এপ্রিল ১৫, ২০২৩ ১৫:২৩ Asia/Dhaka

রমজান মাস হচ্ছে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ও অধ্যয়নের শ্রেষ্ঠ সময়। পাপ-বর্জনের জন্য ও সঠিক পথের দিশা তথা হেদায়াত পাওয়ার জন্য পবিত্র কুরআন গভীর চিন্তা-ভাবনাসহ অধ্যয়ন করা জরুরি।

একজন মুমিন বান্দাহর প্রতিদিন কুরআনের অন্তত ৫০ আয়াত অর্থসহ তিলাওয়াত করা উচিত। পবিত্র কুরআন কেবল মুসলমানের জন্য সঠিক পথ দেখানোর বই তা নয়।  এ আসমানি মহাগ্রন্থে গোটা মানব জাতির জন্য সুপথ দেখানো হয়েছে। পবিত্র কুরআন সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী।  কিন্তু কোনো মানুষ সত্য ও সঠিক পথকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে কিনা তা নির্ভর করে সত্যের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ও সৎ-সাহসের ওপর।

রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে মানুষের আত্মা আধ্যাত্মিক দিক থেকে সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য বেশি প্রস্তুত থাকে। ঈমানকে মজবুত করার জন্য কুরআন অধ্যয়ন যত বেশি করা যায় ততই ভালো।

রমজান ও পবিত্র কুরআন মানুষকে ধৈর্যশীল হওয়ার আহ্বান জানায়। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন। খোদা-সচেতনতা অর্জনের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হল ধৈর্য। মুমিন ও খোদাসচেতনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তারা একে অপরকে সত্যের ও ধৈর্যের দাওয়াত দেয়। পাপের আকর্ষণ প্রতিরোধ করা হল ধৈর্যের অন্যতম প্রধান দিক।

অপ্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্র কেনা ও ঘরবাড়িকে বিচিত্র ধরনের শো-পিস দিয়ে সাজিয়ে রাখাটাও ধৈর্যের খেলাপ এবং অপচয়। বিচিত্র ধরনের ইফতারি বানিয়ে রসনা-বিলাস করায় অপচয় ও তা বর্জনীয়।  পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।  -মহান আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলতে এবং ইবাদত করতে, হালাল-হারাম মেনে চলতে ও পাপ বর্জন করতে অনেক সময় কষ্ট লাগে বা মন সায় দেয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধৈর্য ধরে কষ্ট সহ্য করে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে ও পাপ বর্জন করতে হবে নিজের কল্যাণের জন্যই। ধৈর্যের অনুশীলন রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য।  বিপদে আপদে দিশাহারা না হয়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বিপদ আপদ মোকাবেলা করাটাও হচ্ছে ধৈর্যের অন্যতম প্রধান দিক।  

সন্তানের মৃত্যু বাবা-মায়ের জন্য খুবই কষ্টকর ও অসহনীয়। তবুও এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণকারীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। কেউ কেউ এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দেন যে, মহান আল্লাহ নিজের জিনিস নিজেই নিয়ে গেছেন। কারো গচ্ছিত আমানত কেউ ফেরত চাইলে আমরা কি তা ফেরত দিতে বাধ্য নই? স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে ও স্ত্রী যদি স্বামীর সঙ্গে কখনও দুর্ব্যবহার করে তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা সহ্য করার মধ্যে রয়েছে অনেক পুরস্কার। ঝগড়া-বিবাদ এড়ানোর জন্য অনেক সময় নীরব থাকা বা অন্য পক্ষের ভুল বক্তব্যকেও নীরবে মেনে নেয়ার মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষার মত কল্যাণসহ অনেক কল্যাণ।

একবার এক রাজা তার এক বিজ্ঞ মন্ত্রীর ওপর রাগ করে তাঁকে কারাগারে পাঠালেন। কয়েক দিন পর রাজা তাঁর অবস্থা জানতে একজনকে পাঠালেন ওই মন্ত্রীর কাছে। ওই ব্যক্তি দেখলেন যে মন্ত্রী অন্য বন্দিদের অবস্থার বিপরীতে খুবই প্রফুল্ল এবং স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন! এর কারণ জানতে চাইলে বন্দি মন্ত্রী জানান: সবই তো আল্লাহর রাজ্য! এখানে বিনা পরিশ্রমে রিজিকও পাচ্ছি! আরও বড় বিষয় হল এখানে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার শিক্ষা নিচ্ছি! এ বিশ্বাসও জোরদার হল যে ভাগ্যে যা আছে তা-ই ঘটবে! বিপদের সময় ধৈর্য ধরা যে সবচেয়ে ভালো বিষয় তাও এখানে চর্চার সুযোগ এসেছে! তা ছাড়া ধৈর্য না ধরে আর কি-ই বা করতে পারি? অস্থির বা পেরেশান হলে কি তাতে বিপদ কমবে? এটাও ভাবছি যে আমার তো এর চেয়েও বড় ধরনের বিপদ হতে পারত! আর ওই বড় বিপদের চেয়ে তো অন্তত ভালো অবস্থায় আছি! সর্বোপরি এক পিলার থেকে অন্য পিলারের কাছে আসতেই মুক্তি লাভ সম্ভব হতে পারে ও যে কোনো সময় এই অবস্থার অবসান ঘটতে পারে!-রাজার দূত যখন রাজার কাছে মন্ত্রীর এইসব কথা তুলে ধরলেন তখন খুশি হয়ে তিনি মন্ত্রীকে আবারও সসম্মানে আগের পদে নিয়োগ দিলেন।

ধৈর্যের প্রধান শত্রু হল শয়তান ও আলস্যপনা। শয়তান এই আলস্যপনা বা আলসেয়েমি উসকে দিতে কখনও কখনও এমন কুমন্ত্রণা দেয় যে - কয়েক যুগ ধরেই তো নামাজ পড়লে ও রোজা রাখলে! আর কতকাল কষ্ট করবে! এবার এসব বাদ দিয়ে কিছুকাল বিশ্রাম নাও!  -এভাবে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।

কথায় বলে সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিয়ে মহান আল্লাহ সুরা যুমারের দশ নম্বর আয়তে বলছেন:  হে নবী আপনি বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা ভয় কর তোমাদের পালনকর্তাকে। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী, তারাই পুরস্কার পায় অগণিত। -এর আগের আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:  যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের ব্যাপারে সতর্ক ও  শঙ্কিত  এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।-  আসলে ধৈর্য ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। ধৈর্যহীন মানুষ মুমিনই হতে পারেন না। এবারে শোনা যাক অর্থসহ ২৫ তম রোজার দোয়া।

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ