এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ২৩:২৮ Asia/Dhaka

মানবীয় মর্যাদার দিক থেকে ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি। মহানবী (সা) নারীকে সুগন্ধি ফুল বা লতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি স্ত্রী বা  নারীকে কর্মচারী বা প্রধান কর্মী তথা কাহরিমান (আরবি অর্থে!) (ফার্সি কাহরিমান অর্থ পাহলোয়ান) হিসেবে ভাবতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত!

ইসলামের দৃষ্টিতে যে নারী ও পুরুষ যত বেশি খোদাভীরু তারা আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয়। আয়-উপার্জন, বাণিজ্য, রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই।

-ইসলাম নারী বা স্ত্রীর জন্য সন্তান প্রতিপালন ও সংসারের দেখাশুনাকে প্রধান কাজ বলে মনে করে। কিন্তু নারীর সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্বকে অস্বীকার করে না ইসলাম। বরং কখনও এমনও হতে পারে যে নারীর জন্য সংসার ও পরিবারের চেয়েও সামাজিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আমরা দেখি হযরত যাইনাব (সা) কারবালায় উপস্থিত ছিলেন এবং ইসলামকে রক্ষার জন্য সন্তানদের কুরবানি করেছেন ও এমনকি কারবালার সত্যিকারের ইতিহাস আর বাণীগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রচারকের কাজও করেছেন। 

হযরত ফাতিমাও ইমামতের মিশন তুলে ধরতে জনসংযোগ বা প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। ইসলাম প্রচারের মিশনে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন হযরত আসিয়া, হযরত মারিয়াম ও হযরত খাদিজা (সা. আ)।  

সমাজে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে মহানবী (সা) নারীদের আনুগত্যের বাইয়াত নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সুরা মুমতাহিনার ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। -নারীর কাছ থেকে আনুগত্যের শপথ নিতে মহানবীর (সা) প্রতি আল্লাহর নির্দেশের অর্থ হল নারীরা সমাজ বা জাতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ বা খুঁটি। তাই সমাজের সুরক্ষায় তাদেরও অংশগ্রহণ জরুরি। 

ইসলাম-পূর্ব জাহিলি যুগে নারীর বাইয়াত বা আনুগত্যের প্রচলন ছিল না। ইসলামই এই প্রথার প্রচলন করেছে। মহানবী (সা) মক্কা বিজয়ের দিন সাফা পর্বতের কাছে পুরুষদের কাছ থেকে আনুগত্যের বাইয়াত নেন। এরপর নারীরাও মহানবীর কাছে বাইয়াত করতে আসলে সুরা মুমতাহিনার ১২ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়। নারীরা কিভাবে বা কি মর্মে বাইয়াত করবে তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এই আয়াতে। এই বাইয়াতের ধারাগুলো নারীর আনুগত্য নামে খ্যাত হয়েছে ইতিহাসে। মহানবী (সা) একটি পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে আনুগত্যের দিক বা শর্তগুলো উল্লেখ করেন। এরপর নারীরা ওই পাত্রের পানিতে হাত রেখে ওই শর্তগুলো মেনে নেয়ার অঙ্গীকার করেন। 

সভা-সেমিনারে যোগ দিয়ে বিপ্লবী মুসলিম নারীরা সামাজিক দায়িত্ব পালনে সক্রির্য় ভূমিকা রাখছেন 

 

পবিত্র কুরআনে যখনই মানবজাতিকে উদ্দেশ করে কোনো কথা বলা হয়েছে তখনই 'হে মানুষ বা মানব !' বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আর এ থেকেই বোঝা যায় মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের মর্যাদা সমান।  পবিত্র কুরআনে সুরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

'হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহিযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।'

পবিত্র কুরআন মানুষকে আল্লাহর খলিফা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নারী বা নরকে আলাদাভাবে খলিফা বলে উল্লেখ করা হয়নি। যেমন,  সুরা আহযাবের ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত তথা খোদায়ি নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও অঙ্গীকার সংক্রান্ত আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয়ই সে এ আমানতের গুরুত্ব ও এর খিয়ানতের পরিণতির বিষয়ে জালেম ও অজ্ঞ।  

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ উভয়ই সঠিক পথ গ্রহণ বা বিচ্যুতির পথ বেছে নেয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। পুরুষ ও নারীর মধ্যে এ বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই বা কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। পুরুষরা ভালো কাজ করলে তারা যেমন প্রতিদান পাবে তেমনি নারীরাও ভালো কাজ করলে সমান প্রতিদান পাবে। পাপের  শাস্তির বিষয়টিও একই ধরনের। 

পবিত্র কুরআনে নারী ও পুরুষ উভয়কেই তথা মানুষকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে: আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তা-ই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তা-ই তার উপর বর্তায় যা সে করে। (সুরা বাকারার শেষ আয়াত তথা ২৮৬ নম্বর আয়াতের অংশ) সুরা আলে ইমরানের ১৯৫ নম্বর আয়াতাংশে মহান আল্লাহ বলেছেন: অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া এই বলে কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। আমার কাছে তোমরা পরস্পর এক বা সমান।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

   


 

ট্যাগ