের কথা বলছিলেন-হঠাৎ দেখা গেল কেউ লিখছেন তার হাত কাঁপছে অথবা এমনি এমনি মাথা ঝাকাচ্ছেন-এটা কি?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় আঙ্গুলে ক্যামর হয়। ফলে আঙ্গুলে কলম ধরতে অসুবিধা হতে পারে। এটি স্নায়ুরোগের একটি লক্ষণ। তাছাড়া হাঁটা চলাটা সীমিত হযে যায়। খুব সহজে চলাচল করতে পারে না। মুভমেন্টটা স্লো হয়ে যায়। এছাড়া ঘুমের সমস্যা হতে পারে। পায়খানার সমস্যা হতে পারে। পারকিনসন্স'র কতগুলো স্টেজ আছে। একটি পর্ব এমন থাকে তার দৈনন্দিন কাজ কর্মে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। সাহায্য ছাড়া পারকিনসন্স রোগী চলাফেরা করতে পারে না। এটি একসময় শরীরকে বিকলাঙ্গ করে দেয়। এই রোগটি সাধারণ বয়স্কদের হয়ে থাকে। বাচ্চাদের সাধারণত হয় না।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.শাহ দিদার ইমামের আলোচনা শুনছেন। আমাদের সঙ্গেই থাকুন। ফিরছি শিগগিরি।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। ডা. শাহ দিদার ইমাম, আপনি বয়সভেদে কিংবা নারী পুরুষভেদে স্নায়ুরোগ হওয়ার বিষয়টি আলোচনা করছিলেন-আপনাকে থামিয়ে দিয়েছিলাম। আপনি ঐ বিষয়টির আলোচনা শেষ করুন।

ডা. শাহ দিদার ইমাম:  আমি বলছিলাম বয়সভেদে স্নায়ুরোগের তারতম্য আছে। বড়দের পারকিনসন্স হয়-সাধারণত বাচ্চাদের হয় না। আবার ইপিলেপ্সি আবার বড়দের কম হয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। আবার পুরুষ মহিলাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু তারতম্য দেখা যায়। যেমন ধরুন মাইগ্রেন হেডেক। এই মাইগ্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের দেখা যায়। এর সংখ্যাটা এমন একজন পুরুষের যদি মাইগ্রেন হয় সেক্ষেত্রে ৬ জন মহিলার মাইগ্রেন হয়ে থাকে। ফলে রোগ ভেদে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলাদের তারতম্য দেখা যায়।

রেডিও তেহরান: ডা. শাহ দিদার ইমাম, সাধারণত স্নায়ুরোগের কি ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে এসে থাকেন?

ডা. শাহ দিদার ইমাম: প্রধানত আমাদের কাছে রোগীরা মাথা ব্যথা নিয়ে আসেন। তাছাড়া ব্যাক পেইন, হঠাৎ করে খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া, হাত পা দুর্বল হয়ে যাওয়া, চলাফেরা করতে অসুবিধা হওয়া। হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ করে কাত হয়ে পড়ে যাচেছ এমন রোগীও আসেন।

তাছাড়া দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে কোনো রোগীর অস্বাভাবিক মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে হাত কাঁপছে কিংবা মাথা কাঁপছে। এসবই স্নায়ুরোগের লক্ষণ হতে পারে। কখনও কখনও দেখা যায় স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে। আগের মতো মনে রাখতে পারছে  না। আসলে স্নায়ুরোগের লক্ষণের অভাব নেই। অনেক লক্ষণ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রোগী পাই মাথা ব্যথা, ব্যাকপেইন, মুভমেন্টের সমস্যা ইত্যাদি। তাছাড়া হাত পায়ে ব্যথা, প্রস্রাব পায়খানার সমস্যা, কাঁধে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা। স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া ইত্যাদি। তবে খুব দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে আমাদের দেশের অনেক এমবিবিএস ডাক্তাররাই স্নায়ুরোগ সম্পর্কে সচেতন না। একজন স্নায়ুরোগে আক্রান্ত রোগীকে কীভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে তা বোঝেন  না।

রেডিও তেহরান:  জনাব ডা. শাহ দিদার ইমাম আপনি বলছিলেন, স্নায়ুরোগের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ে অনেক সময় একজন এমবিএস ডাক্তারও সচেতন না। তো এ বিষয়টিসহ স্নায়ুরোগের আরও অন্য বিষয় নিয়ে আগামী সপ্তায় কথা বলব।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১১

ট্যাগ