মৃত্যুর চেয়ে বড় শিক্ষক বা উপদেশ আর নেই
রমজান: খোদাপ্রেমের অনন্য উৎসব (পর্ব-২২)
আজকের দিনটি ছিল পবিত্র রমজানের একুশ তারিখ। সন্ধ্যার পরই শুরু হয়েছে ২২ রমজান।
এই রাতকেও ক্বদরের অন্যতম রাত্রি মনে করেন অনেকে। বলা হয় এই রাতে এক বছরের ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত করা হয়। তাই এ রাতের ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়াকেও সবার গুরুত্ব দেয়া উচিত।
অনেকে মনে করেন রমজানের শেষ বেজোড় রাতগুলোর প্রত্যেক রাতই শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর হতে পারে। আবার অনেকেই ২৬ রমজানের দিন শেষ হওয়ার পর শুরু হওয়া রাতটি তথা সূর্যাস্তের পর থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত সময়কে শবে ক্বদর বলে মনে করেন। অর্থাৎ ২৭ তম রমজানেও শবে ক্বদর হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
রমজানের শ্রেষ্ঠ কাজ তথা পাপ-বর্জনের নানা উপায় নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম গত কয়েক পর্বে। তওবা করা ও তওবার সুযোগ নেয়ার কথাও বলেছিলাম এ প্রসঙ্গে। বলা হয় মৃত্যুর ফেরেশতা দেখতে পাওয়ার পর মৃত্যু অত্যাসন্ন জেনে তওবা করলে তওবা কবুল হয় না। কেবল বৃদ্ধ বয়সে নানা বিচ্যুতি ও পাপের জন্য তওবা করব-এমন ভাবনাও ঠিক নয়। কারণ কখন কার মৃত্যু ঘটে তা কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না।
যে পরিবেশে থাকলে কোনো মুসলমান বা মুমিন ধার্মিকতা বজায় রাখতে পারেন না সেই পরিবেশ থেকে দূরে থাকাও পাপ বর্জনের এক বড় কৌশল। মানুষ অনেক সময় এমন সব বন্ধুর পাল্লায় পড়ে যারা ধর্মকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, বরং ধর্মকে পরিহাস করতে অভ্যস্ত। এই শ্রেণীর মানুষ থেকে কেবল পাপ বর্জনের স্বার্থেই যে দূরে থাকা উচিত কেবল তা নয়, ঈমান ঠিক রাখার জন্যও তা জরুরি। কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
কেউ যদি মনে করেন যে বিয়ে না করলে তিনি চারিত্রিক পবিত্রতা বজায় রাখতে পারবেন না তাহলে তার জন্য বিয়ে করা ফরজ। যুব বয়সে বা মধ্য-বয়সেও বেগানা যুবতী বা মধ্য-বয়সী বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জনে সময় কাটানোও ব্যভিচারের পথ খুলে দিতে পারে বলে তা এড়িয়ে চলতে বলে ইসলাম।
ব্যভিচার থেকে বাঁচার অন্যতম পন্থা হল চোখ বা দৃষ্টিকে নিষিদ্ধ দৃশ্য দেখা থেকে বিরত রাখা। পবিত্র কুরআনে মুমিন নর-নারীকে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে। যারা দৃষ্টিকে সংযত করে না ও পরপুরুষ বা পরনারীর দিকে তাকিয়ে আনন্দ উপভোগ করে তারা আসলে চোখের ও মনের ব্যভিচারে লিপ্ত। আর এরই পরিণতিতে সংসার ভেঙ্গে যায় ও পরকীয়ার মত দুর্যোগ দেখা দেয়। চারিত্রিক পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য জনসম্মুখে বা প্রকাশ্য স্থানে নারী ও পুরুষের যেমন শালীন পোশাক পরা উচিত তেমনি চোখ ও মনেরও হিজাব বজায় রাখা উচিত।
চল্লিশ বছর ধরে মসজিদে আযান দেয়ার অভিজ্ঞতাধারী এক মুয়াজ্জিন উঁচু মিনার থেকে একবার আযান দিতে গিয়ে কিছুটা দূরের এক ঘরের আঙ্গিনায় এক বিধর্মী যুবতীকে গোসলরত অবস্থায় দেখে অসংযমী হয়ে পড়েন। এরপর সেই মুয়াজ্জিন ওই যুবতীর বাবার কাছে গিয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেয়ের বাবা শর্ত দেন যে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হবে! মুয়াজ্জিন এতই অসংযমী হন যে ওই প্রস্তাবে রাজি হন। এরপর উঁচুতে থাকা যুবতির ঘরের দিকে যেতে গিয়ে সিঁ ড়ি বেয়ে ওঠার সময় সিঁড়ির শেষ ধাপ থেকে হঠাৎ পা পিছলে নীচে পড়ে মারা যান। এভাবে অসংযত দৃষ্টির কারণে একজন পুরনো মুয়াজ্জিন বেইমান হয়ে মারা গেলেন!
মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোকে স্মরণ করা ও মৃত্যুকে স্মরণ করাও মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে। মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলো ভোগ করা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার মত বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে?
কেউ যদি উপদেশ নিতে চায় তাহলে মৃত্যুর চেয়ে বড় শিক্ষক বা উপদেশ আর নেই। তাই মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। বলা হয় মহানবী (সা) বলেছেন, এক ঘণ্টা চিন্তাভাবনা করা সারা রাত জেগে ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। -কিন্তু কোন ধরনের চিন্তা? ইমাম জাফর আস সাদিক এ প্রসঙ্গে বলেন, চিন্তা-ভাবনা হতে হবে এমন যে যখন কোনো পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ বাড়িঘর বা বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে যাবে তখন প্রশ্ন করবে মনে মনে : যারা এ বাড়িতে বসবাস করত তারা আজ কোথায়? যারা এ ঘর নির্মাণ করেছিল তারা আজ কোথায়? তারা কেন এখন কথা বলছে না?
কিয়ামতের কথাও স্মরণ করা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। কিয়ামতও মৃত্যুর মতই অনিবার্য। সেদিনের কঠিন হিসেব-নিকেশ ও পুলসিরাতের কথা মনে রেখে মানুষের উচিত পাপ বর্জন করা। তবে কিয়ামত ও মৃত্যুর ভাবনা ভেবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইহকালে যদি সৎভাবে জীবন যাপন করা যায় ও পাপ বর্জন করে ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করা যায় তাহলে পরকালে তার পুরস্কার হবে জান্নাত। তাই কিয়ামত ও মৃত্যুর কথা ভেবে বরং সব বিপদ-আপদেও বাড়তি প্রেরণা, ধৈর্য এবং আশা সঞ্চয় করতে হবে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।